বউয়ের জ্বালা
- তারেকুর রহমান
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
বউয়ের নাক ডাকার শব্দে ঘুম ভাঙে মতি ভাইয়ের। মেয়ে মানুষ নাক। নাক ডাকা এ এক অসম্ভব ব্যাপার। যা তা নাক ডাকা না, পুরো যেন পাওয়ার টিলার চলছে। এত বেশি নাক ডাকার আওয়াজে প্রতিদিনি মতি ভাইয়ের ঘুম হারাম হয়ে যায়। মতি ভাই অবশ্য একটু চালাকি করে। সে ঘুমানোর সময় কানে তুলা গুঁজে দিয়ে ঘুমায়। কিন্তু আজ কখন যে তুলাটা কান থেকে পড়ে গেল টেরই পেল না। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে মতি ভাই ঘুম থেকে উঠল, অথচ স্ত্রী নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। মতি ভাই চিন্তা করল স্ত্রীকে একটু ডিস্টার্ব করা যায় কি না। এবার সেও নাক ডাকার অভিনয় করতে লাগল। অবশ্য এতেও তার স্ত্রীর ঘুম ভাঙল না। কী আর করা। মতি ভাই ভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে লাগল। সে জোরে জোরে কাশি দিতে লাগল। এবার মনে হয় বউয়ের ঘুম ভাঙল। আসলে তা নয়। সে পাশ পরিবর্তন করে ঘুমাচ্ছে। এবার যখন মতি ভাই ব্যর্থ হলো, সে অন্য পথ খুঁজতে লাগল। মতি ভাই জোরে জোরে গান গাইতে লাগল। মতি ভাইয়ের গানের আওয়াজে স্ত্রী জেগে গেল। চোখমুখ লাল করে বসে আছে।
Ñ এই এ রকম জোরে জোরে গান গাইছো কেন?
Ñ আমার ইচ্ছে হইছে তাই গাইছি।
অমনি হাতের পাশে একটা হাতপাখা ছিল, সেটা ছুড়ে মারল মতি ভাইয়ের গায়ে। সেটি গিয়ে পড়ল মতি ভাইয়ের কপালে। আজকে কপালে যে ভালো কিছু নেই তা বোঝা যাচ্ছে। মতি ভাই জিজ্ঞেস করলÑ এটা ছুড়ে মারলে কেন?
Ñ আমার ইচ্ছে হইছে তাই মারছি।
ঘুম থেকে উঠেই একটা বাজারের ব্যাগ মতি ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলো তার স্ত্রী। হাতে দিলো বিশাল এক লিস্ট। সম্ভবত রাতেই লিস্ট করে রেখেছে। মতি ভাই বাজার করতে বের হলো। মতি ভাই চিন্তা করল আজ দেরি করেই ফিরবÑ দেখি ও কী করে। মতি ভাই হোটেলে নাশত করল। এ দিকে মতি ভাইয়ের স্ত্রী রেগে ফায়ার। এতণ হয়ে গেল অথচ এখনো আসছে না। মতি ভাই সকাল ১০টার দিকে বাসায় ফিরল।
Ñ এত দেরি হলো কেন?
Ñ জিনিসপত্র পেতে দেরি হয় না?
Ñ তাই বলে এত দেরি?
মতি ভাইয়ের স্ত্রী লিস্টের সাথে টাকার হিসাব মেলাচ্ছে। ৩০ টাকার হিসাব কোনো ক্রমেই মিলছে না। মতি ভাই বলছে, সে জানে না আসলে ৩০ টাকা কই গেল? স্ত্রী বলল, জানো না মানে?
Ñ দোকানদার মনে হয় আমার কাছে বেশি টাকা নিয়েছে।
Ñ যাও, এখন ফেরত নিয়ে আসো।
এত বড় বিপদ। মিথ্যা কথা বলে আরো বড় বিপদে পড়ল মতি ভাই। সে স্বীকার করল হোটেলে নাশতা করেছে।
স্ত্রী বললÑ মিথ্যে কথা বলার শাস্তি হিসেবে তোমার দুপুরের খাবার বন্ধ।
Ñ এত বড় অন্যায় করো না।
Ñ বেশি কথা বললে রাতেও খাবার দেবো না।
দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেল। স্ত্রী বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে। মতি ভাই হাত ধুয়ে খেতে বসল। স্ত্রী হুঙ্কার দিয়ে উঠে বললÑ তোমার খাবার বন্ধ বলছি না?
Ñ আমি কি হাওয়া খেয়ে থাকব?
Ñ পারলে হাওয়া খেয়েই থাকো।
Ñ হাওয়া খেলেও তুমি রাগ করবে।
Ñ কেন?
Ñ বলবে তোমাকে ছেড়ে আমি একলাই হাওয়া খেয়েছি।
Ñ কি, আমি এসব বলি? তুমি বিয়ের পর থেকে আমাকে কী দিয়েছ?
মেয়ে মানুষ রাগলে অতীত টানতে শুরু করে। মতি ভাই উঠে গিয়ে রুমে শুয়ে পড়ল। স্ত্রী ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এবার মতি ভাই ধীরে ধীরে রান্নাঘরে গিয়ে খেতে বসল। ভালো সব কিছুই তার স্ত্রী খেয়ে ফেলেছে। মতি ভাই কোনোরকমে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ল। বিকেলে মতি ভাইয়ের স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে বললÑ এই শুনছো?
Ñ কী বলো?
Ñ তুমি এত কষ্ট করে খেয়েছ কেন?
Ñ কী করব?
Ñ আমাকে ডাকলেই তো পারতে। আমি উঠে খাবার দিতাম।
মতি ভাই মনে মনে ভাবে, ওকে ডাকলে হয়তো আগামী এক সপ্তাহ না খেয়ে থাকতে হবে। আচ্ছা ও এত নরম সুরে কথা বলছে কেন? ওর মতলব কী?
Ñ শুনো না, আজকে একটু বের হই?
মতি ভাই জানে হাজারবার না করলেও সে শুনবে না। স্ত্রীকে নিয়ে বের হলো মতি ভাই। মার্কেটে গেলে যা দরকার নেই তা-ও কিনবে স্ত্রীরা। এটাই অনেক স্ত্রীর স্বভাব। তবে অনেক ভালো স্ত্রীও আছে। কেনাকাটা শেষে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকল মতি ভাই। মতি ভাইয়ের কাছে যে টাকা আছে তাতে যা অর্ডার করল তার স্ত্রী, সেটি দুইজনে খাওয়া যাবে না। মানে হলো একজন খেতে পারবে ওই পরিমাণ টাকা আছে। কী আর করার। মতি ভাইয়ের স্ত্রী বললÑ তুমি তো বাইরে অনেক কিছু খাও। এটা আমিই খাই।
স্ত্রী খাচ্ছে মতি ভাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। কেনাকাটা করার ব্যাগগুলো হাতে করে নিয়ে মতি ভাই বাড়ি ফিরল। হাত লাল হয়ে গেছে। স্ত্রীকে দেখানোর পর স্ত্রী বললÑ এসব ভং তোমার। ফাজলামির আর জায়গা পাও না।
মতি ভাই রুমে গিয়ে বসে পড়ল আর হাসতে লাগল স্ত্রীকে ধোঁকা দিতে পেরে। কমদামি জিনিস তাকে ভালো লাগবে বলে কিনে দিয়েছে। আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইচ্ছে করেই অভাব দেখিয়েছে। যেন আর বেশি খরচ করতে না পারে। মতি ভাই মনে মনে বলল, মেয়ে মানুষ আসলেই বোকা।