তিন পাগলের তিন বাক্য
- স্বপন শর্মা
- ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
পরীক্ষা শেষ। স্কুল ছুটি। ছুটি কাটাতে সুমন যাচ্ছে তার খালার বাড়ি। মেঠোপথ, তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে। মূল পথ রেখে আলপথে হেঁটে চলল সুমন। মাঠের জমিগুলো ইরি চাষের জন্য তৈরি করে রেখেছে কেউ কেউ। সেই কাদা জমির মাঝে কী যেন চক চক করছে সোনার বলের মতো। কাদা থেকে হাতে তুলে নিয়ে চলল সুমন খেয়াঘাটের পানে। নদীর ওপারে মাসির বাড়ি। নৌকায় উঠে বসে, অনেকের মতো। মাঝনদীতে এসে সুমন সোনার বলে লেগে থাকা কাদাগুলো ধুতে লাগল নৌকায় বসে। ধোয়াধুয়ির এক ফাঁকে হাত থেকে পিছলে পড়ে যায় নদীর গভীর জলে। সুমনের আফসোস করে বলতে লাগল, পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াই ভালো ছিল। বলতে বলতে ফিরে আসে নিজ বাড়িতে। সুমনের মা জিজ্ঞেস করেÑ বাবা তোমার খালা কেমন আছে?
উত্তর নেই। একনাগাড়ে বলতে লাগলÑ পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াই ভালো। মা বুঝতে পারে না সে কথার অর্থ। খুব করে ধরে, কী হয়েছে বাবা বলো তো? তারপর সুমন মাকে বিস্তারিত খুলে বলল। মা সেটা শুনে চমকে ওঠেনÑ এ কী কথা শোনালিরে বাবা। এ কথা যে শোনার চেয়ে না শোনাই ভালো ছিল।
এখন সুমনের মায়ের মুখে এ কথা আর থামছে না। প্রতিবেশীরা কিছু বললে কিংবা চাইলেই তিনি বলে ওঠেনÑ শোনার চেয়ে না শোনাই ভালো।
সুমনকে বললে সে বলেÑ পাওয়ার চেয়ে না পাওয়া ভালো। প্রতিবেশীরা ভাবতে শুরু করেন, এদেরকে ভূতে পাইছে। এলাকার সবাই সিদ্ধান্ত নিলো ওঁঝা ডাকতে হবে। পাশের গাঁয়ে নামকরা এক মস্ত ওঁঝাকে বিস্তারিত বললে তিনি পাঁচ কেজি চাল ৫০০ টাকার চুক্তিতে রাজি হলেন।
ওঁঝা আসলেন, শুরু করলেন তার ওস্তাদি। কিন্তু কোনো মন্ত্রেই কাজ হচ্ছে না। এতে প্রতিবেশীরা অনেকে রেগে উঠল। কেউ একজন চড়াও হয়ে ওঁঝাকে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। একপর্যায়ে ওঁঝা বিড়বিড় করে বলতে লাগলÑ আসার চেয়ে না আসাই ভালো ছিল।
এখনো সুমন বলতে থাকেÑ পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াই ভালো ছিল।
সুমনের মা বলেনÑ শোনার চেয়ে না শোনাই ভালো ছিল।
ওঁঝা বলেনÑ আসার চেয়ে না আসাই ভালো ছিল।
তিন বাক্যে তিন পাগল বলে চলছে দেশজুড়ে।