বর্ষার স্মৃতি হয় না ইতি
- রুহুল আমিন রাকিব
- ০৯ মে ২০১৯, ০০:০০
অনেক দিন আগের কথা। বাবার সাথে মঙ্গলবার আর শুক্রবার হাটে যেতাম। বলে রাখা ভালো, প্রতি সপ্তাহে এই দুই দিন আমাদের ইউনিয়নের সব থেকে বড় বাজার দুর্গাপুরে হাট বসে।
হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব রকম জিনিস ওঠে।
এছাড়া সপ্তাহে এ দু’দিন হাটে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসে। সে যাই হোক, আমার বাবা হাটে চাল বিক্রি করতেন। বাবাকে সাহায্য করতে আমিও হাটে যেতাম।
তখন ছিল বর্ষা মওসুম। হাটে চাল বিক্রি শেষে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরছি। হেঁটে হেঁটে বাড়ির পথে রওনা করছি আমি ও বাবা। কিছু দূর আসার পরে আমাদের পাশের গ্রামের আরো দু’জন লোকের সাথে দেখা হলো।
ওদের সাথে একটা ষাঁড় ছিল। বাবা জানতে চাইলেন, কত হাজার টাকা দিয়ে গরুটা কিনেছে?
যা হোক, গরুটার গায়ের লোমগুলো একদম কালো ছিল। অন্ধকারে চট করে বোঝার উপায় নেই, গরু কোথায় আছে?
দুর্গাপুর বাজার থেকে কিছুটা দূরে আমাদের বাড়ি।
সে দিন রাতের আকাশটা একটু বেশি খারাপ ছিল। একে তো অন্ধকার রাত, তার ওপর কারো কাছে টর্চলাইট নেই। তাই আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে তার আলোতে কোনো রকমে দেখে দেখে সবাই পথ চলছি। হঠাৎ করে উত্তর দিক থেকে দমকা বাতাস শুরু হলো। আমরা সবাই হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলাম। তবে সমস্যা হলো গরু নিয়ে।
দু-তিনজনে মিলে ঠেলাঠেলি করেও গরুটাকে কোনোভাবেই বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এই দিকে বাতাসের গতি আরো বেড়ে যাচ্ছে। একটু পর পর শব্দ করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে!
যখন আকাশে বিদ্যুৎ চমকায় তখন গরুটা লাফিয়ে ওঠে। একে তো গায়ের রঙ কালো, অন্ধকারে কিছুই বুঝা যায় না, তার ওপর লাফালাফিÑ আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। এই গরু যদি কোনো রকমে হাত থেকে ছুটে যায় তাহলে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঘটনা তাই ঘটল। শিলাবৃষ্টি শুরু থেকেই গরুটা দিলো এক ভোঁ দৌড়। গরুর মালিক কিছুতেই তাকে আটকাতে পারলেন না। তিনি ছুটতে লাগলেন গরুর পেছনে।
সে দিন সারা রাত এমন করে গরুর পিছু পিছু দৌড়ে তিনি শরীরের কত জায়গায় যে আঘাত পেলেন, তার হিসাব নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, গরুর পেছনে ছুটতে গিয়ে কখন তার লুঙ্গি-জামা ছিঁড়ে গেছে তিনি টের পাননি। ভাগ্যিস লুঙ্গির নিচে হাফপ্যান্ট পরা ছিল। তা না থাকলে বেচারা লজ্জায় কারো সামনে মুখ দেখাতে পারত না।
পরের দিন সকাল বেলা, আমাদের গ্রাম থেকে তিন গ্রাম দূরে গিয়ে সেই গরুর খোঁজ মিলল।
কিন্তু সে দিন রাতের কথা মনে পড়লে আজো আমার হাসি পায়! আবার ভয়ে গায়ের লোমগুলোও দাঁড়িয়ে যায়।