সে
- জোবায়ের রাজু
- ০৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
ঘরে ঢুকতেই শ্যামা আমাকে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। শ্যামার এ ধরনের হাসিতে বরাবরই একটি রহস্য থাকে। গত কয়েক দিন আগেও শ্যামা এক বিকেলে আমাকে দেখে হেসে লুটিপুটি খেল। পরে সন্ধ্যায় শ্যামা আমার ঘরে এসে এক টুকরো কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালাল। শ্যামার বান্ধবী আরতি আমাকে চিঠি লিখেছে। আরতি আমার বোন শ্যামার সাথে নাইনে পড়ে। এইটুকুন মেয়ে প্রেমের বোঝেটা কী!
অবশেষে শ্যামার এই হাসির রহস্য উদঘাটন করলেন রোজী আপা। রাত সাড়ে ৮টায় রোজী আপা আমার ঘরে এলেন হাসি হাসি মুখে।
‘জানিস রঞ্জু, বাবা আজ বিয়ের পাকা কথা দিয়ে এসেছেন। আগস্টে বিয়ে।’
‘কার বিয়ে?’
‘কার আবার? তোর।’
‘হোয়াট!’
‘কোনো টালবাহানা নয়। বিয়ে তোকে করতেই হবে।’
‘আমি তো এখনো বিয়ের কথা ভাবছি না। সবে মাত্র সরকারি চাকরিতে জয়েন দিয়েছি।’
‘বাবা যে পাকা কথা দিয়ে এসেছেন। তাছাড়া এমন সুন্দরী মেয়ে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।’
রোজী আপার এই কথাতেই আমি থেমে গেলাম। মেয়ে যদি সুন্দরী হয়, তবে বিয়েতে আমার আপত্তি নেই। রোজী আপা যেহেতু সুন্দরী বলেছেন, তাহলে মেয়েকে না দেখেও আমি বলতে পারি মেয়ে সুন্দরী। কারণ আমার ছোটমামার জন্য পাত্রী খুঁজে বের করেছেন এই রোজী আপাই। আপা পাত্রীর রূপ বর্ণনা সবাইকে যেভাবে দিয়েছেন, পরে দেখা গেল সেই মেয়ে (বর্তমানে আমাদের মামী) আপার বর্ণনার চেয়েও দশগুণ সুন্দরী। সেই মামী এখন টিভিতে মডেলিং করেন মামার অনুপ্রেরণায়। এবারো যেহেতু আপা বলছেন পাত্রী সুন্দরী, কাজেই আপার কথাই রাইট।
আপা আমার ঘর থেকে চলে যাওয়ার পর শ্যামা অনাহূতের মতো এসে আবারো খিলখিলিয়ে হেসে যে কথাটি বলে একদৌড়ে চলে গেল, সে কথাটি হচ্ছে, ‘ভাইয়া, আমার হবু ভাবীর নাম স্বর্ণা। হি হি হি।’
২.
ড্রয়িংরুমে টেলিফোন বাজছে। এই সময় আবার কার ফোন!
‘হ্যালো কে বলছেন?’
‘এটা কী রঞ্জুদের বাসা?’
‘জি। আমি রঞ্জু।’
‘ও আচ্ছা। ইয়ে মানে...
‘কাকে চাই?’
‘ইয়ে, আমি শান্তা।’
‘কোন শান্তা?’
‘আপনার হবু শালি। আমি স্বর্ণা আপুর ছোট বোন।’
‘ও আচ্ছা। তোমার নাম শান্তা, না?’
‘জি শান্তা। একটু কথা ছিল। আমি ঠিক করেছি কাল শুক্রবারে আমার হবু দুলাভাইয়ের সাথে সারা দিন ঘুরেফিরে কাটাব। যদি আপনার আপত্তি না থাকে!
‘ঠিক আছে শান্তা। নো প্রবলেম। তাহলে কাল আমরা কোথায় মিট করছি?’
‘জিয়া উদ্যানে চলে আসবেন। আমার পরনে থাকবে নীল শাড়ি আর চুলে বেলীর মালা।’
‘ওকে শান্তা।’
৩.
জিয়া উদ্যানে এসে শান্তাকে চিনতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি। শান্তাকে প্রথম দেখে আমি অবাক হলাম। যতটুকু সুন্দরী হলে মেয়েদের অপরূপা বলা যায়, শান্তা তার চেয়েও সুন্দরী। এ নারী না পরী!
‘তো আপনার কী খবর দুলাভাই? গার্লফ্রেন্ড কয়জন?’
‘আমার এসব নেই শান্তা।’
‘ওমা, এই যুগে গার্লফ্রেন্ড নেই! আমার আপার কিন্তু ম্যালা বয়ফ্রেন্ড।’
‘খুব ভালো। রূপসীদের বয়ফ্রেন্ড থাকবে না তো কার থাকবে?’
