২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সোনিয়ার বোন মুনিয়া

-

এই যে আমি রোজ পদিপাড়ায় ব্যাকুল হয়ে ছুটে যাই। এর প্রধান কারণ সোনিয়া। মেয়েটাকে ভীষণ ভালো লাগে। পদিপাড়া আমাদের পাশের গ্রাম। এই গ্রামের চৌধুরী বাড়ির চৌধুরী কন্যা সোনিয়া। দেখতে ফুলপরীর মতো। সোনিয়াকে প্রথম দেখি এক হোমিও দোকানে। গলায় সেদিন মাছের কাঁটা বিঁধেছিল আমার। উল্কার মতো ছুটে গেলাম রোগ মুক্তির জন্য। সেখানে সোনিয়াও এসেছে ওর মায়ের সাথে। হোমিও ডাক্তার আমিন উল্লার সাথে সোনিয়ার মায়ের কথপোকথনে দূর থেকে জানতে পারি সোনিয়াদের বাড়ি পদিপাড়া চৌধুরী বাড়ি। ওই বাড়ি আমি চিনি।
সেদিন রাতেই বুঝে গেলাম আমি সোনিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি। পরদিন ভোরে মর্নিং ওয়াকের ছলে পদিপাড়ায় যাই। চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে উঁকিঝুঁকি মারি সোনিয়াকে এক পলক দেখার জন্য।
তারপর থেকে রোজ ভোরে মর্নিং ওয়াকের ছলে পদিপাড়া চৌধুরী বাড়ির সামনে যাওয়াটা আমার স্বভাবে দাঁড়ায়। কিন্তু যে কারণে আমার এই গোপন সাধনা চলতে থাকল, সেই সোনিয়ার একদিনও দেখা পেলাম না। মাঝে মধ্যে সোনিয়ার ক্লাস ফাইভ পড়–য়া বোন মুনিয়াকে বাগানের ফুলের টবে পানি ঢালতে দেখা যায়।

২.
আমি এখন শুধু রোজ ভোরে নয়, রোজ বিকেলেও পদিপাড়া চৌধুরী বাড়ির সামনে যাই। আগের নিয়মে চৌধুরী বাড়িতে উঁকিঝুঁকি মারতে মারতে একদিন মনে হলো চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করলে মন্দ হয় না। পানির তৃষ্ণার্ত পথচারীর পরিচয় দিয়ে চৌধুরী বাড়িতে ঢুকতে যতটুকু সাহসের দরকার, ততটুকু সাহস আমার আছে।
সেই সাহস নিয়ে আজ বিকেলে চৌধুরী বাড়িতে ঢুকলাম। পুরনো আমলের বিশাল দালানের দরজা বন্ধ। বন্ধ দরজায় টোকা দিতেই যে দরজা খুলল, সে সোনিয়া নয়, সোনিয়ার ছোটবোন মুনিয়া। মুনিয়া কচি কণ্ঠে বলল, ‘কি চাই ভাইয়া?’
ভীতু গলায় বললাম, ‘এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম, পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। এক গ্লাস পানি দেবে?’
মিষ্টি হেসে মুনিয়া বললো, ‘অবশ্যই।’ বলেই সে ভেতরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর পানি ছাড়া ফিরে এসে বলল, ‘ভাইয়া, ফালুদা খাবেন? ঘরে ফালুদা আছে। আমার সোনিয়া আপু বানিয়েছে।’
ফালুদার কথা শুনে জিভে পানি চলে এলো। তার ওপর সোনিয়ার হাতে বানানো। আমি না জানার ভান করে বললাম, ‘তোমার আপুর নাম সোনিয়া?’
‘জি।’
‘আপু এখন কোথায়?’
‘বাসায় কেউ নেই। আপু আর আম্মু পার্লারে গেছে।’
‘ও আচ্ছা। যাও ফালুদা আনো।’
মুনিয়া ফালুদা আনতে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম দরজার এপারে। মুনিয়া আমাকে একবারও ভেতরে যেতে বলেনি। বলবে কী করে! ও তো এখনো ছোট। জ্ঞান বুদ্ধি এখনো ফোটেনি।
মুনিয়া ফালুদা নিয়ে এলো। আমার বিস্মিত চোখ তাকিয়ে রইলো মুনিয়ার আনা বড় সাইজের এক বাটি ফালুদার দিকে। ও আল্লাহ, এত সব ফালুদা আমি একা খাবো! ভাবা যায়!
অভদ্রের মতো দুই মিনিটে সবটুকু ফালুদা খেয়ে সাবাড় করে ফেললাম। আহ, সোনিয়ার হাতের বানানো ফালুদা অসাধারণ হয়েছে।
‘ইয়ে...আমি তো বাটির সবটুকু ফালুদা খেয়ে ফেলেছি। তোমাদের কারো জন্যই রাখিনি।’
‘আসলে এগুলো আমাদের জন্যই রেখেছিলাম।’
‘সব তো আমাকেই দিয়ে দিলে! তোমরা খাবে কি?’
‘আসলে এগুলোর ভেতরে টিকটিকি পড়েছে তো, তাই আপনাকে দিয়ে দিলাম।’
‘ হোয়াট? কি বললে তুমি? এগুলোর ভেতরে টিকটিকি...’
‘জি।’
‘ওয়াক থু।’
‘হিহিহি।’
মুনিয়া হাসছে। ইচ্ছে করছে এখন ওকে জোরসে থাপ্পড় মারি। ও আমাকে টিকটিকি পড়া ফালুদা খাইয়েছে। রাগ বাড়লো আমার। রাগের তোড়ে হাতের বাটিটা জোরসে আছাড় মারতেই সেটা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেল।
‘সেকি! আপনি বাটিটা ভেঙে ফেললেন? মিনু এখন কিসে করে খাওয়ার খাবে?’
‘মিনু কে?’
‘আমাদের পোষা বিড়াল। সোনিয়া আপু ওর নাম রেখেছে মিনু। মিনুকে আম্মু এই বাটিতে করে খাবার দেয়।’
‘ও আল্লাহ, যে বাটিতে করে ফালুদা খেলাম, সে বাটিতে করে বিলাই খাবার খায়?’
‘বিলাই নয়। বলুন মিনু।’
‘এই মেয়ে, এক চড় মেরে তোর...’
আমার কথা শেষ না হতেই মুনিয়া ভয় পেয়ে ঝড়ের বেগে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিড়ালের খাবারের বাটিতে করে টিকটিকি পড়া ফালুদা খেয়ে আমার এখন বমি আসছে। যেন আমি এখনই মাথা ঘুরে পড়ে যাবো।


আরো সংবাদ



premium cement