২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মাথামোটা জগলু

-

বাপে আকিকা করে বড় সাধ করে ছেলের নাম রেখেছিল জগলুুল হায়দার। কিন্তু গ্রামের মানুষের তা আর সহ্য হলো না। ওরা ডাকতে শুরু করল মাথামোটা জগলু। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে জগলুর বাড়ি কোনটা? তখন উল্টো প্রশ্ন শুনতে হয়, কোন্ জগলু? মাথামোটা জগলু?
নিজের পরিচিতি এভাবে মেনে নিতে পারেনি জগলু। প্রতিবাদী হয়েছিল মনে মনে। কিন্তু বাস্তবে সে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে তার হাইস্কুলের টিচার তারামিয়া যেদিন জগলুকে মাথামোটা বলে আখ্যা দিলো সেদিন থেকে জগলুর ভরাডুবি আর রক্ষা হয়নি। তারপর যেখানেই গেছে সেখানেই তাকে মাথামোটা বলে উপহাস করা হয়েছে। জগলু আজো ক্ষমা করতে পারেনি তার সেই শিক্ষক তারামিয়াকে। জগলু মিয়া পণ করেছে যেভাবেই হোক তার এই অপবাদ সে ঘুচাবে।
সেই হাইস্কুল পড়ুয়া ক্লিনসেভ করা জগলু মিয়া শুরু করল ব্যবসা। ডোমার থেকে পিঁয়াজ কিনে ট্রেনে চড়ে আসে নাটোরে, আবার নাটোর থেকে ডোমারে। অল্প দিনেই ব্যবসায় বেশ সফলতা দেখা গেল। জগলুর সুদিনে বন্ধুরাও কাছে ভিড়ে দু-এক কাপ চা খাবার আশা করল। কিন্তু অভিমানী জগলু তাদের পাত্তাই দিলো না। টাকার নেশায় ভুলে গেল লেখাপড়া। ভুলে গেল স্যারদের কড়া সতর্কবাণী।
সেদিনের কথা আজো ভুলতে পারে না মাথামোটা জগলু। ট্রেন যে কখন আসে তার ঠিক নেই। তবুও সে নিশ্চিত হওয়ার জন্য হন্তদন্ত হয়ে স্টেশনে ঢোকে। স্টেশন মাস্টারকে জিজ্ঞেস করল, ফকিন্নি টেন কখুন আসপে?
স্টেশন মাস্টার একরাশ বিরক্তি নিয়ে কুঞ্চিত মুখ করে বলল, কখন আসে ঠিক নাই।
জগলুর পেট তখন ক্ষুধার রাজ্য। ক্ষুধাতৃষ্ণায় বাহ্য জ্ঞান শূন্য হওয়ার উপক্রম। একটু পরে আবার এসে জিজ্ঞেস করে সেই একই প্রশ্ন। এবার সত্যিসত্যি চড়চড় করে ক্ষেপে যান স্টেশন মাস্টার। মিয়া তোমারে কইলাম না ট্রেনের আসার কোনো খবর নাই। কথা শুনে মনের দুঃখে সে স্টেশনের পাশেই খাবার হোটেলে ঢোকে। দুটো নুন ভাত পেটে না পড়লেই নয়। হাতমুখ ধুয়ে আয়েশ করে জগলু সবেমাত্র দুই লোকমা ভাত মুখে দিয়েছে অমনি বেজে উঠল ট্রেনের হুইসেল। তার সেই কাক্সিক্ষত ফকিন্নি ট্রেন। খাওয়া-দাওয়া ফেলে প্লাটফর্মের দিকে দৌড় লাগায় জগলু মিয়া। ট্রেনে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই ট্রেন ছেড়ে দিলো। নলডাঙ্গা স্টেশনে এসেই দাঁড়িয়ে গেল ট্রেন। চার দিকে রব উঠল কী হলো কী হলো? মোবাইল কোর্ট বসেছে। সবার টিকিট চেক করা হবে। দেখতে দেখতে পুলিশে ভরে গেল ট্রেনের বগি। এক এক করে শুরু হলো চেক করা। চুপসে গেল জগলু। তারতো টিকিট নেই। এখন উপায়! যার টিকিট নাই তার ওপর প্রথম দফায় বর্ষিত হচ্ছে চড়থাপ্পড়। তারপর টেনেহিঁচড়ে থানার দিকে। কী সর্বনাশের কথা! মানসম্মান বলে আর কিছুই থাকবে না। তখনই সে দেখতে পায় ভিড়ের মধ্যে তারামিয়া মাস্টারকে। এবার সত্যি সত্যি জগলু মিয়ার মাথাটা ঘুরে ওঠে। দুই চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে। জগলু মিয়াকে ধরে পুলিশ যদি গণহারে পিটুনি দেয় তবু তার দুঃখ থাকত না। কিন্তু তারামিয়া মাস্টারের মুখ আটকাবে কী দিয়ে? সে তো গিয়ে ঠিকই রসিয়ে রসিয়ে বলবে এই অপমানের কথা। কিংবা তার সামনে যদি পুলিশ চড় মেরে দেয়, তাহলেও মাস্টার বলবে, কিরে মাথামোটা তোরে কী এই শিক্ষাই দিছিলাম? তখন কী জবাবটা দেবো?
জগলু ভীত মুখে তাকিয়ে থাকে তারামিয়া মাস্টারের দিকে। তারামিয়া মাস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে পুলিশ টিকিট বের করতে বলে। উত্তরে লোকটি বলে, টিকিট নাই ছার।
টিকিট কিনতে পারিস না ট্রেনে উঠিস ক্যান? কথাটি বলেই লাগায় চড়।
লোকটা খুব দ্রুত মাথাটা সরিয়ে নেয়। সাথে সাথে সেই চড়টি গিয়ে লাগে তারা মাস্টারের গায়ে। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে তারা মাস্টার। এক মুহূর্তে চেপে ধরে পুলিশের কলার। বলে, এই ব্যাটা তুই আমারে চিনিস? তোর কত সাহস আজ আমি দেখেই ছাড়ব।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই থ হয়ে যায়। তারা মাস্টারের মুখে তখন সেকি ভাষণ ! কখনো বাংলায়, কখনো ইংরেজিতে। অবশেষে পুলিশ অফিসার এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়? নির্দেশ করে এই বগিতে আর কোনো চেকিং হবে না। চলো সবাই। সব পুলিশ বিদায় নেয়। এদিকে প্রায় দম বন্ধ হয়ে থাকা জগলু মিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এ যাত্রা তার সম্মান বেঁচেছে।
উল্লেখ্য, এরপর জগলু মিয়া আর কোনো দিন বিনা টিকিটে গাড়িতে ওঠেনি।


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

সকল