২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আফসু ভাইয়ের আত্মগোপন

-

বউ বাপেরবাড়ি যাওয়ায় খুব সকালেই স্বাগতম রেস্তোরাঁয় নাশতা করতে যাচ্ছিলাম। আফসু ভাইদের বাড়ির পেছনের রাস্তা অতিক্রম করতেই ব্যাপক হট্টগোল, চিল্লাচিল্লি। কি ব্যাপার! অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে একটু এগোতেই দেখি উঠোন ভর্তি মানুষ। সদ্য বাজার ফেরত আফসু ভাই নেয়েঘেমে একাকার! তিনি আসামির মতো বসে আছেন। অপরাধ, বাজার থেকে তিনি পচা মাছ এনেছেন। এই নিয়ে বউ তার পাড়াশুদ্ধ লোকজন জমায়েত করে চেঁচিয়ে বলে বেড়াচ্ছেনÑ এই দেখেন দেখেন, কোন গরুর সাথে সংসার করি আমি। এই ১০ বছরেও বাজার করা শিখল না। প্রতিবারই এরকম পচা মাছ নিয়ে আসে। পরে বিস্তারিত আরো যা জানলাম তার মর্মার্থ এইÑ শত বলার পরও নাকি বিগত ১০ বছর যাবৎ আফসু ভাই এভাবে বাজার করে আসছেন! কোনো উন্নতি নেই। বাজার থেকে ফিরলেই তাই অবধারিত ঝগড়া হয়, ঘটে নানা লঙ্কাকাণ্ড!

২.
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বাজার করতে অভিজ্ঞ সিনিয়র-জুনিয়র কয়েকজন পাড়াতো ভাই-ব্রাদাররা জরুরি বৈঠক ডেকে একত্রিত হলাম। আলোচনার বিষয়- কি করে আফসু ভাইকে একজন অভিজ্ঞ বাজারবিদ হিসেবে গড়ে তোলা যায়! এ জন্য প্রথমেই দীর্ঘ ২১ বছর বাজার করতে অভিজ্ঞ মতি ভাই বলে চললেন, শোনো আফসু! বাজার করতে গেলে প্রথমেই পুরো বাজার একবার চক্কর মারবা। তারপর কোথায় কেমন আলু-বেগুন আছে, কোথায় ভালো গোশত, মুরগি পাওয়া যায় সব ঘুরে ঘুরে দেখবা! পরে দশ জায়গায় ঘুরে অবশেষে টিপে টিপে জিনিসপত্র কিনবা, বুঝছো? আফসু ভাই হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে জবাব দেন, জ্বি আচ্ছা। অন্য দিকে বিশিষ্ট বাজার বিশারদ অবসরপ্রাপ্ত মজনু ভাই বলতে লাগলেন, শোনো আফসু! আমার পুরো জীবনটাই কেটে গেছে বাজার করতে করতে! আছে বিশাল অভিজ্ঞতা। মাছ কিনতে গেলেও প্রথমেই মাছের কানের দুই অংশ ফাঁকা করে দেখবা মাছের ফুলকার অংশ লাল আছে কি-না! তারপর পুরো মাছটির এপিঠ-ওপিঠও টিপেটিপে দেখবে কোথাও নরম আছে কি-না। যদি ফুলকার উভয় অংশ ফ্যাকাসে কিংবা বডিতে আঙুল ডেবে যায় তবে বুঝবা মাছটি পচা! আফসু ভাই এবারো হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলেন, জ্বি আচ্ছা! বুঝেছি! এভাবে পর্যায়ক্রমে আমি, আশরাফ, মহসিন, মোজাম্মেল, হোসেন এবং খোকন ভাই সহ সবাই আফসু ভাইকে বাজার করার পর্যাপ্ত টিপস দিয়ে সেদিনের মতো সভা সমাপ্ত ঘোষণা করলাম।

