২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বইমেলার কিছু আজাইরা প্যাঁচাল

-

টিভি উপস্থাপক : দর্শক আপনারা দেখতে পারছেন মানুষে মানুষে কানায় কানায় ভরে উঠেছে বইমেলা চত্বর। পাঠকদের সাথে একটু পরে কথা বলব, চলুন আগে প্রকাশকদের কাছ থেকে ঘুরে আসি। আপনারা দেখছেন এখানে বড় ব্যানারে ছোট করে লিখা রয়েছে কচুঘেচু প্রকাশনী। আচ্ছা আপনি কি এই প্রকাশনীর মালিক?
সেলসম্যান : না না আমি না প্রকাশনীর মালিক হলেন ওই যে উনি। এ ভাই...এ বড় ভাই। আরে ওই চরকা ভাই। এই যে দেখেন এই লোক কী বলে। মনে হয় টিভি চ্যানেলের লোক।
প্রকাশক : হ্যাঁ ভাই বলেন।
টিভি উপস্থাপক : আচ্ছা, আপনার নামই তাহলে চরকা। আপনার নাম চরকা কিন্তু আপনার প্রকাশনীর নাম আবার কচুঘেচু প্রকাশনী রাখলেন কেন?
প্রকাশক : কী আর বলব ভাই। এমন এমন লোক এমন এমন বই লেখেন। যার কোনো মানে নেই। নেই কোনো কিছু শেখার। টাকা আছে তাই প্রতি বছর তিন চারখান করে বই বের করেন। পেটের দায়ে টাকার জন্য দায় ঘায় ঠেকে এই কচুঘেচু মার্কা লেখকের কচুঘেচু লিখার বই-ই বের করতে হয়তো তাই নামটা এমন রেখেছি।
টিভি উপস্থাপক : যাই হোক। মেলায় তো বই বিক্রি হচ্ছে খুবই। তাই না। প্রচুর পাঠকের সমাগম। পাঠকের জোয়ার উঠেছে এই বইমেলায়।
প্রকাশক : পাঠক পাচ্ছেন আপনি কোথায়। এখানের শতকরা ৯৮ ভাগই হলো লেখক। বুঝেছেন লেখক। বর্তমানের বইমেলা বইয়ের থেকে লেখকের সংখ্যাই বাড়ায়।

টিভি কর্মী : আপনার নামটা যেন কি?
লেখক : প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক, কবি ও ঔপন্যাসিক চয়রাবয়রা হারান।
টিভি কর্মী : বইমেলায় এসেছেন কি বই কিনতে নাকি আপনার নিজের কোনো বই প্রকাশ পেয়েছে এই বই মেলায়?
লেখক : খুশিতে গদ গদ হয়ে। জি আমার একটা বই বের হয়েছে। বইটার নাম গোবর কুড়ানোর দিনে।
টিভি কর্মী : গল্পটার কাহিনীর শুরু এবং শেষ যদি সংক্ষেপে একটু বলতেন দর্শকদের উদ্দেশে।
লেখক : আসলে হয়েছে কি, গল্পটা লিখা প্রথমে আমি শুরু করলেও শেষটা ঠিক আমার দ্বারা লেখা হয়ে ওঠেনি। বোঝেনইতো লেখক বলে কথা, খুব ব্যস্ত থাকতে
হয় বইমেলার কয়েক মাস আগে থেকে। প্রকাশকদের পেছন পেছন ঘুরতে হয়। তেল মারতে হয়। তাইতো গল্পের শেষের অর্ধেক আমার বউ লিখেছেন।
টিভি কর্মী : বউ লিখেছেন কিন্তু লেখকের জায়গায় শুধু আপনার নাম দিয়েছেন কেন?
লেখক : ধুর মিয়া! আমার বউ লিখেছে আমার নাম দেয়া থাকবে না তো কি। তোমার নাম থাকবে? নির্বোধ কোথাকার!

প্রকাশক : মানসম্মত সব জ্ঞানী গুণী লেখক-লেখিকাদের বই কিনতে চলে আসুন আমাদের সখিনা প্রকাশনীর স্টলে।
ক্রেতা : [কান হরিণের মতো প্রসারিত করে স্টলের সামনে গিয়ে] কি বললেন ভাই? কী বললেন? মানসম্মত ও জ্ঞানী-গুণী লেখক-লেখিকাদের গল্প কাদের শুনাচ্ছেন ভাই। এখন কি আর মানুষ এত বোকা আছে নাকি যে লেখক-লেখিকাদের জ্ঞানী-গুণী মনে করবে। এই সমাজের আসল জ্ঞানী-গুণী তো... থাক তাগো নাম নিয়া আর মুখ নষ্ট করতে চাই না।

ক্রেতা : আচ্ছা ভাই এই কিসমত প্রকাশনীর মালিক কি আপনি?
প্রকাশক : জি ভাই আমার নামই কিসমত আলী এবং আমার নামেই প্রকাশনীর নাম করেছি।
ক্রেতা : দারুণ তো। এই বইমেলায় আপনার প্রকাশনী থেকে মোট কয়টা বই বের করেছেন?
প্রকাশক : আসলে আমার এই প্রকাশনীটা বেশ পুরনো ও নামীদামি প্রকাশনী তো। তাই আমার প্রকাশনী থেকে বেশি বই বের করি না। আমার প্রকাশনী থেকে সব সময় মানসম্মত ও ব্যতিক্রম সব বই বের করি। এবারের বইমেলায় আমরা ৪৬টি বই বের করেছি।
ক্রেতা : এখানে আপনার কোনো বই নেই?
প্রকাশক : জি আছে। আপনাদের দোয়া ও নিজের ছাপাখানা থাকার সুবাদে ৪৬টি বইয়ের ৪১টিই আমার লেখা বই।
ক্রেতা : উরে... বাহ! বাহ! দারুণতো। তাইতো বলি আপনি এত মানসম্মত ও ব্যতিক্রমধর্মী বই কোথায় পেলেন।
চালিয়ে যান।


আরো সংবাদ



premium cement