প্রেমেতে মজিল জগলু
- রবিউল ফিরোজ
- ১১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
বলা নেই কওয়া নেই হুট করে প্রেমে পড়ে গেল জগলু। প্রেমে পড়ার জন্যে ওর যেতে হয়নি কোনো নির্জন পার্কে অথবা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। বলা যায় চলতে চলতে প্রেম, বলতে বলতে প্রেম। ট্রেনের নিয়মিত প্যাসেঞ্জার জগলু। সেদিন সে আন্তঃনগর ট্রেনে যাচ্ছিল রাজশাহীতে। ওর বিপরীত সিটে এসে বসলো একটি মেয়ে। বোরকায় ঢাকা মুখ। দুই চোখ আর দুই হাত দেখা যাচ্ছে। তাতেই বোঝা গেল মেয়েটা খুব সুন্দর। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী যায় রাজশাহীতে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে। এই মেয়েটাও সম্ভবত সে কারণেই যাচ্ছে। জগলু শশব্যস্ত হয়ে মেয়েটিকে বসার ব্যবস্থা করে দেয়। মেয়েটি একটা বই বের করে পড়তে আরম্ভ করে। এই সুযোগে জগলু ভালো করে নিরীক্ষণ করে। নিরীক্ষণ করতে গিয়েই তলেতলে কুপোকাত হয়ে যায় জগলু। ট্রেনের ভেতর একটু ফাঁকা হতেই জগলুর কথা বলার নেশা চাপে। বুকভরে দম নিয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে, তোমার নাম কী ও?
মেয়েটি জগলুর দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায় তারপর উত্তর দেয়, আইরিন।
বাতাসের শব্দে কথাটা ভালো বুঝতে পারে না জগলু। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার বলে, কী নাম?
মেয়েটি আবার উত্তর দেয়। গল্প জমাতে চেষ্টা করে। চট করে ঠিকানা জিজ্ঞেস করা যাবে না। বেশি বেশি প্রশ্ন করলে মেয়েটা সন্দেহ করবে। সেজন্যে কথার ফাঁকে ফাঁকে একটা করে প্রশ্ন করে। দ্বিতীয় প্রশ্ন করে তা তোমার বাড়ি কই?
মেয়েটি উত্তর দেয় আমার বাড়ি বাঁকা। উত্তর শুনে জগলু চিন্তায় পড়ে যায়। বাঁকা নামে কোনো গ্রাম বা শহর বাংলাদেশে আছে কি না ওর জানা নেই। এমনো হতে পারে মেয়েটা মিথ্যা কথা বলছে। তবু সে বাঁকা নামে একটি সুন্দর ছায়াঢাকা গ্রামকে কল্পনা করে। তারপর শুরু করে গ্রামের প্রশংসা। গ্রাম কত সুন্দর, গ্রামের মানুষ কত সহজ-সরল ভালো মানুষ, গ্রামে জিনিসপত্র কত সহজলভ্য ইত্যাদি।
মেয়েটা ধীরে ধীরে সহজ হয়ে আসে। পাল্টাপাল্টি কথা চালাচালিতে গল্পটা বেশ জমে ওঠে? হকার আসে একগাদা বই নিয়ে। হরেক রকমের বই। আইরিন দুই-একটা বই নাড়েচাড়ে। হকার জিজ্ঞেস করে, আফামনি লইবেন? খুব ভালো ভালো বই আছে।
বই কেনে না আইরিন। বইগুলো ফেরত দেয়ার জন্য বাড়িয়ে ধরে।
জগলুর পকেটে টাকা আছে। এমন মেয়ের জন্য খরচ করতে পারলেও শান্তি। সে চট করে কিনে ফেলে মোটিভেশনাল বইটি। নিজের তরফ থেকে উপহার দেয় মেয়েটিকে। মেয়েটির মনে সাহস জাগাতে হবে। এভাবেই অল্পস্বল্প গল্পের মাঝে কখন যেন চলে আসে রাজশাহী স্টেশনে। মেয়েটা কোথায় থাকে তা জানা হয়নি। জগলু রিকশার পেছনে দৌড় লাগায়। নইলে তো আর জানা হবে না। মেয়েটি উত্তর দেয়, রানীবাজারে থাকি আমি।
