২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ফেসবুকীয় প্রেম মেয়ের অ্যাকাউন্টে মা!

-

আজকাল স্টুডেন্ট ও টিচারের রিলেশন খুবই নিকটবর্তী। হোম টিউটর হলে তো কথাই নেই। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে টিচাররা স্টুডেন্টদের বাড়ির হাঁড়ির খবরটাও জেনে নেয়। স্টুডেন্টরাও স্যারের আহ্লাদে ভাবখানায় গলে পড়ে যেন স্যার তাদের ফ্যামিলি মেম্বার!
স্টুডেন্ট পড়াতে পড়াতে এই রকম ফ্যামিলি মেম্বার থেকে স্টুডেন্টের ক্লোজ ফ্রেন্ড হয়েছে কত যে হোম টিউটর, তার শুমারি নেই। এ দলের একজন গিট্টু মিয়া ওরফে গিট্টু স্যার। ক্লাস সেভেনে পড়–য়া স্টুডেন্টও এখন তার ফেসবুক ফ্রেন্ড! গিট্টু স্যার আজ পড়াবেন না, এ খবর আর কল করে বলতে হয় না, ফেসবুকেই বলা হয়ে যায়। স্টুডেন্টও স্যারের ফেসবুকের চেকিং দেখে বুঝে নেয় স্যার মিটিংয়ে নাকি ডেটিংয়ে, পার্কে নাকি মার্কেটে।
গিট্টু মিয়া ওরফে গিট্টু স্যার স্টুডেন্টদের পড়ায় ভালো। হাসি-তামাশা দিয়ে স্টুডেন্টদের মন জয় করে রাখেন। এ সুযোগে স্টুডেন্টদের বাড়ির হাঁড়ির খবর রাখার ব্যাড হ্যাবিটটা ছাড়তে পারেন না। একদিন স্টুডেন্টদের টাইমলাইনে চাচাতো বোনের সাথে উঠানো দারুণ সেলফি গিট্টু স্যারের চোখে পড়ে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকেন, যেকোনো মূল্যে এর সাথে ফেসবুক ফ্রেন্ড হতে হবে। কিন্তু স্টুডেন্টদের কাছে তো আর বলা যায় না, ‘তোমার চাচাতো বোনের ফেসবুক আইডির লিংক দাও।’ তাই গিট্টু স্যার ছলেবলে কৌশলে স্টুডেন্টদের বলে, ‘তোমার আপু কি ফেসবুক চালায়?’
স্টুডেন্ট তো ভীষণ ফ্রি। তাই ‘হুম’ বলতে বলতে প্রোফাইল লিংকটি পাঠিয়ে দেয়। ‘স্যার, আমি জানি আপনি কি চাচ্ছেন। ছবিতে লাভ রিয়েক্ট দেখেই বুঝেছি।’
এ যেন স্যার চাইলেন পানি, পেলেন শরবত! ‘বাহ! এই না হলে তুমি আমার স্টুডেন্ট।’
‘সবই ঠিক আছে, স্যার। পড়া না পারলে আম্মুকে কিন্তু নালিশ দেয়া যাবে না।’
‘ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, খোকা। তুমি শুধু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা একসেপ্ট করতে বল।’
তারপর থেকে গিট্টু স্যারের সাথে স্টুডেন্টের চাচাতো বোন বিউটির ফেসবুক ফ্রেন্ডশিপ হয়। দু-এক দিনের মধ্যে চ্যাটিং শুরু হয়। একে অপরে পরিচিত হয়। তারপর থেকে রকেট গতিতে এগোতে থাকে তাদের ফেসবুক চ্যাটিং। কত কথাই না চলে তাদের মধ্যে। মেকআপ করে বিউটি ফেসবুকে ছবি আপলোড দেয়। গিট্টু স্যার কমেন্ট করেন, ‘নাইস পিকচার’, ‘হেব্বি লাগছে’ ইত্যাদি। গিট্টু স্যার এসব রোমান্টিক ছবি দেখে লোভ সামলাতে পারেন না। মেসেঞ্জারে আরো ছবি চেয়ে বসেন। সাথে সাথে পেয়ে যায়। তারপর থেকে ভাবতে থাকেন, মেয়েটি বোধহয় পটে গেছে। নইলে চাহিবামাত্র ছবি দেয় কেন?
ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রেম নিবেদন করা এখন খুবই ইজি ব্যাপার। রাজি হলে ‘লাভ রিয়েক্ট’ দিতে হয় আর রাজি না হলে ‘বল্ক’ মেরে গুষ্টি উদ্ধার করতে হয়, এটাই ফেসবুকীয় প্রেমের স্টাইল। ছ্যাঁকা খাওয়ার দিন আর নেই। রাজি থাকলে ‘একসেপ্টেড’, রাজি না থাকলে ‘রিজেক্টেড’। এমন সুযোগ ব্যাচেলর গিট্টু স্যার হাত ছাড়া করতে চায় না। তাই একদিন বিউটিকে প্রেম নিবেদন করে বসেÑ ‘বিউটি, আই লাভ ইউ।’
