২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নায়িকার নাম কনিকা

-

জয়কে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো কারণে তার আজ মন ভালো। কাছে গিয়ে বলি, ‘ব্যাপার কি? এতো হাসি হাসি মুখ!’
উচ্ছ্বাসে জয় বলল, ‘মামা, বইমেলায় প্রকাশিত আমার প্রথম উপন্যাস ‘শেষ রাতে’ পাঠক মহলে দারুণ সাড়া ফেলেছে। যারা বইটি কিনেছেন, সবাই ফেসবুকে আমাকে রিভিউ দিচ্ছে।’
হেসে বললাম, ‘নিশ্চয়ই ভালো লিখো।’
জয় তার ব্যাগ থেকে শেষ রাতে উপন্যাসটির এক কপি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘মামা, এটা আপনি পড়বেন আর সাত দিনের মধ্যে আমাকে রিভিউ দেবেন, প্লিজ।’
চট করে বললাম, ‘এটা কী এমন কঠিন কাজ! দাও বইটা।’
বইটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে জয় হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
কি মুশকিলে পড়লাম। কথায় কথায় বইটা কেন যে রাখতে গেলাম! আমার ধৈর্য কম। বই পড়ার অভ্যাস নেই। তার ওপর এই উপন্যাস পড়বো কখন! সাতদিন পর তো জয় বইয়ের রিভিউ চাইবে। তখন কি বলব!
হঠাৎ রোজী আপাকে মনে পড়ল। আমার রোজী আপার বই পড়ার অভ্যাস আছে। এই বই রোজী আপাকে পড়তে দেবো। পড়া শেষ হলে তার কাছ থেকে গল্পের কাহিনী সংক্ষেপে জেনে নিয়ে জয়কে শোনাবো, যা হবে আমার দেয়া ওর বইয়ের রিভিউ।
জয়ের শেষ রাতে উপন্যাস দেখে রোজী আপা বললেন, ‘এটাতো পড়ে দেখতে হবে।’
বললাম, ‘সাত দিনের মধ্যে পড়ে দিতে পারবে?’
হি হি করে হেসে রোজী আপা বললেন, ‘এটা কোনো ব্যাপার হলো?’
২.
চারদিন পর রোজী আপাকে বললামÑ
Ñপড়েছিস?
Ñপড়া শেষ। শেষ পৃষ্ঠায় নায়িকা অহনার মৃত্যু মানতে পারেনি। গল্পটা খুব সুন্দর।
Ñধন্যবাদ আপা।
Ñধন্যবাদ কেন?
Ñপড়ার জন্যে।
Ñখেয়াল করেছি তুই বইটা দেয়ার পর থেকে আমার পড়া না পড়া নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। ব্যাপারটা কি?
Ñতুই বুঝবি না আপা।
Ñযা ভাগ।
সন্ধ্যায় রাস্তায় দেখা হলো জয়ের সাথে। বাজার থেকে ফিরছে সে। হাতে বাজারের ব্যাগ।
Ñমামা, আমার বইটা পড়েছেন তো?
Ñপড়া শেষ।
Ñবলেন কি! চারদিন যেতে না যেতে?
Ñহ্যাঁ। খুব সুন্দর লিখেছো। গল্পের নায়িকা অহনার মৃত্যু আমাকে কাঁদিয়েছে।
Ñঅহনা!
Ñহ্যাঁ। উপন্যাসের নায়িকার নাম।
Ñবলেন কি! আমার উপন্যাসের নায়িকার নাম তো কনিকা। আর সে মারা যায়নি।
Ñইয়ে মানে...
Ñছিঃ মামা। বইটি না পড়ে এভাবে মিথ্যে না বললেও পারতেন।
মুখ বেজার করে জয় চলে গেল। ব্যাপার কি! রোজী আপা না বলছেন নায়িকার নাম অহনা আর সে মারা যায়। তাহলে জয় এসব কি বলছে! নায়িকার নাম আসলে কি? অহনা না কনিকা!

৩.
বাসায় এসে দেখি রোজী আপা স্টার জলসায় মগ্ন।
Ñআপা, সত্যি করে বল তো, তুই কি উপন্যাসটা পড়েছিস?
Ñনা। আজ রাত থেকে পড়া শুরু করব।
Ñতাহলে মিথ্যে বললি কেন?
Ñফান করে বলেছি! লক্ষ্য করেছি তুই বইটা আমার পড়া নিয়ে কেন যেন একটু অন্যরকম। তাই ফান করে বলেছি পড়া শেষ করে ফেলেছি, যাতে তোর মধ্যে সেই অন্যরকম কিছু আর না দেখতে হয়!
রোজী আপাকে পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করলাম। শুনে তার ঘর কাঁপানো হাসি বাড়তে লাগল, যা দেখে রাগে আমার গা জ্বলতে শুরু করে। জয়ের কাছে আমি মিথ্যেবাদী হয়ে গেলাম।


আরো সংবাদ



premium cement