২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রেম কাহিনী

-

আমি রঞ্জু। আমার ভাই মঞ্জু। আমরা যমজ ভাই। মঞ্জু আমার আগে দুনিয়ায় এসেছে। আমার জন্মের ২০ মিনিট আগে। কাজেই সে বয়সে আমার ২০ মিনিটের বড়। ভাই হলেও মঞ্জুর সাথে আমার গলায় গলায় ভাব। আমি ওর কোনো ভুল ধরলে সে উঁচুগলায় বলে, ‘বড়দের ভুল ধরতে নেই। আমি তোর ২০ মিনিটের বড়।’
আমাদের বয়স এখন ২৪। জীবনের অনেক বসন্ত পেরিয়ে এলেও আমার জীবনে এখনো প্রেম আসেনি। তবে মঞ্জু ঠিকই তার মনের মানুষের সন্ধান পেয়েছে। এক কান-দু’কান করে এখন আমাদের পুরো পরিবার জানে, মঞ্জুর সাথে পাশের বাড়ির নায়লার ঘোর প্রেম। নায়লা মেয়েটা দেখতে মোটামুটি খারাপ না। সামান্য খাটো। চুলে সব সময় বেণী করে। ঠোঁটের ওপরে একটি তিল আছে। তিলের কারণে নায়লাকে স্টার জলসার এক সিরিয়ালের নায়িকার মতো লাগে। সে নায়িকার নাম এখন মনে পড়ছে না।
মঞ্জুর এ প্রেমকে সাপোর্ট না করে আব্বা সাফ জানালেন, তিনি নায়লাকে কখনো এই সংসারের বউ করে আনবেন না। কারণ, নায়লার বাবা আব্বার কাছ থেকে দু’বার টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। সেই বেটার মেয়েকে এই বাড়ির বউ করা! অসম্ভব। এ দিকে মঞ্জুও জানিয়ে দিয়েছে, সে নায়লাকে না পেলে ইঁদুরের ওষুধ খাবে। এই নিয়ে আব্বার সাথে প্রায়ই মঞ্জুর কথাকাটাকাটি চলে।
মঞ্জু দিন দিন নায়লার প্রেমে দেওয়ানা হতে থাকে। মোবাইলে নতুন সিম কিনে ভরেছে নায়লার সাথে সুখ-দুঃখের কথা বলবে বলে। সেই নতুন মোবাইল নম্বর মঞ্জু কাউকেই দেবে না। এ নম্বর জানবে শুধু নায়লা। আমি অনেক চেষ্টা করেও মঞ্জুর কাছ থেকে সে নম্বর নিতে পারিনি। সে দেবেই না।
আব্বা গর্জে উঠে বললেন, ‘ওই মেয়েকে তোকে ভুলতে হবে।’
মঞ্জুরও এক বাক্য, ‘নায়লাকে না পেলে আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে।’
আব্বা বললেন, ‘আত্মহত্যা এত সোজা না। করে দেখা।’
দু’জনের কথা বলার ফাঁকে মঞ্জুর ফোন বেজে ওঠে। রিসিভ করেই বলল, ‘হ্যাঁ জান, কেমন আছো! আজ যে তোমাকে এক প্যাকেট চকলেট কিনে দিয়েছি, সব খেয়েছ?’
আব্বা বেশ কঠোর হয়ে উঠলেন। তেজি গলায় বললেন, ‘ওই মেয়েকে ভুলে না গেলে তোকে আমি ত্যাজ্য করতে বাধ্য হবো।’
মঞ্জু কোনো কথা না বলে সোজা ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
দুই ঘণ্টা পার হওয়ার পরও মঞ্জু দরজা খুলছে না দেখে আমাদের সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। ব্যাপার কী? মঞ্জু বলেছে, নায়লাকে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে। ঘটনা ওই রকম কিছু না তো!
মঞ্জুর রুমের দুয়ারে টোকা মারা হলো। দরজা খুলছে না। একে একে আব্বা, আম্মা, বড় আপা আর আমি দরজার সামনে এসে দরজা খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আম্মা কাঁদো কাঁদো সুরে বললেন, ‘বাবা, দরজাটা খোলো না। ও বাবা।’
না, মঞ্জুর কোনো ভাবান্তর নেই। আমরা সবাই ভয় পেতে থাকি। মঞ্জু যদি সত্যি সত্যিই কোনো অঘটন ঘটায়, তাহলে তো বিশাল সমস্যা। নতুন ফোন নম্বর নায়লাকে ছাড়া আর কাউকে দেয়নি মঞ্জু। কাজেই ফোন করাও যাচ্ছে না। হায় আল্লাহ, এখন কী হবে!
আব্বা কান্নাভেজা গলায় চেঁচিয়ে বললেন, ‘ও বাপ, দরজাটা খোল। আমি নায়লাকে মেনে নেবো।’
তবুও দরজা খুলছে না। আমি গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজা পেটাতে লাগলাম আর আগ্রহ নিয়ে বলি, ‘ভাই, দরজাটা খোল। আব্বা নায়লাকে মেনে নেবে।’
নাহ, কোনো সাড়া নেই। শেষে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দরজা ভেঙে ফেলা হবে।
অনেক শ্রমের পর দরজা ভাঙা হলো। আমরা ধরেই নিয়েছি মঞ্জুকে আমরা দেখব সিলিং ফ্যানের সাথে দড়ি বেঁধে ঝুলে আছে। কিন্তু না। মঞ্জু খাটে শুয়ে শুয়ে পা দুলিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। আমরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছি দেখে সে কান থেকে হেডফোন সরিয়ে বলল, ‘সেকি! দরজা ভেঙে ফেললে?’
আব্বা বললেন, ‘তুই দরজা খুলিস না। এত ডাকলাম।’
মঞ্জু বলল, ‘ডেকেছ? শুনিনি তো। আমার কানে হেডফোন। গান শুনছিলাম।’
মঞ্জুর আচরণ দেখে আমরা হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। যাক বাবা, মঞ্জু কোনো অঘটন ঘটায়নি। ওর নতুন নম্বরটা জানা থাকলে আজ এত কষ্ট করে দরজা ভাঙতে হতো না। একটা কলই যথেষ্ট ছিল। হ


আরো সংবাদ



premium cement