৩.
সভা পরবর্তী আফসু ভাইয়ের আজ প্রথম বাজার করার দিন। লম্বা ফর্দসহ হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে তার স্ত্রী বললেন- এই নাও! আজ যদি সওদাপাতিতে কোনো প্রকার হেরফের হয়, তবে মনে রেখÑ চিরদিনের জন্য তোমার ভাত বন্ধ! ঠিক তখনই আফসু ভাইয়ের মনে পড়ল মিটিংয়ের সেই অভিজ্ঞজনদের কথা! আজ আর কোনো ভুল করা চলবে না। তাই প্রথমেই তিনি যখন আলু-পেঁয়াজের দোকানে গেলেন; সেখানে প্রত্যেকটি আলু-পেঁয়াজ টিপেটিপে মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগলেন। দোকানদার প্রশ্ন ছুড়লেন, ভাইজান টিপেটিপে এইভাবে কি দেখতাছেন? উত্তরে আফসু ভাই বললেন, দেখছি ভেতরে কোনো পচাটচা আছে কি না! অতঃপর আফসু ভাই পা বাড়ালেন মাছের বাজারে। সেখানে বড় একটি রুই মাছ পছন্দ হলো তার। পরে মাছটিও উল্টেপাল্টে কানের উভয় অংশ ফাঁকা করে দেখতে লাগলেন। নাহ, ঠিক আছে! ফুলকার দু’অংশই তো বেজায় লাল! শরীরটাও বেশ শক্তপোক্ত! সুতরাং মাছটি তাজা! নিশ্চিন্তে কেনা যায়!
ওদিকে ফেরার পথে বহুদিনের পুরনো বন্ধু কামালের সাথে দেখা। দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত সপ্তাহেই সে ছুটিতে বাড়ি এসেছে। আহা, কতদিন পর দেখা! সে তো আর আফসু ভাইকে ছাড়ছে না! এদিকে অন্দরমহল থেকে অনবরত নানা পদের মজাদার খাবার আসতে লাগল! সেগুলো খেতে খেতে এবং স্কুল জীবনের সেই পুরনো প্রেমের খোশগল্পে মেতে উঠলেন দুইজন। অসময়ে তাদেরকে জীবনসঙ্গী করতে না পারার আফসোসে উভয়েই উভয়ের পিঠ চাপড়ে বিলাপ করতে করতে বলতে লাগলেন, আহা জরিনা, আহা সখিনা! কোথায় কেমন আছো তোমরা, আজো তা জানি না! এমন কাসুন্দিঘাটা আরো নানা বৈচিত্র্যময় ও রসাত্মক ছন্দ-আলাপে তারা যখন বিভোর তখন বেলাটাও প্রায় সকাল গড়িয়ে দুপুর!
ওদিকে বউ তার মাছ এবং অন্যান্য বাজার সদাইয়ের অপোয়। হায় হায়! সর্বনাশ! আফসু ভাইয়ের হঠাৎ মনে পড়ল বাজারের সাথে তার তো মাছও কেনা হয়েছে! এইরে, আজকে খবর আছে! দ্রুত হাঁটা শুরু করলেন তিনি। দুরু দুরু বুকে টিপ টিপ পায়ে তিনি যখন গেট পেরিয়ে উঠোনে প্রবেশ করলেন, বউ তার বাজখাই গলায় তুইতুকারি করে চেঁচিয়ে উঠলেন- ভাদাইম্ম্যার ঘরে ভাদাইম্ম্যা, এই তোর বাজার করে ফেরার সময় হলো? ঝাড়ু নিয়ে দাবড়ানি দিয়ে বলতে লাগলেন, আইজকা তোর একদিন কি আমার দশ দিন! যাবি কই! পরে একে একে সব বাজার নামিয়ে তিনি যখন সবিশেষ মাছটি পাত্রে রাখলেন, মুহূর্তেই চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল এবং ভনভন করে ঝাকে ঝাকে মাছি এসে পুরো মাছটি আবৃত করে ফেলল! সেই উৎকট গন্ধে আফসু ভাইয়ের বউ কয়েকবার বমিও করলেন।
এ দিকে সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরে সাথে সাথেই আফসু ভাই চম্পট; উধাও! শুনেছি এক সপ্তাহ যাবৎ তার কোনো হদিস নেই। তবে বিশ্বস্তসূত্রে খবরে প্রকাশ, তিনি নাকি কোনো এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপন করে আছেন! হ

 


আরো সংবাদ



premium cement