মেয়ের নাম রেবা
- জোবায়ের রাজু
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
এই যে আমি, প্রেম জিনিসটার বিপক্ষে চিরকাল আমার অবস্থান ছিল। অথচ সেই আমি রীতিমতো বদলে গেলাম রেবাকে দেখে। এই মেয়ের আশ্চর্য রূপ আমার দীঘির জলে ছায়া ফেলেছে, আমি সে ছায়ায় রেবার রূপ দেখে মনে মনে গেয়ে চলিÑ তুমি যে আমার কবিতা...
কিন্তু রেবাকে না জানিয়ে এভাবে একা একা প্রেমস্রোতে ভরাডুবির খেলায় মেতে থাকলে হবে না। তার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে এক পৃথিবী সাহস নিয়ে বলতে হবে মনের সব অব্যক্ত কথামালা। রেবার প্রতি আমার মনে ভালোবাসার কোনো অভাব না থাকলেও একটি জিনিসের বড় অভাব। সেটা হলো সাহস। রেবার সামনে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার সাহস পাই না। যদি প্রত্যাখ্যান করে।
২.
এভাবে আর থাকা যায় না। চলে গেলাম রেবার সামনে। কলেজের পূর্ব বারান্দায় তখন রেবার কোনো বান্ধবীও ছিল না। একা পেয়ে বললামÑ ‘আ আমি তো তো তোমাকে ভা ভা ভা...’
আমার কথা শেষ না হতেই রেবা হি হি করে উচ্চস্বরে হেসে খুন। হাসতে হাসতে বললÑ ভালোবাসো?
Ñবা বা বাসি।
Ñবলতে তোতলাচ্ছ কেনো? সত্যি ভালোবাসো?
Ñবা বা বাসি।
Ñ তোমার হাত কেটে আমার নাম লিখতে পারবে?
Ñইয়ে...
Ñযাও যদি তাÑই পারো, বুঝব সত্যি আমায় ভালোবাসো।
Ñআচ্ছা।
বাসায় এসে চিন্তার সাগরে পড়লাম। খুব সাহস করে মনের কথা জানালাম রেবাকে। কিন্তু সে হাত কেটে নিজের নাম লেখার আবদার করে ভালোবাসার পরীক্ষা চাইবে, ধারণাই করতে পারিনি। এখন উপায় কী!
মনে পড়ল ওহাব ভাইয়ের কথা। এ মানুষটা আমার যেকোনো সমস্যার সমাধা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। হ্যাঁ, ওহাব ভাই একমাত্র ভরসা।
ওহাব ভাইয়ের কাছে গেলাম। পুুরো ঘটনা শুনে ওহাব ভাই বললেনÑ তুমি কি রেবাকে সত্যি ভালোবাসো?
Ñবাসি।
Ñতাহলে সমস্যা কী! হাত কেটে রেবার নাম লিখে ভালোবাসা প্রমাণ করো। সত্যি সত্যি ভালোবাসলে হাত কাটতে ব্যথা পাবে না।
Ñতাহলে হাত কাটতেই হবে?
Ñরেবাতো তা-ই চাচ্ছে।
রেবা চাচ্ছে হাত কেটে তার নাম লিখে আমার ভালোবাসার প্রমাণ দিতে। হ্যাঁ, তাই করতে হবে।
বাজার থেকে একটা ব্লেড কিনলাম আর ফার্মেসি থেকে একটা ব্যান্ডেজ কিনলাম। হাত কাটার এই দু’টি সারঞ্জাম কিনে সোজা বাড়ি চলে এলাম।
৩.
এখন মধ্যরাত। সব ব্যথা আর যন্ত্রণাকে পরোয়া না করে ব্লেড দিয়ে বাম হাতের কব্জির উপরের নরম মাংসে লিখে ফেললাম, ‘রেবা।’ রক্তে হাত ভেসে যাচ্ছে। ব্যথায় আমি মরি মরি...। স্যাভলন দিয়ে রক্ত মুছে তারপর ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে দিলাম। কাল রেবা আমার এই দুঃসাহস দেখে বুঝতে পারবে তাকে কত ভালোবাসি।
আমি রেবার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। রেবা ভাবতেই পারেনি আমি এমন কাজ করেছি। তার চোখে মুখে বিস্ময়।
Ñ সেকি! তুমি সত্যি হাত কেটে আমার নাম লিখেছ?
Ñ তোমাকে যে বড় ভালোবাসি।
Ñব্যান্ডেজ সরাও।
আমি হাত থেকে ব্যান্ডেজ সরালাম। আমার হাতে রেবার নাম। রেবা অবাক। হঠাৎ সে তাজ্জব গলায় বললÑ ‘সেকি, তুমি আমার নাম ভুল লিখেছ কেনো? আমার নাম রেবা। তুমি লিখেছ রেরা। যাকে ভালোবাসো, তার নাম পর্যন্ত জানো না! এই তোমার ভালোবাসা? যাও তোমাকে মন দিতে পারলাম না।
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে নিজেই বেকুব হলাম। ব্যথার চোটে রেবা বানান ভুল করে রেরা লিখে ফেলেছি।
Ñযদি সত্যি আমাকে ভালোবাসতে, তবে নাম ভুল করতে না।
Ñএখন কী করা তাহলে?
Ñআমি জানি না। ভুল করে রেবাকে রেরা লিখেছ। বিয়ের পর তো ভুল করে আমায় জবাই করে দেবে। তার চেয়ে বরং আমি পালাই।
রেবা হিল জুতায় ঠকঠক শব্দ তুলে প্রস্থান করল। আমি হা করে তাকিয়ে থাকি।
৪.
উদাস দুপুরে আমি বাড়ি ফিরছি। হাতে এত ব্যথা। ভাবছি হাতের ক্ষতের জন্য ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে যাবো। রেবাকে ভুল করে রেরা লেখার অপরাধে সে আমাকে ত্যাগ করল। বুঝতেই চাইল না তাকে আমি কত ভালোবাসি। হঠাৎ পেছন থেকে রেবার ডাক।
Ñএই রঞ্জু, এই।
Ñবলো।
Ñআমাকে নিয়ে কাজী অফিসে চলো।
Ñমানে?
Ñযারা আমাকে প্রেম প্রস্তাব দিতে আসে, তাদের সবাইকে বলি হাত কেটে আমার নাম লিখে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে। আজ পর্যন্ত কোনো মজনুই সে দুঃসাহস দেখায়নি। অথচ তুমি তাই করে দেখালে আর প্রমাণ করলে তোমার ভালোবাসা। যদিও বানানে ভুল করেছ, সেটা কথা না। কিছু কিছু ভুল বড় মধুর। চলো তো, সোজা কাজী অফিসে যাই।
Ñসত্যি?
Ñএকদম সত্যি।
সুখে আমার দুটি চোখ ভিজে আসছে। গলা ফাটিয়ে রেবাকে বলতে ইচ্ছে করছেÑ আমি সারাটি জীবন তোমার পাশে ছায়া হয়ে রইব। হ