২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

  খান সাহেবের মেয়ে

-

এই মহল্লার যতগুলো সুন্দরী মেয়ে আছে, তার মধ্যে খান সাহেবের মেয়ে লুবনা অন্যতম। এই মেয়ের জাদুমাখা হাসি আমাকে প্রেমিক শাজাহান বানিয়ে দেয়। প্রায়ই লুবনার সাথে রাস্তাঘাটে হুটহাট দেখা হয়ে যায়। মনে মনে পছন্দ করার পরও লুবনাকে কখনো আমার মনের কথা বলা হয় না।
খান সাহেব আমার বাবার মুদি দোকানের নিয়মিত কাস্টমার। সেই সুবাদে লুবনাও নাকি মাঝে মধ্যে আমাদের দোকানে পণ্য কিনতে আসে। এই সংবাদ যখন প্রথম শুনি, সে দিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবাকে এবার বিশ্রামে পাঠিয়ে আমি নিয়মিত দোকান দেখাশোনা করব।
Ñইয়ে বাবা! আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
Ñবলো।
Ñআপনার বয়স হয়েছে। আপনার এখন রেস্ট নেয়ার সময়। ব্যবসার দায়িত্ব এবার আমাকে দেন।
Ñভেরি গুড।
আমার কথা শুনে বাবার চোখে পানি চলে এলো। পরদিন থেকে আমাদের মুদি দোকানের যাবতীয় পরিচালনার দায়িত্বে জড়িয়ে গেলাম। এসবের একটাই কারণÑ লুবনা। লুবনা যখন কাস্টমার হয়ে এই দোকানে আসবে, তখনই আমি তার সাথে ভাব জমানোর একটা সুযোগ পাবো।
২.
আজ একটি বিশেষ দিন। আমাদের বাগানে পাখি এসেছে, মানে আমাদের দোকানে লুবনা এসেছে। ইশ! কী নাইস দেখতে।
Ñকি চাই খুকি?
Ñহি হি হি। আমার নাম খুকি নয়। লুবনা।
Ñকী চাই লুবনা?
Ñএক কেজি চাল দেন।
Ñচাল! মাত্র এক কেজি?
Ñজি। আব্বু খুব কিপ্টে। প্রতিদিন এক কেজি করে চাল কিনেন।
Ñআব্বুর নামে এভাবে বদনাম করে না লুবনা।
Ñসরি।
Ñনো সরি। তোমার এক কেজি চাল লাগবে, এইতো?
Ñজি। মিনিকেট চালের কেজি কত?
Ñ৫০ টাকা।
Ñএত টাকা?
চালের দাম শুনে লুবনার চোখ কপালে ওঠে গেল। ওর কাছ থেকে দাম কম রাখতে হবে। তাহলে সে কম দাম পেয়ে রোজ এভাবে ক্রেতা হয়ে আসবে। আমিও সুযোগ বোঝে একদিন ওকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেবো।
Ñচাল এক কেজি লাগবে?
Ñভাইয়া, দাম কম রাখা যায় না?
Ñকেজি ৫০ টাকা। ঠিক আছে, তুমি দশ টাকা করে দাও।
Ñওয়াও। থেংক্স। দুই কেজি দেন।
৫০ টাকা কেজি দামের চাল লুবনাকে দশ টাকা করে দিয়ে দিলাম। চালের ব্যাগ নিয়ে সে নাচতে নাচতে চলে গেল। ব্যবসায় আমার লস হয়েছে হোক। লুবনাকে পটাতে আমার যা যা করার, করব।
আধা ঘণ্টা পর খান সাহেব দোকানে এলেন। হাতে বিশাল এক ছালার বস্তা। মুখটা হাসি হাসি করে আমাকে বললেনÑ কেজি দশ টাকায় যে চালটা আমার মেয়েকে দিয়েছো, সেখান থেকে ত্রিশ কেজি চাল দাও তো!
ত্রিশ কেজি! দশ টাকা করে! মাথায় যেন আমার আকাশ ভেঙে পড়ল। খান সাহেব তো ব্যবসায় লালবাত্তি জ্বালাতে এসেছেন। তার মেয়ের কাছ থেকে কম দাম রেখেছি অন্য উদ্দেশ্যে।
Ñআঙ্কেল, ওটার দাম ৫০ টাকা।
Ñ৫০ টাকা? আমার মেয়ে লুবনাকে তো দশ টাকা করে দিলে।
Ñইয়ে মানে...
Ñদাও দাও। জলদি দাও।
হায় আল্লাহ্, কী হবে এখন? এত বড় লস কিভাবে দেই! এই রকম ঘটনার মুখোমুখি হবো, এটা জানলে খাতির করার জন্য লুবনাকে ৫০ টাকা দরের চাল দশ টাকায় দিতাম না।


আরো সংবাদ



premium cement