২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাসায় গিয়ে যতœ সহকারে পড়ানো হয়

-

বিভীষিকাময় সময় পার করছে বদরুল। দিন দিন পকেটের অবস্থা কাহিল হচ্ছে। বাড়ি থেকে বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পড়াশোনার খরচের অতিরিক্ত এক টাকাও দেবেন না। বাবাকে অনেক কষ্ট করেও বাড়তি টাকার ব্যবস্থা করা যায়নি। ছোটবেলা থেকেই তার পকেট কাটার অভ্যাস আছে। এখনো বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বাবার পকেটে হালকা উঁকিঝুঁকি দেয় বদরুল। তবে বিশ-ত্রিশ টাকার বেশি কোনো দিন ছিল বলে মনে হয় না। বদরুলের বাবা বেশ সেয়ানা টাইপের লোক। সে বদরুলকে হাড়ে হাড়ে চেনে। টুকটাক পকেটে হাত দেয়ার কথা তিনি জানেন। তাই তিনি পকেটে তেমন টাকা রাখেন না।
বদরুলের চোখে তার বাবা এক কৃপণ মানুষ। বহু কষ্টে একটা প্রেমিকা জুটল বদরুলের কপালে। যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে এতে প্রেমিকা বেশিদিন টিকবে না। তার সাথে ডেটিং তো দূরের কথা একটা কল দেয়ারও টাকা নাই বদরুলের কাছে। এভাবে বাঁচা যায় না। এ অবস্থা থেকে অবশ্যই মুক্তি পেতে হবে। টিউশনি করলে কেমন হয়?
বদরুল নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে। টিউশনি করলে বাড়তি আয়ের টাকা দিয়ে দিব্যি ডেটিং মারা যাবে। মেসের বড় ভাইদের বলে রাখলো বদরুল। অন্ততপক্ষে ছোটখাটো টিউশনি এলেও যেন তাকে দেয়। সবাই তাকে আশ্বাস দিলো খুব দ্রুত টিউশনির ব্যবস্থা করে দেবে। মেসে একেকজন তিনটা করে টিউশনি করলেও তাদের আরো দুই-একটার অভাব থেকেই যায়। তারা যে অন্য কাউকে টিউশনি দেবে এরকম চিন্তা কখনোই করতে পারে না। বদরুলের হতাশা বাড়তে লাগল। সে নিজেই এবার টিউশনি বের করার উদ্যোগ নিলো।
কম্পিউটারে এক্সপার্ট বদরুল। এ যুগে যারা কম্পিউটারে টাইপিং করতে জানে তাদেরই এক্সপার্ট বলা হয়। কম্পিউটারের ওপর বদরুলের শর্ট কোর্স আছে। কিবোর্ড দেখে দেখে টাইপিং করতে পারে বদরুল। ‘বাসায় গিয়ে যতœ সহকারে পড়ানো হয়’ এ শিরোনামে একটি লিফলেট বানানো হলো। নিচে বদরুলের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। লিফলেট হাতে নিয়ে রাতে শহরের এ কোনা থেকে ও কোনায় সেঁটে দেয়া হলো। দেয়ালে দেয়ালে বদরুলের টিউশনির লিফলেট। বদরুল খুশিতে গদগদ। সে ভেবে পায় না সে কয়টা টিউশনি করতে পারবে। যেভাবে লিফলেট লাগানো হলো তাতে ফোন আসতে শুরু হলে রিসিভ করার সুযোগও পাবে না। সে মনস্থির করল যত টিউশনিই আসুক তিন-চারটার বেশি করবে না। বাকিগুলো বন্ধু বান্ধবকে দিয়ে দেবে। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে কিছু কমিশন নেবে।
