বদরুলের বিয়ে
- তারেকুর রহমান
- ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
বদরুলের চরিত্র নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। নতুন করে প্রেমে পড়া বদরুলের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তার অবশ্য একটা ভালো গুণ আছে। গুণ নাকি দোষ তা বলা কঠিন। তবে বদরুল একসাথে একাধিক মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারে। জলিকে মেসেজ করতে গিয়ে মলিকে মেসেজ করেছে। একজনের রিপ্লাই আরেকজনকে পাঠিয়েছে, এ রকম ঘটনা বহুবার ঘটেছে। এতে বদরুলের কিছু যায় আসে না। কেউ চলে গেলে তাকে তো ধরে রাখা যায় না। এমনও হয়েছে ব্রেকআপের কিছু দিন পর আবার প্রেম শুরু করেছে। একে সে নাম দিয়েছে প্রেমিকা নবায়ন। তবে বাইরের জগতে বদরুল খুব ভালো মানুষ। গ্রামে তার একটা ভালো পরিচিতি আছে। ঢাকায় থেকে হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা বলে বেড়ায় বদরুল। এই সংস্থার সভাপতি, অমুক সংস্থার চেয়ারম্যান বদরুল। সে নিজে বিশ্বাস না করলেও গ্রামের সহজ-সরল মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে ফেলছে। ইদানীং গ্রামে এলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে যায়। দেশে যে হারে মোটিভেশনাল স্পিকার বেড়েছে তাতে বদরুলের সুবিধাই হয়েছে। এই সুযোগে সেও নিজের নামের আগে মোটিভেশনাল স্পিকার হাতিয়ে নিয়েছে। ছেলেমেয়েদের নানামুখী জ্ঞান দিতে কার্পণ্য করে না বদরুল। এই তো কয়েক মাস আগের ঘটনা। বদরুল এক স্কুলে গিয়ে নানান কথা শোনাচ্ছে।
Ñ তোমরা পড়াশোনায় মনোযোগী হও। এসব প্রেমপ্রীতির পেছনে দৌড়াইও না। আজ তোমরা যার পেছনে দৌড়াও, সফল হলে ওরাই তোমার পেছনে দৌড়াবে।
বদরুলের এই সুন্দর কথাগুলো সবার কাছে বেশ ভালো লাগল। ইতোমধ্যে বদরুলের মেসেঞ্জারে আওয়াজ করতে লাগল। বদরুল এ দিকে কর্ণপাত না করে কথা বলতে লাগল। কথার মাঝেই বদরুলের কল এলো। বদরুল ফোন রিসিভ করেই কেটে পড়ল। জলি ফোন করেছে বদরুলকে। কার সাথে এতক্ষণ ছিল তার জবাব চায় জলি। বদরুল যতই বলছে সে স্কুলে ছিল। জলি ততই বিরক্ত হচ্ছে। জলির সাথে কথা বলার মাঝেই বদরুলকে ফোন করে মলি। জলি, মলি যেই হোক বদরুল তাদের প্রাণভরে ভালোবাসে। ভালোবাসার টানে বদরুল নানা জায়গায়ও ছুটে যায়। একবার তো ভালোবাসার টানে বদরুল চিটাগাং চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে এত দিন সে যার সাথে প্রেম করত সে দুই সন্তানের জননী। কী আর ভালোবাসাবাসি, সেখানে গিয়ে অগত্যা মন খারাপ হয়ে এলো। অবশ্য তার এ মন খারাপ বেশিদিন ছিল না। কারণ তার প্রেমিকাশূন্যতা দেখা দিলেই ওই মেয়ের সাথে কথা বলে। আগে বদরুল মুখস্থ বলতে পারত তার প্রেমিকার সংখ্যা কত। এখন আর মুখস্থ থাকে না। এত পরিমাণ প্রেমিকা বেড়েছে তার, হিসাবের জন্য নোটখাতা রাখতে হয়।
বদরুলের চাকরি হয়। কী চাকরি কেউ জানে না। অনেক বড় চাকরি। বদরুলের এমন ভাব মনে হয় গ্রামের মধ্যে তারই চাকরি হয়েছে। আর সবাই বেকার অথবা ছোট চাকরি করে। বদরুল ইদানীং অনেককে এভয়েড করে চলতে শুরু করেছে। বড় চাকরিজীবী বলে কথা। যার-তার সাথে তো আর কথা বলা যায় না। বাল্যবন্ধুরা তার কাছে এলে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কিছু বুঝিয়ে তাদের এড়িয়ে চলে।
চাকরি হওয়ার পর বদরুল ভাবল এবার তার বিয়ে করা দরকার। পাত্রী দেখার জন্য উঠে পড়ে লাগল সে। এত দিন যাদের সাথে প্রেম করেছে, এদের বিয়ে করার ইচ্ছা তার নেই। এরা তার প্রেমিকা ছিল না। সবাই ছিল জাস্ট ফ্রেন্ড। বদরুল তার প্রেমিকাদের সাথে যে চ্যাট করেছে তা একে একে সব ডিলিট করে দিলো। ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে অনেককেই ব্লক মেরেছে। নিজেকে এমনভাবে ঝঞ্ঝাটমুক্ত করেছে, মনে হবে বদরুল কোনো দিন কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলেনি।
পাত্রী দেখতে বের হলো বদরুল। হঠাৎ করেই মলি ফোন দেয়। মলির সাথে বদরুল কথা বলতে লাগল। মলির সাথে কথা শেষ হতে না হতেই জলির ফোন। জলি তো রেগেমেগে একাকার। ফেসবুকে কেন তাকে ব্লক মারা হলো? নতুন করে কারো প্রেমে পড়ছে নাকি বদরুল? নানা প্রশ্নে জর্জরিত বদরুল। জলি বদরুলের সাথে দেখা করতে চায়। বদরুল অবশ্য এ রকম আবদার কখনো মিস করে না।
সে রাজি হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল জলির সাথে ডেটিং। জলিকে আনব্লক করে আবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় বদরুল। জলির সাথে গল্প-আড্ডা বাড়তে লাগল। বদরুল ভুলেই গেল তার আজ পাত্রী দেখার কথা। কিসের পাত্রী দেখাদেখি। জলির সাথে আড্ডা দিতে পেরে সে খুব খুশি। বদরুলের যে চরিত্র তাতে মনে হলো কয়লা ধুলেও ময়লা যাবে না, কথাটা একদম ১০০ পার্সেন্ট সঠিক। বদরুল বিয়ে করতে পারেনি। তার প্রেমিকারা তাকে সে সুযোগ করে দেয়নি।