অতি চালাকের পকেট খালি
- সিয়াম বিন আহমাদ
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
টিউশনিটা শখের বশেই শুরু করা। যদিও এক বছর না ঘুরতেই অনেকটা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়াল। আগে মাস শেষে দুই হাজার টাকা পেতাম ওটা দিয়ে দিনগুলো বেশ চলে যেত। ইদানীং হলের খাবারটা একদমই খেতে পারি না; বেশির ভাগ সময়ই ক্যাফেতে খেতে হয় এজন্য খরচটাও মোটা। জব প্রিপারেশনের জন্য টুকিটাকি বইও নিতে হয়। তা ছাড়া আবার বিসিএস কোচিংয়ে দৌড়াতে হয় সময়-অসময়। সব মিলিয়ে আজকাল খরচের তালিকা অনেক লম্বা। কিন্তু সেই টিউশনিটায় মাস শেষে আজো ধরিয়ে দেয় দুই হাজার টাকাই। অনেকদিন ধরেই ভাবছি টিউশনিটা ছেড়ে দেবো কিন্তু কথাটা সরাসরি বলতে পারছি না। আবার এই সামান্য বেতনে টিউশনিটা চালিয়ে নেয়াও আমার দ্বারা আজ অসম্ভব। মেহেদীর কাছে সেদিন বিষয়টা খুলে বললাম। বড়শির ছিপের মতো চিকন মানুষটা হুট করেই আমাকে চিকন একটা বুদ্ধি ধরিয়ে দিলো। আমি ওই বুদ্ধিটা মাথায় নিয়ে সারারাত একটুও ঘুমাতে পারলাম না। পরদিন সকাল সকালে ভাইভার মতো প্রিপারেশন নিয়ে আমি টিউশনিতে হাজির। যাওয়ার পথেও মনে মনে কথাগুলো দু-চার বার রিহার্সাল করে নিলাম। ভুলে যাওয়ার ভয়ে পড়ান শুরু করার আগেই শাওনকে বললাম, ‘তোমার আম্মুকে একটু ডাকো তো।’
খানিকণ পরই আন্টি এত্তসব নাশতা নিয়ে শাওনের রুমে এলেন। হাতে হাজার টাকার চকচকে নোট। আমি ভেবেছিলাম এই অবস্থায় কথাটা বলব না। কিন্তু আমার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ দেখে আন্টিই বললেন, ‘কিছু বলবে তুমি?’
এতটুকু সুযোগ পেয়ে আমি বলতে আরম্ভ করলাম, ‘আন্টি একটু সমস্যার কারণে হঠাৎ করেই বাসাটা চেঞ্জ করতে হল। আগামী মাস থেকে হয়তো শাওনকে পড়ানো আমার আর সম্ভব হবে না। ভালো একটা টিচারের খোঁজ নিয়েন। আমার অতদূর থেকে এসে পড়াতে বড্ড ঝামেলা পোহাতে হবে।’
একদমে কথাগুলো বলে হাঁফ ছাড়লাম যেন। কথাটা শেষ হতে না হতেই আন্টি বলে উঠলেন, ‘তুমি বাবা টাকা-পয়সা নিয়ে টেনশন কোরো না। আমি তোমার আঙ্কেলকে বলে একটা ব্যবস্থা করব। তা ছাড়া তুমি তো জানোই শাওন তোমার কাছে ছাড়া অন্য কারো কাছে পড়তে চায় না।’
এই প্রোমোশনের আনন্দে ঈদের মতো খুশিতে খুশিতে কাটল ক’দিন। মেহেদীকে একদিন নয়, পরপর দুই দিন ক্যাফে খাওয়াতে হলো। নতুন মাসের শুরু তাই ভারী বেগ পেতে হলো না আমার। ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরাও করলাম দু-চারটা দিন। সপ্তাহ খানেক পরে একদিন টিউশনিতে গিয়ে দেখি শাওনের রুমে আন্টি বসে আছে। আমাকে ভালো-মন্দ কিছু জিজ্ঞেস না করেই আন্টি বলতে আরম্ভ করলেন, ‘তোমার আঙ্কেলকে বিষয়টা জানিয়েছি। তিনি বললেন, আমার তো খিলতে হয়েই অফিসে যাওয়া-আসা করতে হয়। অফিস থেকে ফেরার পথেই আমার গাড়িতে ও চলে আসল আবার শাওনকে পড়ানো হলে আমার ড্রাইভার কাউসারই ওকে পৌঁছে দিবে। আমি কিছু বলিনি তোমার কাছে শুনে জানাতে চেয়েছি। তুমি কী বলো? আমি কথাটা শোনামাত্রই আকাশ ভেঙে মাটিতে পড়লাম। এ অবস্থায় হ্যাঁ-না কী বলব কিছুই ঠিক করতে পারছিলাম না। খানিক পরে মাথাটা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
নতুন মাসে সুবিধার ছদ্মবেশে এক পৃথিবী বিপদ এসে ঘাড়ে চাপল আমার। আঙ্কেলের গাড়িতে আসা যাওয়া করি। যদিও ফেরার পথে উনি থাকেন না। বকশি বাজার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের পাশেই শাওনদের বাসা। আমি থাকি শহিদুল্লাহ হলে। এইখান থেকেই বিকেলে রওনা করি সেই খিলতে। খিলতে থেকে সন্ধ্যায় আঙ্কেলের গাড়িতে উঠি। শাওনকে পড়ানো শেষে আবার আঙ্কেলের গাড়িতেই আমাকে খিলেেত পৌঁছে দেয়। ওইখান থেকে আবার আমাকে ফিরতে হয় এই শহিদুল্লাহ হলে। যদিও এটা-ওটা অজুহাত দাঁড় করিয়ে কোনো-কোনোদিন শাহবাগ মোড়ে নেমে যাই আমি। এভাবেই চলছে আমার নতুন মাসের যন্ত্রণাময় দিনগুলো। হয়তো মাস শেষে দেখা যাবে আমার পকেটের তলাটাও ফাঁকা। আমাকে যে এ চিকন বুদ্ধিটা ধরিয়ে দিয়েছিল তার পকেটটা খালি হওয়ার আশঙ্কাও মোটেও কম নয়। আমার কষ্টটা একদমই ফ্রি। যদিও মাস শেষে আমিও কিছু পাব আর সেটা হলো চরম একটা শিা।