আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
- মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
- ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০
দু’দিন আগে চা-স্টলে বসেছিলাম। করম চাচা গরম চায়ের অর্ডার দিয়ে আমার পাশে বসলেন। প্রচণ্ড গরম পড়েছে। করম চাচা বসেই উসখুস করতে লাগলেন। তিনি ডানে-বামে হেলে আকাশের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত দেখে নিলেন। আমি আড় চোখে বিষয়টা লক্ষ করলাম এবং বললামÑ চাচা কোনো সমস্যা?
করম চাচা মুখ বাঁকা করে বললেন, আচ্ছা ভাতিজা কও তো কবে নাগাদ ভারী বর্ষণ হইবে?
আমি বললাম, এখন আষাঢ় মাস। যেকোনো মুহূর্তে ভারী বর্ষণ শুরু হতে পারে, সাথে ঝড়ও হতে পারে। কিন্তু চাচা, ভারী বর্ষণের খোঁজ নিচ্ছেন কেন? কারণটা কী?
তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, তোমার কাকী বায়না ধরেছে কক্সবাজার যাবে সমুদ্র দেখতে।
আমি কিছুক্ষণ চুপ মেরে থেকে চাচার কথার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সফল হলাম না। আবার প্রশ্ন করলাম, চাচা, কক্সবাজার যাবেন ভালো কথা, কিন্তু ভারী বর্ষণের খবর নিচ্ছেন কেন?
চাচা এবার বিরক্তির ভাব নিয়ে বললেন, এই সাধারণ কথাডা বুঝতে পারছ না হে বেডা। কী লেহাপড়া ডা করলা! হোনো মিয়া, কক্সবাজার বেড়াতে গেলাম আর সাগরের পানিতে নামলাম না তা কি হয়? সাঁতার না শিইখ্যা পানিতে নামলে কখন টুপ কইরা তলায়া যামু তার কোনো গ্যারান্টি আছে? ভারী বর্ষণ হলে আমি যে ফেলাটে থাহি তার গেরাউন্ড ফলুরে বুক সমান পানি তো জমেই। এই সুযোগে আমার পোলাডারে সাঁতার শিখায়া ফেলা যাবে। তা ছাড়া লাইফ বোটের সাহায্যে কিভাবে জীবন রক্ষা করতে হইবে আমি, পোলা আর তোমার কাকী এই তিনজনে মিলে একটা মহড়াও দিয়ে নিলাম। ভালো না?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, বাহ্ চমৎকার আইডিয়া!
চা-স্টল থেকে বাসায় ফেরার পথে এক বন্ধুর সাথে দেখা। তাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, কিরে তোকে এমন মনমরা লাগছে কেন?
সে বলল, আর বলিস না, মনটা খুব খারাপ।
বললাম, কেন? কোনো সমস্যা?
সে বলল, এই বুড়ো বয়সে একটা প্রেমে পড়লাম, সেখানেও কাড়াকাড়ি। এই কাড়াকাড়ি-পাড়াপাড়ি থেকে আমি মুক্তি চাই।
আমি বললাম, কাড়াকাড়ি মানে? একটু খোলাসা করে বল তো।
সে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাকেই উল্টো প্রশ্ন করল, ঝড়-বৃষ্টি কবে হতে পারে বল তো?
আমিও উত্তর না দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম, তুই হঠাৎ কার প্রেমে পড়লে আর ঝড়-বৃষ্টির সাথে তোর প্রেমের সম্পর্কই বা কী?
বন্ধু বলল, তুই তো জানিস না, আমাদের অফিসে নাসরিন নামে এক সুন্দরী কলিগ এসেছে। ওকে দেখে তার পাশের চেয়ারে বসে যে মানিক্কা, তার ভাব বেড়ে গেছে। গায়ে পড়ে নাসরিনের সাথে কথা বলে, হাসে। ইস! এই প্রেমটাও মনে হয় টিকল নারে। কবে যে ঝড় আসবে।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, কিন্তু ঝড় আসলে তোর লাভটা কী?
সে বলল, আরে ওই মানিক্কার স্মার্টনেসের আসল কারণ তো ওর পরচুলা। নাসরিন তো এটা জানে না। আমি অপেক্ষায় আছি, কবে কালবৈশালী ঝড়ে তার পরচুলা যাবে উড়ে। কবে তার টাক্কু মাথার রহস্য নাসরিনের কাছে ধরা পড়বে। মানিক্কা যে বুড়ো, এটা নাসরিন বুঝে যাবে আর তখনই নাসরিন নব্বই ডিগ্রি হেলে পড়বে আমার দিকে।