২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

একই নৌকার মাঝি

-

আজ আবহাওয়া খুব ভালো। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিতে খুব ইচ্ছে হলো। কিন্তু সমস্যা চার্জ। মোবাইলে চার্জ মাত্র ৫ পার্সেন্ট। এই চার্জে স্ট্যাটাস দেয়া মোটেও সম্ভব নয়। তার ওপর সুমির কল। আমি শিওর কলটি রিসিভ করলে দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মাথায় পুরো চার্জ শেষ হয়ে মোবাইল অফ হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং রিসিভ না করে কল কেটে দেয়াই উত্তম।
সুমির কল কেটে দিলাম। আবার সে কল করেছে। ততক্ষণে মোবাইলে চার্জ তিন সেকেন্ডের ঘরে। রিসিভ করলামÑ ‘হ্যালো, কী বলবে জলদি বলো। মোবাইলে চার্জ...’
চার্জ ফুরিয়ে সেট অফ হয়ে গেল। ইশ, সুমির কথাটাই শোনা হলো না। কেন যে কল করেছে!
সুমি আমার স্ত্রী। আমি শ্বশুরবাড়িতে থাকি। সোজা বাংলায় যাকে বলেÑ ঘরজামাই। পাঁচ বছর ধরে আমি সুমির বাপের বাড়িতে ঘরজামাই থাকি। বাংলাদেশের ঘরজামাইয়েরা তাদের স্ত্রীর কাছে কতটুকু নির্যাতিত, তা আমি বিগত পাঁচ বছরে ভালোই উপলব্ধি করেছি। আমার সামান্য ছুতো পেলে সুমি কী পরিমাণ চড় মারে আমাকে, তা আমার পিঠ সাক্ষী আর আহাদ ভাইয়ের ফার্মেসির মেডিসিন সাক্ষী। প্রতিবার যখন সুমির চড় খেয়ে গাল ব্যথায় টনটন করত, তখনই আহাদ ভাইয়ের ফার্মেসি থেকে কিনে এনেছি ব্যথা নিরাময়ের যাবতীয় ট্যাবলেট।
শ্বশুরবাড়িতে প্রথম আসার এক মাসের মাথায় সুমির প্রথম চড়টা আমার গালে পড়ে। মনে আছে, সেদিন ছিল ভারত-বাংলাদেশের খেলা। সুমি খেলা না দেখে স্টার জলসা নিয়ে ব্যস্ত।
Ñ খেলা দেখব।
Ñ না, আমি স্টার জলসা দেখব।
Ñ আহা, খেলা দাও না।
Ñ না।
তর্কের একপর্যায়ে আমি সুমির হাত থেকে থাবা মেরে রিমোট কেড়ে নিলাম। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল। সুমি ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিলো আমার গালে।
Ñ তোমার এত বড় সাহস! তুমি আমাকে মেরেছ?
Ñ গলা নামিয়ে কথা বলো। ভুলে যেও না তুমি ঘরজামাই। স্টার জলসা দাও, দাও বলছি।
আমি ভারত-বাংলাদেশের খেলা বাদ দিয়ে চুপচাপ স্টার জলসা চ্যানেল চালু করে দিলাম। সেদিনই টের পেয়েছি ঘরজামাই হলো জগতের নিরীহ জাত। সুমির কাছে দিন দিন আমি গৌণ হতে থাকি। সাংসারিক কোন্দলে প্রায়ই সে আমার গালে কষে চড় মারায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। প্রতিবার সুমির চড় খেয়ে তিশাকে মনে পড়ে। তিশা ছিল আমার প্রথম প্রেম। প্রথমবার সাহস করে যখন তিশাকে মুখ ফুটে বললাম, ‘আই লাভ ইউ।’ শুনে তিশা ঠাস করে আমার গালে এক চড়...

২.
বাসায় অ াসার পর সে এক বিরাট কাণ্ড। সুমি রেগে-মেগে আগুন কণ্ঠে বলল, ‘তোমার এত বড় স্পর্ধা, আমার কল রিসিভ না করে কেটে দিয়ে আবার ফোন বন্ধ করেছ।’
আমি বিনীত সুরে বললাম, ‘অফ করিনি গো। মোবাইলে চার্জ ছিল না। বন্ধ হয়ে গেছে।’
কে শোনে কার কথা। আমি নাকি মিথ্যে বলছি, এই অভিযোগ দাঁড় করিয়ে সুমি ঠাস করে আমার গালে একটা চড় মারল। আজকের এই চড়সহ সুমির টোটাল চড় খেয়েছি ১৯২টি। আমি গুনে রাখি সুমির চড়ের সংখ্যা।
১৯২ নম্বর চড় খেয়ে গালে তীব্র ব্যথা নিয়ে আমি এখন বসে আছি খোলা আকাশের নিচে বিশাল এই মাঠের কোণে। মনে মনে ভাবছিÑ অদূর ভবিষ্যতে সুমির আর কত চড় খাবো?
কে যেন আমার পাশে এসে বসল। লোকটির মন খারাপ বোঝা যাচ্ছে। তার বাম গালে লাল টকটকে দাগ। কিসের দাগ এটি! লোকটিই বা কে?
Ñ আপনি কে ভাই? আপনার বাম গালে ওটা কিসের দাগ দেখা যাচ্ছে?
Ñ আমার নাম ওহাব। রুমা আমাকে চড় মেরেছে।
Ñ রুমা কে?
Ñ আমার স্ত্রী। আপনার গালেও তো কিসের দাগ দেখা যাচ্ছে।
Ñ আমারটাও চড়ের দাগ। সুমি আমাকে চড় মেরেছে।
Ñ সুমি কে?
Ñ আমার স্ত্রী।
Ñ তার মানে আমরা দু’জনই স্ত্রীর চড় খেয়েছি। তো কোন অপরাধে আপনাকে রুমা ভাবী এভাবে চড় মেরেছে?
Ñ আর বলবেন না ভাই। ঘরজামাই হয়ে জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। কারণে-অকারণে রুমা আমাকে চড় মারে।
Ñ আপনি ঘরজামাই?
Ñ হ্যাঁ, ভাই।
Ñ আমিও তো ঘরজামাই। সুমিও কারণে-অকারণে আমাকে চড় মারে।
Ñ তার মানে আমরা একই নৌকার মাঝি?
Ñ তাই তো মনে হচ্ছে।
ওহাব ভাই কাঁদছেন। শুনেছি মানিকে মানিক চেনে। আজ দেখছি ঘরজামাইয়ে ঘরজামাই চেনে। ওহাব ভাই কান্নাভেজা গলায় বললেন, ‘জানেন, রুমা রোজ আমাকে মারে। আজ হারপিক দিয়ে টয়লেটের কমোড মাজিনি বলে কি জোরে চড়টাই না মেরেছে। কেন, ঘরজামাই হয়েছি বলে আমাকে কমোডও মাজতে হবে! কিসের আইন এটা?
ওহাব ভাইয়ের কান্নায় আমারও কান্না চলে এলো। পকেট থেকে টিস্যু পেপার বের করে আমাকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নেন ভাই, এটা দিয়ে চোখ মুছে ফেলেন।’
সম্পূর্ণ অচেনা এই ওহাব নামের লোকটির সাথে আমার বেশ মিল। আমরা দু’জনই ঘরজামাই। আজ আমাদের স্ত্রী আমাদেরকে চড় মেরে গাল লাল করে দিয়েছে। আমরা একই নৌকার মাঝি।


আরো সংবাদ



premium cement