গোশত
- জোবায়ের রাজু
- ১৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
আব্বা যে আমাকে চরম ভালোবাসেন, তার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া গেল আমাদের নতুন হোটেল গড়ার মধ্য দিয়ে। বাজারে নতুন করে আমাদের খাবারের হোটেল দিয়েছেন তিনি। হোটেলের নাম রেখেছেন আমার নামেÑ রঞ্জু হোটেল।
হোটেল ব্যবসা আমাদের অল্প দিনে বেশ সুনাম কাড়ে। দক্ষ বাবুর্চিদের তৈরি করা মুখরোচক খাবার খেয়ে কাস্টমারদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল। তাই আমাদের হোটেলে প্রতিদিন জনতার ভিড় চোখে পড়ার মতো। হোটেলের কর্মচারী মোট ১৫ জন, যারা খাবার পরিবেশনে বেশ ভূমিকা রাখে। ক্যাশিয়ার পদে আব্বা আমাকেই নিয়োগ করেছেন।
আমাদের হোটেলে গরুর গোশত রান্না করেন বাবুর্চি মাহবুব ভাই। তার রান্না করা গোশত সত্যি অসাধারণ হলেও মাঝে মধ্যে কাস্টমারদের অভিযোগ ওঠে যে, গোশত নাকি বেশ শক্ত থাকে। এসব অভিযোগ শুনে আব্বা কড়া গলায় মাহবুব ভাইকে বলে দিয়েছেন, ‘গোশত শক্ত থাকে কেন? আর যেন কারও কাছ থেকে এই অভিযোগ না শুনি।’
মাহবুব ভাই নিচু গলায় বললেন, ‘ঠিক আছে।’
তার পরও মাঝে মধ্যে অনেক কাস্টমারকে বলতে শুনিÑ রান্না ভালো। কিন্তু গোশত খুব শক্ত। পাতিল থেকে দ্রুত নামানো হয়েছে।
২.
আজ শনিবার। দুপুরের পর থেকে হোটেলে উপচে পড়া ভিড়। বিকেল বেলায় এক ভদ্রলোক এলেন ভাত খেতে। হোটেল বয়দের এনে দেয়া ভাতÑ গোশত ভক্ষণে ভদ্রলোক মনোযোগী হলেও কিছুক্ষণ পর তিনি গর্জে উঠে বললেন, ‘কে রান্না করেছে এসব! খাওয়া যায় না।’
আমি ভদ্রলোকের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘কী সমস্যা আংকেল?’
হাইপাওয়ারের চশমার ভেতর দিয়ে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘এই গোশত কে রান্না করেছে! এত শক্ত।’
ব্যাপার কী! আজো মাহবুব ভাই গোশত শক্ত রেখেছেন নাকি! কই, আজতো কেউ এই অভিযোগ তোলেনি। ভদ্রলোক বয়সভারী মানুষ। নিশ্চয়ই দাঁতের শক্তি কমে গেছে। গোশত শক্ত হলে নিশ্চয়ই অন্যরাও বলত। ভদ্রলোককে বললাম, ‘আংকেল, গোশত ঠিক আছে। শক্ত নয়।’
তিনি ক্যাচক্যাচ করে বললেন, ‘শক্ত নয়! খেয়ে দেখুন মিয়া।’
গোশত শক্ত না নরম, এটা পরীক্ষা করতে আমি ভদ্রলোকের খাবারের প্লেট থেকে এক টুকরো গোশত খেয়ে দেখলাম সেটা যথেষ্ট নরম। ভদ্রলোককে বললাম, ‘আংকেল, গোশত তো নরমই।’
তিনি বললেন, ‘ওই টুকরো আমি যে পাঁচ মিনিট ধরে মুখে ভরে চিবিয়ে চিবিয়ে নরম করেছি, ওটা তাতেই নরম হয়ে গেছে।’ সর্বনাশ! ভদ্রলোক বলে কী! আমি গোশতের যে টুকরোটি খেয়েছি, সেই টুকরো তিনি মুখে ভরে পাঁচ মিনিট চিবিয়েছেন! ওয়াক থু! কি হবে এখন! গোশত তো এতক্ষণে আমার পেটে চলে গেছে। হ