২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আমার সর্বনাশ, তমার পৌষ মাস

-

অফিসে নিজের কাজে ব্যস্ত আমি। সকাল ১০টার দিকে আমার এক নারী সহকর্মী তমা এসে কুশলাদি বিনিময় করল। ভেবেছিলাম তারপর চলে যাবে কিন্তু গেল না। আমি বললাম, কিছু বলবা?
Ñ বস, আজ আপনাকে অন্য রকম লাগছে। আপনি কি অসুস্থ?
Ñ না, সুস্থই আছি।
Ñ সকালে খেয়ে এসেছেন?
Ñ না।
Ñ কেন বস?
Ñ বাসায় রান্না হয়নি।
Ñ কেন? ভাবী কই? বাসায় নেই?
Ñ আছে।
Ñ তাহলে?
Ñ গত রাতে সাড়ে ১০টার সময় আমার এক সাবেক প্রেমিকা ফোন করেছিল। তার সাথে লাউড স্পিকার দিয়ে আমার স্ত্রীর সামনে বসেই ৭-৮ মিনিট কথা বলেছিলাম। এর পরপরই ঘরে সিডর, নার্গিস, আইলাসহ আরো কয়েক ধরনের ঘূর্ণিঝড় একসাথে হয়েছিল। তারই কিঞ্চিৎ ফলাফল এটা।
তমা আরো আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলো স্যার, তারপর... তারপর?
Ñ তারপর আর কী? সেই ঝড় শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে আমি হয়ে গিয়েছিলাম এক বোবা জড়বস্তু আর আমার স্ত্রীর অবস্থা তখন চলন্ত, জীবন্ত ইটভাঙার মেশিন। যত পারছে হাই ভলিউমে নিজের ভেতর থেকে নানান আইটেমের সাউন্ড ডেলিভারি করছে আর নিজের শক্তি খরচ করে যা পারছে নতুন করে কেনার পিরিস্থি তৈরি করছে। এভাবে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঝড়তুফান থেমে সব কিছু নীরব, নিস্তব্ধ আর কোনো কিছু রান্নাও হয়নি। আরো কিছু বলতে হবে?
তমা মন খারাপ করে বললÑ না বস, বুঝলাম।
Ñ তাহলে নিজের কাজে যাও।
তমা চলে গিয়ে আধা মিনিট পর আবার কী মনে করে ফিরে এসে বললÑ বস, আমি তো দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছি এখন আপনি ওগুলো খেয়ে নিন।
Ñ দুপুরে তুমি কী খাবে? আর এখন না হয় তোমার দুপুরের খাবার আমি সকালে খেয়ে নিলাম। দুপুর হলে আমিই বা কী খাবো? তার থেকে ভালো, আমার চিন্তা বাদ দাও। আমার খাবারের ব্যবস্থা আমি করে নেবো, তোমার চিন্তা করার দরকার নেই। যাও, নিজের কাজে যাও।
Ñ বস, শুধু শুধু কষ্ট করবেন? এখন খান। দুপুরে না হয় আমরা দু’জনে বাইরে গিয়ে লাঞ্চ করে আসব। তমার এই কথাগুলো শোনার পর আমি এতটাই অবাক আর রাগান্বিত হলাম যে, এ রকম আগে কখনো হয়েছি বলে মনে হয় না। ওর কথা শেষ হতে না হতেই আমি খুব রাগান্বিত হয়ে বললাম, এই মেয়ে তোমার কি একটুও আক্কেল-জ্ঞান, বিবেক-বুদ্ধি নেই?
এক মেয়ের সাথে কয়েক মিনিট ফোনে কথা বলার কারণে আমার হীরার টুকরা সংসার কাচের টুকরার মতো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কী করুণ অবস্থা আমার। আর তুমি বলছো এখন আমি তোমার দেয়া খাবার খাই তারপর আবার তোমার সাথে দুপুরে বাইরে গিয়ে লাঞ্চ করি। এগুলো যদি আমার স্ত্রী জানতে পারে কী হবে, একবার ভেবেছ? হুম, নির্বোধ কোথাকার। এসব বলে আবারো ধমক দিয়ে নিজের জায়গায় যেতে বললাম।
তমা সেটা না করে, অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়ার বদলে গলার সাউন্ড যতটা সম্ভব কমিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ঝগড়া-টগড়া যা লাগার তা তো লেগেই গেছে এখন আবার নতুন করে কিছু হবে না, তার থেকে বরং যেটা বলছি সেটাই করুন। খুব খুশি হবো।
তখন আর কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। শুধু এটাই মনে হচ্ছিলÑ আমার সর্বনাশ, তমার পৌষ মাস।


আরো সংবাদ



premium cement