অন্ধ
- জোবায়ের রাজু
- ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
জীবনে প্রথমবারের মতো আজ আমি টাই-স্যুট পরে আউটডোরে বের হয়েছি। তাও আমার নিজের ইচ্ছায় নয়, হবু বউ তিন্নির বিশেষ অনুরোধে। আজ তিন্নির জন্মদিন। ওকে নিয়ে কিংফিশার রেস্টুরেন্টে যাবো কেক কাটতে। কাল রাতে তিন্নি অনুনয় করে বলল, ‘প্লিজ তুমি টাই-স্যুট পরে এসো।’ তিন্নিকে খুশি করতে আমি সদা প্রস্তুত। তাই তো এই মারাত্মক গরম উপেক্ষা করেও বীর সৈনিকের মতো টাই-স্যুট পরে বের হয়েছি।
আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি চৌরাস্তার মোড়ে। তিন্নি আর ১০ মিনিট পর ওর বাড়ি থেকে বের হবে। আমি চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি তিন্নির অপেক্ষায়। আমার ডান পাশে একটা অন্ধ ভিক্ষুক বেশ করুণ গলায় ভিক্ষা চাইছে। দেখে দিল নরম হয়ে উঠল। পকেটে হাত দিয়ে দেখি ভাংতি কোনো টাকাই নেই ১০ টাকার একটি নোট ছাড়া। দিয়ে দিলাম সেটা অন্ধ ভিক্ষুককে। কিন্তু তাতেই বিপত্তি ঘটল। ভিক্ষুকটি রেগেমেগে আগুন।
‘আপনার কি জ্ঞানবুদ্ধি নেই? একজন টাই-স্যুট পরা শিক্ষিত ভদ্রলোক হয়ে আমাকে মাত্র ১০ টাকা দিলেন। দেখে তো মনে হচ্ছে বড় কোনো অফিসে চাকরি করেন।’
‘হোয়াট? তার মানে তুমি চোখে দেখতে পাও? অন্ধ মানুষ না হয়েও অন্ধ সেজে মানুষকে বোকা বানিয়ে ভিক্ষা করো? তোমাকে পুলিশে দেয়া দরকার।’
‘এতটা নিষ্ঠুর হবেন না স্যার। পুলিশে দিয়েন না।’
‘অন্ধ সেজে ভিক্ষা করো কেন?’
‘আসলে আমি অন্ধ না।’
‘তো?’
‘এই জায়গায় রোজ যে অন্ধ লোকটি ভিক্ষা করত, আমি তার ভাগ্নে। তার বদলে আজ আমি অন্ধ সেজে বসেছি।’
‘না না। এটা ঠিক হয়নি। ওই আসল অন্ধ লোকটি কোথায় আজ?’
‘তিনি ইউটিউব দেখে শাকিব খানের চারটি সিনেমা ডাউনলোড করেছেন। আজ সারা দিন বাসায় বসে সিনেমাগুলো দেখবেন।’
‘হোয়াট? সিনেমা! তার মানে সেও অন্ধ না!’
‘আস্তে বলেন স্যার। লোকে শুনলে আর ভিক্ষা দেবে না। পৃথিবীটা ধান্ধার জায়গা স্যার। বেশির ভাগ মানুষ ধান্ধা করে খায়।’
আমার পকেটের মোবাইল বেজে উঠল। তিন্নির কল। সে নিকটে এসে গেছে। রিসিভ করার আগেই অন্ধ সাজা ভিক্ষুককে বললাম, ‘আজ হাতে সময় নেই। নয়তো তোমার ধান্ধাবাজি দেখাতাম।’
আমার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে সে আবার অন্ধ সেজে গলা হাঁকিয়ে বলছে, ‘ও ভাইয়েরা আমার, এই অন্ধকে সাহায্য করুন।’