তুমি তো আমার
- মুহাম্মাদ সোহাগ
- ০৯ মে ২০১৯, ০০:০০
দুই বন্ধুর মধ্যে খুব মিল। কতটা মিল? এই প্রশ্ন আমাকে করে লাভ নেই। কারণ তাদের মধ্যে কতটা মিল-মহব্বত তারা নিজেরাই জানে না, আমি জানবোই ক্যামনে? আর আপনাদের জানাবোই বা ক্যামনে? তবে উনাদের মধ্যে মিলের পরিমাণটা উনাদের বিবিরা জানলে জানতেও পারেন। এটা বললাম এই কারণে যে, এলাকায় অনেকেই বলে তাদের একজন নাকি নিজের বিয়ের সময় নিজের বদলে অপরজনকে দিয়ে কবুল বলানোর জন্য বিয়ের আসরে সবার সামনেই আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এবার বুঝেন, তাদের বিবিদের কথা কেন বললাম?
এবার আসি পরের ঘটনায়। দু’জনে বিয়ে করেছিলেন কয়েক দিন আগে-পিছে। বলাবাহুল্য, দু’জনের স্ত্রীরা মা হয়েছিল প্রায় একই সময়ে। একসময় তাদের সন্তানেরা ভূমিষ্ঠ হলো। তবে এখানে বেশ বড় রকমের একটা ব্যতিক্রম দেখা দিলো। সেটা হলো, একজনের হলো মেয়ে অন্যজনের হলো ছেলে। এ কারণে তাদের মধ্যে ক্ষণিকের অসন্তুষ্টি দেখা দিলেও তারা বুঝতে দেরি করল না যে, এই ব্যতিক্রমটাই তাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে সব থেকে বেশি সহায়তা করবে। আর সেটা হবে তাদের দুই ছেলেমেয়েকে একে অন্যের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজেরা পরস্পরের বেয়াই হওয়ার মাধ্যমে। বিষয়টা তাদের নোবেল প্রাইজ বা অস্কারের মতো প্রাইজ পাওয়ার থেকেও আরো বেশি আনন্দিত করল।
একসময় তাদের সন্তানেরা মানে আজকের গল্পটা যাদের নিয়ে সেই টুনাটুনি বড় হলো। টুনাটুনির মধ্যে কিছুটা ‘না না’ ভাব থাকলেও অভিভাবকদের ইচ্ছেতে শেষমেশ তাদের বিয়েটা হয়েই গেল।
বিয়ের পর টুনাটুনির নতুন সংসার বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরেই তাদের মাঝে একটু একটু ঝগড়া বাধতে লাগল। সেই ঝগড়ার সূত্রপাত করেছিল মূলত টুনাই। সে টুনিকে ঠিকমতো বাজার-সদাই তো করে দিতোই না, বরং কসমেটিকসগুলোও পর্যাপ্ত পরিমাণে কিনে দিতো না। যার ফলে বিভিন্ন দিক থেকে টুনি নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করত। সংসারের বড় বড় জিনিসপত্রের ব্যাপারেও টুনার উদাসীনতা ছিল মারাত্মক!
এমন অবস্থায় টুনি তার শ্বশুরের কাছে বিচার দিয়েও তেমন প্রতিকার পায়নি। পরে টুনি তার বাবার কাছে মানে টুনার শ্বশুরের কাছে বিষয়টা উপস্থাপন করার পর তিনিও এর কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান দিতে পারলেন না। টুনির বাবা যা করতে পেরেছিল তা হলো, টুনির সংসারে ছোট-বড়, দামি, কম দামি যা যা দরকার হতো নীরব থেকে তিনিই সেটার ব্যবস্থা করে দিতেন।
এরকম অবস্থাতেই টুনাটুনির সংসার চলতে থাকল কিন্তু এসব আর সহ্য হয় কত দিন! এক সময় প্রায় প্রতিটি দিনই সংসারে টুনার উদাসীনতা নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়া হতো। এর জন্য ততদিনে তাদের বাবা ও শ্বশুরের সম্পর্কেরও রসাতলে গেছে। একদিন তাদের সেই ঝগড়াটাই আস্তে আস্তে ছোট থেকে অ-নে-ক বড় হয়ে গেল।
সেই ঝগড়া-সমস্যার সমাধান টানতে পারিবারিক বিচার বসানো হলো। দুই পক্ষেরই বাঘা বাঘা অভিভাবকেরা উপস্থিত হলেন। বিচার শুরু হলো। মুরব্বিদের দুই কথার পর প্রথমেই শুরু হলো অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উপস্থাপনের পালা। সেই অভিযোগ উপস্থাপনের জন্য টুনি দাঁড়িয়ে সব কিছু বলা শুরু করল। টুনি টুনার নামে বলছিল, সে ঠিকমতো ঘরে থাকে না, সংসারের কোনো কাজে তার মন নেই, সব কাজ আমার করতে হয়, সংসারের প্রয়োজনে বড় কিছু তো দূরের কথা ছোট কিছুও সে দেয় না, সব আমার বাবার বাড়ি থেকে আনতে হয় প্রভৃতি।
একপর্যায়ে টুনি তার বাবার দেয়া ঘরের এটা ওটা দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগল দেখুন, এটা আমার... ওটা আমার... এভাবে করতে করতে সব কিছুই টুনি নিজের দাবি করে সবাইকে দেখিয়ে দিলো। ততক্ষণে টুনা আর সহ্য করতে না পেরে রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে টুনিকে থামিয়ে বলল, এ্যাই, এই সবকিছু তোমার মানলাম আর তুমি কার? টুনা আরো বলল, তুমি নিজেই তো আমার, সেই হিসেবে তো তোমার সবকিছুই মানেই আমার।
এক কথায় বিচার শেষ হয়ে গেল।