অনলাইনে ঈদ শপিং
- মোহাম্মদ অংকন
- ৩০ মে ২০১৯, ০০:০০
মিসেস জরিনা এলাকার ফেমাস একজন নেত্রী। প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার কারণে পরপর দুইবার নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন। সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সক্রিয় ছিলেন না। আর এটাই মূলত প্রচারণায় পিছিয়ে পড়ার একমাত্র কারণ। নির্বাচনে হারতে তো হবেই। তিনি এখন বুঝে গেছেন, নির্বাচনে ভোট এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাইলে হবে না, ফেসবুকে চাইতে হবে! যা হোক, ফেসবুকে তিনি এখন মস্তবড় সেলিব্রেটি। একে তো নেত্রী, তারপর আবার ফেসবুক সেলিব্রেটি। তাই ঘর থেকে বের হলেই ফ্যান-ফলোয়ারদের আক্রমণ তথা ভিড় বেড়ে যায় সেলফি তুলতে। সেলফি তোলা নিয়ে তার কোনো ভয়ভীতি নেই, তবে সেলফি তুলতে গিয়ে কারো হাতের ঘষা, মুখের ঘষা লেগে মুখের মেকআপ যদি উঠে যায়, তখন কী হবে? সেই দুশ্চিন্তায় লোকজনের অন্তরালে থাকেন। ভার্চুয়ালি বেশ সক্রিয় তিনি। এতেই তার প্রচারণা ভালো চলছে।
এ দিকে ঈদ চলে এসেছে। সবাই কেনাকাটা করতে যাচ্ছে শহরের বড় বড় মার্কেটে। ফেসবুকে চেকইন দিচ্ছে। শপিংয়ে গিয়ে ব্যাগপত্র হাতে নিয়ে সেলফি তুলে আপলোড দিচ্ছে। কে কয়টা পোশাক কিনল, তাও ফেসবুকে পোস্ট করছে। এসবই মিসেস জরিনার নজরে পড়ছে বেশ। এসব দেখে তারও ইচ্ছা করছে শপিংয়ে যেতে। কিন্তু তিনি একদম নিরুপায়। সেলিব্রেটি বিড়ম্বনার অতীত অভিজ্ঞতা তাকে শপিংয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে। এখন তার বিকল্প ভাবনা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বর্তমানে অনলাইন শপিংয়ের কাটতি নেই। অনেকেই ঘরে বসে কেনাকাটা করছেন। যানজট পেরিয়ে শহরের শপিংমলে যেতে হচ্ছে না। আর সেলিব্রেটিদের বিড়ম্বনার শিকারও হতে হচ্ছে না। এ সুযোগ কাজে লাগানোর মোক্ষম সময় মিসেস জরিনার। নতুবা তার ঈদ উদযাপন সাদাসিধে হবে কিংবা ভেস্তে যাবে সব প্রোগ্রাম। মোট কথা, পুরনো পোশাক পরে ফেসবুক লাইভে আসতে হবে। এটি তার দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। আর ঈদের দিন লাইভে না এলে, বিষয়টি তার ফ্যান-ফলোয়াররা কি মানতে পারবে? কখনোই নয়। তা ছাড়া নেত্রী হিসেবে সবার খোঁজখবর নেয়াও তার দায়িত্ব। ফেসবুকের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়ার বিষয়টি তার জন্য একটি সুযোগেরও ব্যাপার। জনগণ এটাই চায় এখন।
অনলাইনে ঈদ শপিং! মিসেস জরিনা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কত্ত যে খুশি হলেন তিনি, তা জানাতেও ফেসবুকে লাইভ করলেন। ফ্যান-ফলোয়ারদের মতামত নিয়ে অনলাইনে লাখ টাকার পোশাক, কসমেটিকস, জুয়েলারি, লেদার পণ্যের অর্ডার করে ফেললেন। ভাবাই যায় না, বাছাই করে করে সেরাটাই তিনি অর্ডার করলেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সকল লেনদেন শেষ করলেন। এবার ডেলিভারির পালা।
অনলাইনে অর্ডারের তিন দিন কেটে গেল। মিসেস জরিনা একটু বিচলিত। কেন তারা এত লেট করছে? সেদিনই বিকেলে প্রথম অর্ডার ডেলিভারি হলো। তিনি অর্ডার করেছিলেন ৩০ হাজার টাকা মূল্যের জামদানি শাড়ি। দুর্ভাগ্য যে, তিনি ডেলিভারির প্যাকেট খুলে দেখেন ৩০০ টাকা মূল্যের একটি হলুদ শাড়ি। এ দেখে মিসেস জরিনা রীতিমতো স্ট্রোক করার অবস্থা। এখন উপায় কী? তার এ রেশ কাটতে না কাটতেই পরের দিন সকালে দ্বিতীয় অর্ডারের ডেলিভারি হলো। তিনি অর্ডার করেছিলেন একটি মেকআপ বক্স, কিন্তু ডেলিভারির প্যাকেট খুলে দেখেন যে কিভাবে রূপচর্চা করবেন, তা নিয়ে লেখা একটি বই! আবারো মিসেস জরিনা স্ট্রোকের পর্যায়ে চলে গেলেন। এভাবেই একে একে সব অর্ডারকৃত পণ্য ডেলিভারি হতে লাগল। জুয়েলারি অর্ডার করে পেলেন পেঁয়াজ, প্রসাধনী অর্ডার করে পেলেন বালুর প্যাকেট, লেদার সামগ্রী অর্ডার করে পেলেন কাপড় কাচা সাবান ইত্যাদি ইত্যাদি। এহেন অবস্থায় মিসেস জরিনা তো আধমরা। তার লাখ টাকা এভাবে জলে যাবে, ভাবতেও পারেননি। সবচেয়ে বড় কথা, ঈদ তো আগামীকাল।
মিসেস জরিনা অনলাইন শপিংয়ে প্রতারিত হয়ে দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিছানায় শুয়ে রইলেন। কিসের ঈদ, কিসের ফেসবুক লাইভ। সব বাদ। মোবাইলের ডাটা কানেকশনও অফ। এ দিকে সবাই ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত। কিন্তু অনলাইন শপিংয়ের ফাঁদে জড়িয়ে মিসেস জরিনার ঈদ উদযাপন করা হলো না। এক মুহূর্তের জন্য ফেসবুক লাইভে আসা হলো না। একটি পোস্টও শেয়ার করা হলো না। এর পর কি তার ফেসবুকীয় জনপ্রিয়তা থাকার কথা? সে খবরটা ঈদের পরের দিন জানা যেতে পারে।