তার পর থেকে মহা অসুখে পড়ে গেল জগলু। তার দিনে শান্তি নাই, রাতে শান্তি নাই। চোখের সামনে সারাদিন ভেসে ওঠে গৌরবর্ণের চেহারাটা। কী বিপদের কথা! মনে মনে নিয়ত করে জগলু, যেভাবেই হোক মেয়েটাকে সে খুঁজে বের করবে এবং তাকেই বিয়ে করবে।
শুরু হলো তার খোঁজাখুঁজির। বন্ধু রইছকে সাথে নিয়ে রাজশাহী কলেজ মাঠে কেতাদুরস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে চোখ খোলা রাখে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সিদ্ধান্ত নেয় সাহেববাজার রানীবাজার যত মহিলা হোস্টেল আছে সবটিতে চিরুনি অভিযান চালাবে। মেয়েটার দেখা পেতেই হবে।
এভাবে দিন গড়াতে থাকে। হোস্টেলের সামনে জগলু পরিচয় দেয় ভাই বলে আবার কখনো পরিচয় দেয় মামা বলে। কারণ, বাপ চাচা মামা বললে দেখা করার সুযোগ আছে।
এক মাস পরের কথা। জগলু দাঁড়িয়ে আছে একটা হোস্টেলের গেটে। ইতোমধ্যে খবর পৌঁছে গেছে কেউ আইরিনকে দেখতে এসেছে। মেয়েটি নিচে নেমে জগলুকে দেখে অবাক হয়ে যায়Ñ আপনি এখানে কিভাবে?
বোরকা ঢাকা মেয়েটিকে দেখে জগলু খুশিতে আনন্দে খালি হাসে। পরিশেষে বলে, খুঁজতে খুঁজতে চলি অ্যালাম।
মেয়েটি বিরক্তি চেপে বলে, কেন?
জগলু সময় নষ্ট না করে বলে ফেলে, তোমারে খুব ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসা আমারে এইখানে নিয়াইছে।
মেয়েটি আশ্চর্য হয়। বলে, আমি প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছি। আপনার কথা আরেক দিন শুনব।
কবে কখন কোথায়? অধীর হয়ে প্রশ্ন ছোড়ে জগলু।
Ñ আপনি যেদিন চান।
খুশি হয় জগলু। বলে, তাহলে কালই। দিনটাও ভালো। মহানগর রেস্টুরেন্ট। বিকেল ৩টা।
মেয়েটা ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে বিদায় নেয়।
সেদিন সারারাত জগলু ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। কী বলবে, কিভাবে বলবে, কী রিয়্যাক্ট করবে ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে রাত শেষ করে ফেলে। সবচেয়ে বড় কথা রেস্টুরেন্ট বেছে নেয়ার দুইটা উদ্দেশ্য আছে। প্রথমত, মেয়েটার মুখটা ভালো করে দেখতে পাবে। দ্বিতীয়ত, মেয়েটা খুশি হবে খেয়ে এবং জগলুর হাতখরচের হাত দেখে। পরের দিন বেশ সেজেগুজে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জগলু গিয়ে হাজির হয়। মেয়েটাও ঠিক সময়েই আসে। মহাখুশি জগলু একের পর এক খাবারের অর্ডার দিতে থাকে। তারপর বলে, তাহলে এবার খাওয়া শুরু করা যাক।
জগলুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বোরকা ঢাকা মুখ খোলে মেয়েটি। মুখ খোলার সাথে সাথে জগলুর মুখ শুকিয়ে চুন হয়ে যায়। বাপরে বাপ এত বড় বড় দাঁত কি মানুষের হয়? দেখেই তো ভয় লাগছে। মেয়েটি জগলুকে ধন্যবাদ জানায় আর খায়। জগলু মনে মনে ভাবে, তুই মানুষ না একটা রাক্ষস। সেদিন বিল পে করে পালিয়েছে জগলু। সেই সাথে পালিয়েছে ওর ভালোবাসার ভূত।
বুঝতে পারে জগলু, তারা মাস্টার তো আর এমনি এমনি আমারে মাথামোটা বলেনি। আদতেই আমি মাথামোটা জগলু।