‘কিভাবে জানলেন আপা রূপসী! তাকে তো দেখেননি কখনো।’
‘আমার রোজী আপা দেখেছে তো।’
‘আপনি দেখবেন না?’
‘আপা যখন দেখেছেন, আমার আর দেখার দরকার নেই। তাছাড়া তুমি তো দেখতে অনেক ভালো। তোমার বোন কী আর দেখতে কুৎসিত হবে?’
‘আচ্ছা। তো আপনার হবু বউয়ের কথা তো একবারও জানতে চাইলেন না।’
‘রাইট। স্বর্ণা কেমন আছে? স্বর্ণার কথা প্রথমেই জানতে চাওয়া উচিত ছিল। ভুলে গেছি।’
‘আপনি যে ভুলো মনের, সেটা আপনাকে প্রথম দেখেই টের পেয়েছি।’
‘কিভাবে?’
‘ইয়ে মানে! আপনি ভুল করে প্যান্টের জিপার লাগাননি।’
জীবনে এই প্রথম বড়সড় ধাক্কা খেলাম। তাও আবার হবু শালীর সামনে। ইশ্, এই লজ্জা কোথায় রাখি!
‘তো তোমার আপু কেমন আছে?’
‘আপুর জ্বর। ফ্যানের তলে বসলেই আপুর জ্বর, সর্দি, ঠাণ্ডা লেগে যায়। বিয়ের পর ফ্যান চালানো নিয়ে আপুর সাথে আপনার বেশ ঝগড়া হবে।’
‘সংসারে তো সুখ দুঃখ থাকবেই।’
‘আপনি তো খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারেন।’
‘কি জানি। আমার ছোটবোন শ্যামার ধারণা আমি একটু বোকা টাইপের।’
‘হা হা হা।’
শান্তা হাসছে। হাসলে এই মেয়েকে দারুণ লাগে।
৪.
রাতে টেলিফোন করলাম স্বর্ণাদের বাসায়। আমার সাথে সারা দিন কাটিয়ে শান্তার কেমন লেগেছে ও স্বর্ণার জ্বর কমেছে কিনা, এটা জানার জন্য অন্তত একটা টেলিফোন করাতো উচিত। টেলিফোন ধরল শান্তা। গলা শুনেই বুঝতে পারলাম।
‘হ্যালো কে?’
‘শান্তা আমি রঞ্জু।’
‘ও আচ্ছা। হঠাৎ টেলিফোন!’
‘স্বর্ণার জ্বর কমেছে?’
‘আমিই স্বর্ণা।’
‘সেকি! দুই বোনের গলার স্বরতো একরকম। জ্বর কমেছে তোমার? শান্তা কোথায়! বাসায় ফিরতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?’
‘শান্তা কে?’
‘শান্তা কে মানে! তোমার ছোট বোনের নাম শান্তা না?’
‘আমার কোনো বোন নেই। আমি বাবার একমাত্র মেয়ে।’
‘পাগলামি করো না। শান্তার সাথে আজ সারা দিন জিয়া উদ্যানে কাটালাম।’
‘শান্তার সাথে নয়। আমার সাথে।’
‘মানে?’
‘আমি কাল্পনিক শান্তা সেজে আপনার সঙ্গে অভিনয় করেছি। আমিই স্বর্ণা। আপনি কেমন পুরুষ, সেটা জানার জন্য এই অভিনয় করতে হলো। তা না হলে আপনার এত কাছে কী করে যেতাম! যাকে বিয়ে করব, তাকে একটু পরীক্ষা করে দেখলাম আর কী!’
‘তার মানে তুমি স্বর্ণাই ছিলে? হা হা হা। তো পরীক্ষা করে কেমন দেখলে আমায়?’
‘আপনাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। শ্যামা ঠিকই ধরেছে, আপনি খুব বোকা স্বভাবের। তবু আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। আপনি হচ্ছেন অদোষ মানব। অদোষ মানব চেনেন?’
‘না।’
‘চিনবেন কী করে! আপনি তো বোকা। অদোষ মানে যার কোনো দোষ নেই। নির্দোষ আর কী!’
‘বিয়ের পর কথায় কথায় আবার আমার দোষ ধরবে না তো!’
খট করে টেলিফোনের শব্দ হলো। স্বর্ণা সম্ভবত লজ্জা পেয়ে টেলিফোন রেখে দিয়েছে। বাপরে, এতো জটিল মেয়ে! ছোট বোন নেই। অথচ বোন সেজে আমার সাথে কী নাটক করল। ডেঞ্জারাস মেয়ে। সমস্যা নেই, এই ডেঞ্জারাস সুন্দরী মেয়েকেই আমি বিয়ে করতে একবাক্যে রাজি। কবে আসবে এই শুভদিন!