ভালোবাসার রঙ
- জোবায়ের রাজু
- ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
সুজানার বাবার চাকরি শেষ। তাই তারা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছে। গ্রামে প্রথম যেদিন সুজানাকে দেখি, মনে মনে বলি, ‘ওমা, এ তো পরীদের থেকেও রূপবতী।’
সত্যিই তাই। তবে সত্যি কথা হলো সুজানাকে প্রথম দেখে আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। আশ্চর্যজনকভাবে সেদিন রাতেই সুজানাকে ফেসবুকে পেয়ে যাই। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে আসতেই দেখি সে আমাকে অ্যাকসেপ্ট করেছে।
তারপর থেকে আমাদের লম্বা লম্বা চ্যাটিং আরম্ভ। কথায় কথায় একদা সুজানাকে বললাম, ‘আই লাভ ইউ।’
অট্টোহাসির ইমো দিয়ে সে লিখল, ‘ভালোবাসা এত সোজা?’
আমি লিখলাম, ‘তুমি চাইলেই সোজা হবে না কেন?’
তারপর থেকে লক্ষ করেছি, সুজানা আমার প্রতিটি পোস্টে সবার আগে লাইক-কমেন্ট করে।
২.
সেদিন সুজানা আমাকে মেসেজে লিখেছে, ‘আর চার দিন পর ভালোবাসা দিবস। চলো আমরা রেড পার্কে আড্ডা দেই।’
তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই দিলাম, ‘আমি রাজি মহারানী।’
আমি ভাবতেই পারিনি আসন্ন ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সুজানা আমাকে এইরকম একটি আবদার করবে। রেড পার্ক আমাদের বাড়ির পাশেই। ভালোবাসা দিবসে সেখানে সুজানার সাথে আড্ডা দেবোÑ এটা ভাবতেই খুশিতে আমার নাচন এলো।
আজ ভালোবাসা দিবস। রেড পার্কে এসে দেখি সুজানা আমার আগেই এসে বসে আছে। গোলাপি শাড়িতে সুজানাকে গোলাপ ফুলের মতো লাগছে। আমার আনা গোলাপগুলি সুজানাকে দিয়ে তার পাশে বসতেই সে নানান প্রশ্নের বন্যায় আমাকে ভাসাতে লাগলো।
Ñসত্যি আমাকে ভালোবাসো?
Ñবাসি। আমি শাজাহান হলে তোমার জন্য তাজমহল বানাতাম।
Ñআর?
Ñলিওনার্দো দা ভিঞ্চি হলে মোনালিসাকে নয়, তোমাকেই আঁকতাম।
Ñআর রাখাল হলে?
Ñতোমার জন্য ঘাস কাটতাম।
Ñহোয়াট? আমি ঘাস খাই নাকি?
Ñইয়ে সরি। রাখাল হলে তোমার জন্যে বাঁশি বাজাতাম।
Ñথ্যাঙ্কস। আচ্ছা আমার জন্য তুমি সব করতে পারবে তো?
Ñহ্যাঁ গো হ্যাঁ।
Ñতাহলে এখন শাড়ি পরে আমার সামনে আসতে পারবে?
Ñহোয়াট?
Ñএই না বললে আমার জন্যে সব করতে পারবে?
হঠাৎ মনে হলো সুজানাকে খুশি করতে আমি সব পারব। বেহুলা লখিনদরের জন্যে ভেলায় ভেসেছে। দেবদাস পার্বতীর জন্য মদ ধরেছে। আমি সুজানার জন্যে সামান্য একটা শাড়ি পরতে পারব না!
সুজানাকে বললাম, ‘তুমি এখানে বসে থাকো। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি শাড়ি পরে তোমার সামনে আসছি।’
বলেই বাড়ির উদ্দেশে দিলাম ভৌঁ দৌড়।
৩.
বাড়িতে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রোজী আপার কাতান শাড়িটা পরলাম। হঠাৎ চোখ গেলো রোজী আপার মেকআপ বক্সের দিকে। আচ্ছা, মুখে মেকআপ পরলে কেমন হয়! হ্যাঁ, ভালোই হবে। সুজানা দেখে খুশি হবে। মেয়েটাকে খুশি করানোই এখন আমার সাধনা। ওর পাশে গিয়ে বলব, ‘দেখো, তোমার জন্য কেবল শাড়ি নয়, মেকআপও পরেছি।’
রেড পার্কে ঢুকে দেখি সুজানা আগের জায়গায় বসে আছে। শাড়ি পরা আমি এগিয়ে যাচ্ছি সুজানার দিকে। লক্ষ করেছি সুজানা কেমন যেন ঘাবড়ে যাচ্ছে। ব্যাপার কী! ঘাবড়ানোর কী হলো!
তারপর আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে সুজানা উঠে দৌড়াচ্ছে আর ভীতু গলায় চেঁচাচ্ছেÑ‘হিজড়া এসেছে হিজড়া। কে কোথায় আছো, বাঁচাও...।’
সুজানা দৌড়াচ্ছে। আমি তার পিছু পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে বলছি, ‘না গো না, আমি হিজড়া নই। আমি তোমার প্রাণের তোতা পাখি। শাড়ি আর মেকআপে আমাকে দেখে হিজড়া ভেবো না গো।’
কে শোনে কার কথা! সুজানা ‘বাঁচাও হিজড়া হিজড়া’ বলে পালাতে লাগল।