শতভাগ জ্যাম মুক্ত যুক্ত ঢাকা
- এস আর শানু খান
- ২১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
শফি মিয়ার বহু দিনের শখ ঢাকায় একটু মন খুলে ঘোরাঘুরি করবে। ঢাকায় সফর করে অনেক জিনিস নিজের চোখে দেখবে। এগারো বছর ধরে প্ল্যান প্রোগ্রাম করে এই বইমেলার বারো, ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ছিলেন। ঢাকায় তার এক ভাতিজা ছাপাখানায় বিরাট এক চাকরি করেন। সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা-১২টা পযর্ন্ত ডিউটি করা লাগে। ছুটি নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে শুক্রবারেও অনডিউটিতে থাকতে হয়। তারপরও রক্তের চাচা ঢাকা এসেছেন ভাতিজা অনেক কষ্ট করে ছুটি ম্যানেজ করেছেন দুই দিনের। আগেভাগে গিয়ে বসে আসেন গাবতলীতে। চাচা নতুন ঢাকা আসতেছেন। কোথাও চিনে না। বহু অপেক্ষা প্রতিক্ষার পরে চাচা এসে নামলেন। চাচা নেমে বললেন ভাতিজা সারা রাস্তা ফাঁকা ছিল শেষের দিকে এসে সেই জ্যাম। গাড়ি আর এগোই না। ভাতিজা বলল চাচা আজকে বৃহস্পতিবার তো ডিউটি শেষে সবাই বাড়ি ফিরছে। এজন্য একটু জ্যাম হয়েছে। বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠল। তখনো রাস্তায় জ্যাম। শফি মিয়া বলল ভাতিজা এখনো জ্যাম কমল না রাত তো অনেক হলো। ভাতিজা উত্তর দিল, চাচা এখন একটু জ্যাম হবে। কারণ বড় লোকেরা পরিবার নিয়ে বের হচ্ছে মার্কেট করতে, কেউ বের হচ্ছে পার্টিতে। তাই একটু জ্যাম হবে এখন। রাত ১২টায় ভাতিজার রুমে পৌঁছাল শফি মিয়া। শুক্রবার সকালে বের হলেন বইমেলার উদ্দেশে। বাসা থেকে বের হয়েই রাস্তায় পড়ল একটা বিরাট জ্যাম। শফি মিয়া ভাতিজাকে বলল, কিরে তুই না বললি শুক্রবারে জ্যাম থাকে না। ভাতিজা বলল, চাচা শুক্রবারতো স্কুল কলেজ বন্ধ, সরকারি অফিস আদালত বন্ধ তাই তো ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে কেউ বিভিন্ন পার্কে যাচ্ছে। কেউবা আমাদের মতো বইমেলায় যাচ্ছে। আজই বইমেলা শেষ তো তাই। আর কেউ বা হুদাই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে হর্ন বাজিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। গাড়িতে বসে থেকে অবশেষে বইমেলায় পৌঁছাল। শফি চাচা বইমেলায় গিয়ে দেখল। পাঠকেরা সবাই বই না কিনে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। আর লেখকেরা হাতে কলম নিয়ে অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য ছটফট করে বেড়াচ্ছে। আর প্রকাশকেরা শুধু মোবাইলে ক্যালকুলেটর বের করে হিসাব মেলাচ্ছে লাভ লসের। যেমনটা ভেবেছিল শফি মিয়া তেমনটা মনে হলো না বইমেলাকে। কথায় আছে না দূর কাঁশবন ঘন দেখা যায়। বইমেলা থেকে বেরিয়েই আবার পড়ল জ্যামে। তখন বিকেল। ভাতিজা চাচার দিকে তাকিয়ে বলল চাচা সামান্য জ্যাম হবেনে। এখন বড় লোকেরা ঘুরতে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে তো তাই একটু আকটু জ্যাম হতে পারে। একটু আকটু জ্যামের দরুণ রাত আড়াইটায় পৌঁছাল বাসায়। এরপর দিন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য উদ্ধত হলো। ভাতিজা অনেক চেষ্টা করল চাচাকে আটকাতে। কেননা তার এখনো একদিন ছুটি অবশিষ্ট রয়েছে। চাচাকে ঘুরাবে বলে ছুটি নিয়েছিল। কিন্তু চাচা কোনোভাবেই রাজি নয়, আর থাকতে। ঢাকা ঘুরার শখ তার মিটেছে হাড়ে হাড়ে। শনিবার বাসা থেকে বের হলো সকাল সকাল। বাসা থেকে চাচাকে এগিয়ে দিতে বের হলো ভাতিজাও। গাবতলী যেতই বেলা ২টা গড়িয়ে গেল। ভাতিজা চাচাকে বললো চাচা আজ শনিবার তো ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ খোলা তাই তো আজ একটু জ্যাম থাকবেই। চাচা রেগে গিয়ে খানিকটা বিরক্তির সাথে বলল, আরে বাবু এ সময় এজন্য জ্যাম, ও সময় ওজন্য জ্যাম। জ্যাম বাদে তো এক মুহূর্তও পেলাম না। জ্যাম থাকে না কোন সময় একটু বলেক দেহি শুনি। ছাতার শহর ঢাকা শহর। জ্যামের শহর ঢাকার শহর। সংবাদে খালি শুনি জ্যাম মুক্ত হয়েছে রাজধানী। এখন তো দেখি শতভাগ জ্যামযুক্ত শহর ঢাকা শহর।