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে ওদিক থেকে পজেটিভ উত্তর চলে আসেÑ ‘আই লাভ ইউ টু।’
আর যেন শতশত ‘লাভ ইমোজি’ মেসেঞ্জারে উড়তে থাকে। ফেসবুকে তাদের চ্যাটিং, ফটো শেয়ারিং বেশ জমে ওঠে। এভাবে মাস যায়, বছরও যায়। তবে আর কতদিন অনলাইনে প্রেম?
একবার গিট্টু স্যার তার ফেসবুক প্রেমিকা বিউটিকে ডেটিংয়ের প্রস্তাব দেয়Ñ ‘অনেক তো চ্যাটিং হলো, চল না একদিন ডেটিং করি। পার্কে গিয়ে দু’জনে সেলফি তুলি। রেস্টুরেন্টে চেকিং দেই। মার্কেটে গিয়ে শপিং করি।’
গিট্টু স্যারের প্রপোজে সাথে সাথে বিউটি রাজি হয়ে যায়Ñ ‘ইয়েস, এনজয় হবে। লেটস মিট, জানু।’
তো প্ল্যান অনুযায়ী, গিট্টু স্যার ও তার ফেসবুক প্রেমিকা মিট করতে আশিয়ান সিটির ‘রেড রোজ’ পার্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দু’জনই মেসেঞ্জারে ‘প্ল্যানিং রিমেইন্ডার’ দিয়ে রাখে। কথা মতো, গিট্টু স্যার টাই, কোট, প্যান্ট পরে পার্কে গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর ভাবেন, কখন যে আসবে তুমি? কখন যে একটা সেলফি তুলব। ফেসবুকে আপলোড করে শতশত লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পাবো।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। তবুও বিউটি আসে না। গিট্টু স্যার বিউটিকে একবার অনলাইনে খোঁজেন, আরেকবার রাস্তায় খোঁজেন, ওই বুঝি শাড়ি পরে আসছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর মেসেঞ্জারে একটা ভিডিও কল আসে। গিট্টু স্যার আনন্দের সাথে কল রিসিভ করতেই অর্ধবয়স্ক এক মহিলার ছবি ও কণ্ঠ ভেসে আসে। গিট্টু স্যার ভয় পেয়ে যায়। মেয়ের কারসাজি বুঝি মা ধরে ফেলেছে। কল কেটে দেয়। আবার কল আসে। এবার গিট্টু স্যার রিসিভ করেন। বলেন, ‘আপনি কে?’
‘এত দিন প্রেম করেও আমাকে চিনতে পারছ না, আমি তোমার জিএফ হই, বিউটির আম্মা।’
‘আপনি মেয়ের আইডিতে কি করেন?’
‘এটা আমার মেয়ের আইডি হলেও আমিই ইউজ করি। সব কিছু আমার মেয়ের। ইউজার শুধু আমি।’
‘তাহলে এতদিন আপনিই আমার সাথে প্রেম করেছেন?’
‘জ্বি, করেছি। দোষের কি তাতে? কোনো দিন জানতে চাও নি, আমি কে? আর ফেসবুক প্রেমের ভ্যালু আছে না কি আবার?’
‘না, মানে, ইয়ে।’
‘অনেক পরে হলেও বুঝতে পেরেছ। মেয়ের ডিউটা পালন করলাম। কি দেখা করতে চাও আমার সাথে? সেলফি তুলবা না?’
‘না, চাচী মাফ চাই। আমি আর ফেসবুকে প্রেম করব না। মেয়ের অ্যাকাউন্ট মা চালায়, এটা জানা ছিল না। কি যুগ আইলো রে!’
তারপর গিট্টু স্যার স্টুডেন্টদের চাচীকে ব্লক মেরে দেয়। পড়ার সময় একদিন স্টুডেন্ট স্যারকে জিজ্ঞেস করে, ‘স্যার বিউটি আপুর লগে চ্যাটিং কেমন চলছে?’
গিট্টু স্যারের গলায় যেন চা-নাশতা আটকা পড়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
নিজ্জর-হত্যায় অভিযুক্ত ৪ ভারতীয়ের বিচার শুরু কানাডায় ফলোঅন এড়ালেও ভালো নেই বাংলাদেশ আইপিএল নিলামের প্রথম দিনে ব্যয় ৪৬৭.৯৫ কোটি রুপি : কে কোন দলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে ট্রাম্প 'ভীষণ চিন্তিত' নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং

সকল