২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আমায় ডেকেছিলেন প্রকাশক

-

ফাল্গুন প্রকাশনীর মালিক সোহাগ খান আমার কবিতার পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করে বললেন, ‘আমি আগে কবিতা পড়ে দেখি। ভালো হলে বই করব। আপনার ফোন নাম্বার দিয়ে যান। যথাসময়ে কল করে ফাইনাল নিউজ জানাব।’ আমি আনন্দে শিহরিত হয়ে সোহাগ খানকে আমার ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। তবে সামান্য টেনশন হচ্ছে বই নিয়ে। কবিতাগুলো যদি তার পছন্দ না হয়, যদি বই না করেন, তবে কি আমার লেখক হওয়ার বাসনা অপূর্ণ থেকে যাবে! মন বলছে, সোহাগ খান কবিতাগুলো পছন্দ করবেন।
দেশজুড়ে চলছে বইমেলা। আজকাল ফেসবুকে ঢুকলেই দেখি ওমুকের তমুক বই বের হয়েছে। ভক্তরা সেসব বই কিনছেন। মূলত সেসব দেখেই লেখক হওয়ার ইচ্ছে আমাকেও পেয়ে বসেছে। কিন্তু আমি যে লিখতে পারি না। হঠাৎ মনে হলো আল্পনা করিমের কথা। আমার ফেসবুকের এই ভদ্র মহিলা দারুণ সব কবিতা লিখে ফেসবুকে শেয়ার করেন। লেখার হাত বেশ নিখুঁত। কবিতায় কঠিন সব ভাষা ব্যবহার করেন। আমি মন দিয়ে সব পড়ি। লেখক হওয়ার আশা বুনতে গিয়ে মনে হলো আল্পনা করিমের ফেসবুকে পোস্ট করা সেসব কবিতা চুরি করে একটি পাণ্ডুলিপি বানিয়ে আমার নামে চালিয়ে দিয়ে বই করব। আল্পনা করিম তা জানতেই পারবেন না।
শেষ পর্যন্ত আমি তাই করলাম। আল্পনা করিমের টাইমলাইন থেকে ৪৫টি কবিতা সংগ্রহ করে পাণ্ডুলিপি তৈরি করলাম। আমার বন্ধু শুভর সহায়তায় প্রকাশক সোহাগ খানের সন্ধান পেয়ে তার কাছে গেলাম কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে। আজ সোহাগ খানের কাছে সেটা দিয়ে এলাম।

২.
পাণ্ডুলিপি দিয়ে আসার ছয়দিন পর পড়ন্ত দুপুরে আমার ফোনে সোহাগ খানের কল। বেশ আগ্রহ নিয়ে তিনি জানালেন, ‘আপনার কবিতা পড়েছি। বিকেলে একটু আমার অফিসে আসুন।’
আহ! প্রকাশক সাহেব আমাকে ডেকেছেন। তার মানে আমার কবিতা, মানে আল্পনা করিমের কবিতা তার পছন্দ হয়েছে। পছন্দ না হলে নিশ্চয়ই ফোনে বলে দিতেন। যেহেতু ডেকেছেন, তার মানে ধরেই নিয়েছি কবিতাগুলো তার মন ছুঁয়েছে। বই করবেন।
বিকেল বেলায় ছুটলাম প্রকাশকের অফিসে। যাওয়ার সময় গিফট হিসেবে তার জন্য একটি টিশার্ট কিনে নিয়ে গেলাম। গিফট পেয়ে তিনি নিশ্চয়ই খুশি হবেন। শুনেছি প্রকাশকদের সব সময় খুশি রাখতে হয়।
আমি এখন প্রকাশক সোহাগ খানের অফিসে তার সামনে বসে আছি। গিফট আনা টি-শার্টটি তাকে দিলাম। তিনি গ্রহণ করলেন। টেবিলের নিচ থেকে আমার সেই পাণ্ডুলিপি বের করলেন।
Ñ পাণ্ডুলিপির সব কবিতা পড়েছি।
Ñ কেমন হলো?
Ñ ভালো। খুব ভালো।
Ñ ধন্যবাদ।
Ñ এসব আপনি লিখেছেন?
Ñ জি।
Ñ মিথ্যে বলছেন কেন?
Ñ মানে?
Ñ আমি শিওর আপনি আল্পনা করিম নামে একজনের টাইমলাইন থেকে এসব কবিতা সংগ্রহ করে এনেছেন।
প্রকাশকের কথা শুনে আমার বুক ধক করে উঠল। এই গোপন তথ্য তিনি কী করে জানলেন? জাদু আছে নাকি। তার তো এসব জানার কথা নয়। ঘটনা কী!
Ñ চুপ কেন? কিছু বলুন।
Ñ ইয়ে মানে...
Ñ শুনুন, আপনি যার টাইমলাইন থেকে কবিতাগুলো চুরি করে এনেছেন, সেই আল্পনা করিম আমার স্ত্রী। আর কবিতাগুলো আমিই লিখি। আমার স্ত্রী এ কবিতাগুলো তার ফেসবুকে পোস্ট করে। আপনি আমার স্ত্রীর ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন অনেক দিন থেকে।
সোহাগ খানের কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেল। চুরি করা কবিতা নিয়ে এভাবে ধরা পড়তে হবে জানলে লেখক হওয়ার ইচ্ছে বিসর্জন দিতাম। প্রকাশকের চোখের দিকে তাকাতে আমার এখন লজ্জা লাগছে।
সোহাগ খান বললেন, ‘কাজটি ভালো করেননি। এভাবে লেখক হওয়া যায় না।’
তার কথা শুনে আমি অফিস থেকে ঝড়ের বেগে দৌড়ে পালিয়ে এলাম। এই মুখ নিয়ে তার সামনে কিভাবে বসে থাকি!

 

 


আরো সংবাদ



premium cement