বদরুল শুধু ফোনের অপেক্ষায় আছে। কখন ফোন আসবে, কখন কেউ বলবে আমার ছেলেটাকে আপনার কাছে পড়াতে চাই। টাকা-পয়সা নিয়ে বদরুল কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না। মোটামুটি সম্মানজনক হলেই সে পড়াতে শুরু করবে। এবার টাকা-পয়সা জমলে নতুন একটা ফোন কিনবে। গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ডেটিংয়ে যেতেও কোনো সমস্যা হবে না। বাবার কাছে ভিক্ষুকের মতো আর টাকা চাইতেও হবে না।
এক সপ্তাহ চলে গেল বদরুলের কোনো কল এলো না। মন খারাপ করে বসে আছে সে। এটা কোনো কথা হলো? অন্তত দুই-চারটা কল হলেও আসতে পারত। টিউশনি না হয় নাই হতো, তাও কেউ যদি একটু ফোন করে কথা বলতো তাহলে ভালো লাগত।
আরো কয়েক দিন পর বদরুলের কাছে একটা ফোন আসে।
Ñ হ্যালো, বদরুল স্যার বলছেন।
Ñ জি। কে বলছেন?
Ñ আপনার নম্বরটা একটা লিফলেটে পেলাম।
Ñ আচ্ছা, আচ্ছা।
Ñ একটু টিউশনির ব্যাপারে কথা বলতে চাই।
Ñ হ্যাঁ, বলেন।
Ñ না মানে, আমার একটা ভাগিনা আছেতো তাই।
Ñ কোনো সমস্যা নাই পড়ানো যাবে।
Ñ আরে না না, পড়ানোর জন্য না।
Ñ তাহলে কী?
Ñ না মানে আপনাদের কাছে অনেক টিউশনি থাকেতো তাকে একটা যদি টিউশনি দিতেন।
বদরুল এ কথা শুনে রাগে ক্ষোভে কল কেটে দিলো। নিজের টিউশনির খবর নাই আরেকজন আসছে টিউশনির খবর নিতে। বদরুল বুঝতে পারছে না তার সাথে এরকম ঘটনা কেন ঘটছে?
গোমরা মুখে শুয়ে আছে বদরুল। আজ ক’দিন হলো তার খাওয়া দাওয়াও অনিয়মিত হয়ে গেছে। এ দিকে প্রেমিকার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ। প্রেমিকা কল দিলে রিসিভও করছে না। হঠাৎ করে বদরুলের ফোন বেজে উঠল। অপরিচিত নম্বর। নিশ্চয় টিউশনির ব্যাপারে। যা মনে করেছে তাই হলো। একজন অপরিচিত নারী ফোন দিলো।
Ñ আপনি কি বদরুল?
Ñ হুম, আমিই বদরুল।
Ñ লিফলেটে আপনার নম্বর পেলাম।
Ñ আচ্ছা, কী বলতে চান বলুন।
Ñ আমার একটা ছোট ভাই আছে তাকে পড়ানোর ব্যাপারে কথা বলতে চাই।
Ñ কোনো সমস্যা নাই, বলুন।
Ñ আচ্ছা বাসায় গিয়ে কিভাবে যতœ সহকারে পড়ান?
Ñ যতœ বলতে স্টুডেন্টকে আমরা নিজের ভাই বা সন্তানের মতো আদর সহকারে এমনকি নিজের পরিবারের লোক মনে করে পড়াই।
Ñ আচ্ছা আচ্ছা, ভালতো। একটা কথা বলি?
Ñ হ্যাঁ, বলেন।
Ñ আমার ভাইয়ের সাথে মাঝেমাঝে আমিও আপনার কাছে পড়ব। না মানে আমাকে পড়াতে হবে না একটু দেখিয়ে দিলেই হবে।
Ñ কোনো সমস্যা নাই পড়তে পারবেন।
Ñ তার জন্য কি আলাদা পেমেন্ট করতে হবে?
Ñ কী যে বলেন! আপনার কণ্ঠ শুনেই আমি দিওয়ানা হয়ে গেছি। আপনি বিনে পয়সায় পড়বেন।
Ñ ও তাই? এসব চলে?
Ñ মানে কী?
Ñ শোন বদরুল, আমি তোর প্রেমিকা মলি। তুই আমার কল ধরোস না কেন? তাই তোকে টেস্ট করতে অন্য নম্বর থেকে কল দিলাম। তোর চরিত্র খারাপ। তোর সাথে আজ থেকে ব্রেকআপ।
Ñ মলি, মলি...
মলি কল কেটে দেয়। বদরুল টিউশনির জন্য জীবনের সব হারালো। তার পরও সে হাল ছাড়েনি। সে টিউশনি করবেই। সে টিউশনির কলের অপেক্ষায় আছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

সকল