বৈশাখের হিসাব
- জেলী আক্তার
- ০৯ মে ২০১৯, ০০:০০
ফেলু মিয়ার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও বিয়ে হচ্ছে না, কোনো না কোনো কারণে ভেঙে যাচ্ছে। বিয়ে ভাঙার পেছনে যে উল্লেখযোগ্য কারণ আছে। সেটা হলো তার কিপ্টামি স্বভাব। পুরো এলাকা জানে ফেলু মিয়ার কিপ্টামি সম্পর্কে। ফেলু মিয়া এতটাই কিপ্টা যে ফোনে ফ্লেক্সিলোড দেয়ার এসএমএস আসে সাকসেসফুল। তারপরও চেক করে আসলে অ্যাকাউন্টে টাকা যোগ হলো কি না? তা ছাড়া চায়ের দোকানে গেলে কখনো চা মুখে তোলে না, রাতে নাকি ঘুম হয় না। আর পান তো খায়ই না দাঁত লাল হয় বলে কিন্তু যখন অন্য কেউ খাওয়াবে তখন বলবেÑ
চায়ের প্রতি প্রচুর নেশা, এক-দুই কাপে চলে না। পান তো মুখ থেকে শেষ হয় না। সেটাও আবার জর্দা দিয়ে খেতে হবে। আর কত কি বলবে ফেলু মিয়া তার হিসাব নেই। কিন্তু এবার মনু ঘটক পিছু নিয়েছে এবার দুই মন এক করেই ছাড়বে।
ফেলু মিয়া মেয়ে দেখল, বাড়িঘর দেখল সব কিছুই এবার মিলে গেছে আর বিয়ের তারিখও ফাইনাল। ১৪ এপ্রিল বিয়ে, দু’দিন আগে আত্মীয়স্বজন এসে বাড়ি ভরে গেল। ফেলু হিসাব করে দেখলÑ ভাবীসহ মোট ১৫ জন। তাদের জন্য হলুদ শাড়ি কিনতে হবে। ফেলু কিনতে গিয়ে দেখল দোকানে ভিড়। প্রচুর ভিড়। দোকানদার বলছে পয়লা বৈশাখÑ
ফেলু মিয়ার মাথায় যেন বাজ পড়ল। কারণ বিয়ের পর বউকে বৈশাখী শাড়ি আবার ঘুরতে নিয়ে গিয়ে একপ্লেট বাসি পান্তা ৩০০ টাকা, আর ইলিশ ভাজা এক পিস ৩০০ টাকা আর নানারকম ভর্তা কোনোটা ১০০, কোনটা ২০০ সব মিলিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তা ছাড়া নতুন জামাই হিসেবে বৈশাখে আবার বড় বড় মাছ নিয়ে যেতে হবে শ্বশুরবাড়িতেÑ সব মিলিয়ে খরচ অনেক। এই ভেবে কিছু না কিনে মার্কেট থেকে ফিরে এলো। তারপর বাড়িতে এসে ঘটককে জানিয়ে দিলো এবারো বিয়েটা হচ্ছে না। ঘটক অবাক হয়ে বললÑ কেন হবে না, মেয়ে কি অপছন্দ? নাকি বাড়ি? কোনটা অপছন্দ?
ফেলু মিয়া বেশ সহজভাবেই উত্তর দিলোÑ বৈশাখে বিয়ে করলে খরচ একটু বেশি হবে। তাই বিয়েটা বৈশাখের পরই হবে।
মনু মিয়া মনে মনে ভাবছে দুই মন এবারও জোড়া করা গেল না। এবারো বিয়েটা থমকে গেল।