২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এ যুগের রাখাল বালক

-


বনের কোল ঘেঁষে বেশ কয়েকটি ক্ষেত রয়েছে। এই ক্ষেতগুলোতেই রয়েছে গরু-ছাগলের উৎকৃষ্ট খাবার ঘাস। রাখাল বালক নিয়মিত গরু নিয়ে এখানে আসে। আগের কালের রাখাল বালকেরা একটা বাঁশের বাঁশি নিয়ে গরু চরাতে নিয়ে আসত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশি বাজাত। রাখাল বালকের বাঁশির সুরের মূর্ছনায় ভিন্ন রকম পরিবেশ বিরাজ করত। এখন যুগ পালটে গেছে এখন আর বাঁশির চল নেই। যান্ত্রিকতার এ যুগে সবার হাতে মোবাইল উঠেছে। রাখাল বালকও তার ব্যতিক্রম না। তিন মাসের বেতন জমিয়ে সে একটা চাইনিজ মোবাইল কিনেছে। এই মোবাইল নিয়েই তার দিন রাত চলে যায়। মোবাইলে সেলফি তুলতেই সে খুব ব্যস্ত থাকে। ইদানীং মুখ বাঁকা করেও ছবি তোলা সে শিখে গেছে। এ নিয়ে অবশ্য তার মা-বাবার আফসোসের শেষ নেই। বেশ কয়েকদিন আগে রাখাল বালক ফেসবুকে আইডিও খোলে। রাখাল হলে হয়েছে তাই বলে কি তার ফেসবুক আইডি থাকবে না? উত্তরপাড়ার মতিনের কাছে গিয়ে সে একটা ফেসবুক আইডি খুলে নেয়। মতিনের সাথে তার সখ্য অনেক আগে থেকেই। রাখাল বালক মনে করেÑ মতিন দুনিয়ার সব কিছু জানে। তার কাছে এসে অনেকে ফেসবুক আইডি খুলে নেয়। রাখাল বালক কি নামে আইডি খুলবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। তার নাম বদরুল। সবাই তাকে বদু বলে ডাকে। আবার সমবয়সী ছেলেমেয়েগুলো বদও বলে। এ নামেতো আইডি খোলা যাবে না। অনেক ভাবার পরও কোনো নাম না পেয়ে মতিনের দ্বারস্থ হলো। মতিন অনেক চিন্তা করে তার নাম দেয় প্রিন্স বাদল। বদরুল থেকে প্রিন্স বাদল নামটা খারাপ না। রাখাল বালক প্রিন্স বাদল নামে ফেসবুক চালাতে লাগল। সকাল-বিকেল কয়েকবেলা করে সেলফি দেয়া তার রুটিনে পরিণত হলো। গরুর সাথে বেশ কিছু সেলফি রয়েছে তার। এগুলো অবশ্য ফেসবুকে দেয়া যাবে না। ক্ষেতে অনেকগুলো গরু একত্রে ঘাস খায়। তাদের পেছনে রেখে রাখাল বালক একটা ছবি তোলে। সেই ছবিটা সে ফেসবুকে আপলোড করে। আর ভুল বানানে লিখে দেয় আমাদের গরুর খামারের সামনে সেলফি। পরিচিত লোকজন তার পোস্টে হা হা রিঅ্যাক্ট দেয়। এরই মধ্যে এঞ্জেল জারিন নামের এক মেয়ের সাথে টুকটাক চ্যাট হয়। এই জারিন হলো উত্তরপাড়ার জরিনা। যে কি না মতিনের ক্রাশ। মতিন বিষয়টা জানার পর রাখাল বালকের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ার চিন্তা করল। হঠাৎ করে রাখাল বালক দেখল সে তার ফেসবুকে লগ ইন করতে পারছে না। অন্য একজনের আইডি থেকে ঢুকে দেখে তার নাম চেঞ্জ করে বদু মিয়া করে দেয়া হয়েছে। তার মানে তার আইডি হ্যাক হয়েছে। তাহলে কে করল এই কাজ? মতিন ছাড়া এ কাজ কেউই করেনি। কারণ আইডি খোলার সময় মতিনই পাসওয়ার্ড দিয়েছিল। রাখাল বালক মনের দুঃখে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দিলো। মনে মনে সঙ্কল্প করল মতিনকে একটা শাস্তি দিতে হবে। রাখাল বালক হঠাৎ করে চিৎকার করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন চলে আসল।
- কি হয়েছে রে বদরুল? এরকম চিৎকার করতেছিলি কেন?
- কি হয় নাই সেটা বলেন।
- খুলে বল কি হয়েছে।
- উত্তরপাড়ার মতিন এসে আমাকে মেরে চলে যায়।
- কেন মেরেছে?
- সে একটা মেয়েকে ইভটিজিং করে আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে মেরে চলে যায়।
- মতিন কাজটা ভালো করেনি।
রাখাল বালকের গায়ে কোনো আঘাতে চিহ্ন না থাকলেও সে মতিনকে দোষ দিয়ে গেল। লোকজন গিয়ে মতিনকে বেশ ধমক দিয়ে এলো। মতিন বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছে। বদুর আইডি হ্যাক করায় সে মতিনকে শাস্তি দিতে চাচ্ছে।
কয়েকদিন পর রাখাল বালক এরকম চিৎকার করতে লাগল। লোকজন আবার এলো। আসার পর রাখাল বালকের একই অভিযোগ মতিনের প্রতি। মতিন নাকি সুযোগ পেলেই তাকে মেরে যায়। এখন আরো বেশি করে মেরেছে কারণ এলাকাবাসী তাকে ধমক দিয়ে এসেছে। এই ঘটনার পর এলাকায় বিচার বসানো হলো। মতিনকে বেশ শাসানো হলো। রাখাল বালক এ অবস্থা দেখে বেশ আনন্দ পেল। সে এরকম আরো কয়েকদিন করল। এরই মধ্যে লোকজন তার ভণ্ডামি ধরে ফেলল। এদিকে মতিন খুব ক্ষেপে গেল। মতিন একদিন সত্যি সত্যি দলবল নিয়ে রাখাল বালককে উত্তম মধ্যম দিতে লাগল। রাখাল বালক চিৎকার করতে লাগল। সবাই ভাবছে এটা তার ফাজলামি। তাই কেউই আর এগিয়ে এলো না। এদিকে রাখাল বালকের চেহারার ডিসপ্লে চেঞ্জ হয়ে গেছে। মিথ্যার ফলাফল যে খুব খারাপ হয় তা আরেকবার প্রমাণিত হলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement