২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চিনিগুঁড়া প্রেম ও মিনিকেট ভালোবাসা

-

ওহী আর সুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাাৎটা ছিল অনেকটা নাটকীয়তায় ঠাসা ও উত্তেজনায় ভরপুর। একটু অন্যরকমভাবে তাদের পরস্পরের মাঝে ভাবভালোবাসা গড়ে ওঠে। সোজা পথে না গিয়ে, পিচ্ছিল ও বক্র পথে দু’জনার হৃদয়ের ভাব লেনদেন হয়। সুমী ভয়ঙ্কর রকমের সুন্দরী। রূপেগুণে ও মেধায় অষ্টরম্ভা। বলিউড কুইন ঐশ্বর্য রিয়া রাই কিংবা হোক হলিউড কুইন অ্যাঞ্জেলিনা জোলিÑ ওদের চেয়েও সে কোনো অংশে কমতি নেই। সুমী যখন হাসে তখন আরেক বলিউড সুন্দরী প্রীতি জিনতার মতো মোহনীয় টোল পড়ে তার নরম গালে। ওই ছোট্ট নিখাদ টোলে ভিমরি খায় শত শত ছাত্রযুবা। যখন হাসে তখন দখিনা সমীরণে বিভোর হয় হাজারো প্রাণ। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে সে-ই সবচেয়ে বেশি সুন্দরী। সারাণ পুচ্ছ দুলিয়ে নৃত্য ঝঙ্কারে হেঁটে বেড়ায়। উচ্ছলা হরিণীর মতো দাপিয়ে বেড়ায় ক্যাম্পাসজুড়ে। সেই ঢেউ খেলানো লাস্যময়ীতায় হাজারো ছেলের বুকে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দেয়। কেড়ে নেয় রাতের ঘুম। ছেলেপুলেরাও সুমীর পাশে সারাণ সুপার গ্লুর মতো থাকতে পছন্দ করে। কেউ কেউতো পিঁপড়ের মতো ঘুরঘুর করে লেগেই থাকে। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের কাউকে সে খুব একটা পাত্তা দেয়াতো দূরে থাক, কাছে-কিনারেও ঘেঁষতে দেয় না। খোদ অন্য মেয়েরাও যেখানে খাবি খায়, সেখানে সাধারণ পুচকে ছেলেরা কোন ছার! কিন্তু ওহী ছেলেটা ডিপার্টমেন্টে আসার পর থেকে সব হিসেবনিকেশ দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। সে স্রোতের বিপরীতে চলা চরম বেপরোয়া একটি ছেলে। কাউকে কৈফিয়ত-টৈফিয়ত দিয়ে চলার মতো নয়। যেমন সুদর্শন তেমনি মেধাবীও। ফান আর মুহুর্মুহু দুষ্টুমিতে সুমী যদি হয় এক কাদি, ওহী সেখানে আরো তিন কাদি ওপরে। ছাত্র-শিক সবাইকে মাতিয়ে রাখে। আগেই টুপ করে গাছের একদম মগডালে ওঠে বসে থাকে।
‘অ্যাই যে শুনুন।’
সিঁড়িপথে বন্ধুদের সাথে উপরে ওঠতে গিয়ে সুমীর সরাসরি কথার সম্মুখীন হয় ওহী। দু’জনার এটাই প্রথম সাাৎ।
‘জি আন্টি, আমাকে বলছেন!’
‘স্টুপিড! ইতর!! আমি আন্টি? আপনার চোখে কি ছানি পড়ছে?’
‘সেকি! আপনি কচি খুকি নাকি? ললিপপ খান? কই মুখে তো সেরকম কিছু দেখতে পাচ্ছি না!’
‘ধ্যাততেরি..! মুখ সামলে কথা বলুন! আমাকে কী দেখতে আন্টির মতো লাগছে?’
‘একদম। আমার কাছে তো অন্তত সেরকমই লাগছে! কেন, আপনার বয়স আরো কম বুঝি?’
‘আমি আন্টি হলে তো আপনিতো বুড়ো ভাম, দাড়িচুল পাকনা আঙ্কেল!’
‘গোঁফও আছে! ওটা কেন মিস করেছেন?’
‘আরে থামুন তো, একদম চুপ!’
‘ওহ তাই বুঝি? কিন্তু আপনার হিসাবে সামান্য একটু গড়বড় রয়েছে। আমার বয়স মোটেও ১৮র বেশি নয়। মাত্র ১৮ তে গিয়ে আটকে গেছে! আমার একমাত্র বাচ্চাটা ১২ তে আছে তো!! ওর জন্য অপো করছি। এবার আপনি খুশি তো?’
ব্যস কথা শেষ হওয়া মাত্রই ওহী হনহন করে দ্রুত বন্ধুদের নিয়ে চলে যায়। এ দিকে বেচারি সুমী রাগে ােভে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রীতিমতো ফোঁস ফোঁস করে জ্বলতে থাকে।
সেই দিনের সেই স্মৃতিময় দুরন্ত দিনগুলোর কথা আজ মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠতেই সুমী পিক করে হেসে ওঠে। কত দুষ্টু ছিল ওহীটা। আজো সমান দুষ্টু। কিন্তু কোথাও যেন ছন্দটা নেই। প্রেমের রসায়নটা তাদের মধ্যে বেশ ভালোই জমে উঠেছিল। টানা তিন বছর ছুটিয়ে প্রেম করার পর, বিয়ের পিঁড়িতে বসে দু’জন। কেউ কাউকে চোখে হারায় না। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম ব্যাচে একমাত্র তারা দু’জনেই ছিল সবচেয়ে সেরা জুটি। ওহীর চলাফেরা মুভমেন্ট অন্য দশটা ছেলেমেয়ের মতো ছিল না। ওর কথাবার্তা ও হাঁটাচলা থেকে শুরু করে পুরো লাইফ স্টাইলেও ছিল ভিন্নতা ও আভিজাত্যের ছাপ। একটা হাঁচি দেয়ার সময়ও ওহীর ব্যক্তিত্ব চরমভাবে ফুটে ওঠে। যেকোনো মেয়েকে পাগল করার মতো সব ধরনের মালমসলা ও রশদই রয়েছে তার মধ্যে। প্রেম হওয়ার পরের সময়গুলো আরো প্রাণবন্ত। অনেকটা স্বপ্নের মতো কেটে যেতে থাকে। আরো একদিনের ঘটনা। ডিপার্টমেন্টের পেছনে জারুল তলায় সবুজ চত্বরে পিঠে পিঠ লাগিয়ে দু’জনে বিপরীতমুখী হয়ে বসে রয়েছে। দখিনা বাতাসে দোল খাওয়া এলোকেশী চুলে গন্ধ শুঁকতে ব্যস্ত ওহী। সুমী মুগ্ধতা নিয়ে কথা বলে যায়।
‘ওহী বলো তো, তোমার চোখে আমাদের প্রেমটা কেমন?’
‘শোনো সুমী, আমাদের প্রেমটা সাদামাটা কোনো সাধারণ প্রেম নয়। একদম পিওর চিনিগুঁড়া প্রেম। সারাণ একটা ভিন্ন ফেভারে ভিন্ন আমেজে আমাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। মোহনীয় করে রাখে আমাদের দু’জনের দুটি সত্তাকে।’
সুমী মুগ্ধ হয় ওহীর ভিন্নধর্মী কথায়। চিনিগুঁড়া প্রেম বিষয়টা তাকে আকৃষ্ট করে। কথার জাদুতে সে মুহুর্মুহু খেই হারায়। শুধু ওহীর মুখে কথা শোনার জন্য সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপো করতেও রাজি আছে।
প্রেম-ভালোবাসা হারিয়ে যায় না। সত্যিকারের প্রেম-ভালোবাসা হলে তো কোনো কথাই নেই। পরিবর্তিত সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী হয়তো ধরনটা একটু বদলে যায়। ব্যস এটুকুই... কর্মব্যস্তময় জীবনের নানান বাঁকে পড়ে আগের মতো সময়ও দু’জন দু’জনকে দেয়া যায় না। কিন্তু সেটা সুমীকে বোঝাবে কে? সুমীর আপাদমস্তক ধারণা ওহী আগের মতো নেই। অনেকটা বদলে গেছে। আসলে তার মনে ঘোর সন্দেহের বাতিক তৈরি হয়েছে। একটা অস্থির ইঁদুর তার মনের মাঝে ক্রমে কুটকুট করে বিষিয়ে তুলেছে। ফলে নিত্যকার সাংসারিক জীবনের অন্যান্য কাজেও সে ঠিকমতো মন বসাতে পারছে না। তার ধারণা ওহীর তথাকথিত চিনিগুঁড়া প্রেম আর অবশিষ্ট নেই। সেটা আরো একধাপ নিচে নেমে গিয়ে মিনিকেট ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। সুমীর আশঙ্কা এভাবে নামতে নামতে একসময় কিছুই হয় তো অবশিষ্ট থাকবে না। ওহী সুমীকে অনেক বুঝিয়েছে, কয়েকবার দু’জনে মুখোমুখিও বসেছে। কাজ হয়নি। আসলে বিয়ের পরে হঠাৎ করে বাসায় একাকিত্ব থাকাটা সুমীর পে ভালো হয়নি। এভাবে অফিস কিংবা চাকরিবাকরি ফেলে রেখে বাসায় এসে বসে থাকাও ওহীর পে সম্ভব নয়। জীবনে আরো একটু সুখে স্বাচ্ছন্দ্যবোধে চলতে গেলে কিছুতো একটা করতে হয়। ঘরে বসে থাকলে চলবে না। অবশ্য কিছুণ সুমীকে বুঝালে বোঝে। ওহীকে ভুল বোঝার জন্য অনুতপ্তও হয়। নিজের মনে প্রোথিত সন্দেহের ইঁদুরটাকে মেরে ফেলতেও ইচ্ছে করে।
আজকের দিনটা একটু অন্যরকম। অফিস থেকে ওহী একটু তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। হাতে অনেক বাহারি রঙের ফুল, দামি চকোলেট ও নতুন জামাকাপড়। দরজা খুলতেই সুমী বিস্ময়ে ফেটে পড়ে। চৈতন্য হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা।
‘কী ব্যাপার, তুমি এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে?
‘সোনা ভেতরে ঢুকতে দেবে না?’
‘এসো ভেতরে এসো। কিন্তু হাতে এসব কী?’
ওহী সব কিছু একে একে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখে। সুমীকে দু’হাতে আলিঙ্গন করে সোফায় বসায়।
‘শোন লক্ষ্মীটি, প্লিজ কোনো প্রশ্ন করবে না। দ্রুত এই নতুন জামাকাপড়গুলো পরে এসো’
সুমীর ঘোর এখনো কাটছে না। হঠাৎ বিয়ের আগের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। এই তো সেই চিড়িগুঁড়া প্রেমের চেনা ফেভারটাও নাকে এসে লাগছে। হতবিহ্বল চোখে মুগ্ধতা নিয়ে সুমী বেডরুমে ঢোকে। মিনিট কয়েক পরে সেজেগুঁজে ড্রয়িংরুমে এসে থ বনে যায়। এলাহি কারবার। টেবিলে সাজানো বিরাট একটা কেক। চারপাশে রঙিন রঙিন ফিতা, বেলুন ও বাহারি ফুলে ফুলে গোটা রুমের আবহটা মুহূর্তে খোনলচে পাল্টে যায়।
‘সেকি! এসব কেন হচ্ছে? আজ তো আমাদের বার্থডে বা বিবাহবার্ষিকীও নয়!’
‘তো, তাতে কী হয়েছে? স্মরণ করে দেখ, আজকের দিনেই আমরা দু’জন-দু’জনার কাছে এসেছি, চিনিগুঁড়া প্রেমে আবদ্ধ হয়েছি।’
‘সত্যি...!!!’
সুমী অবাক হয়। পুরো বিষয়টা একটু একটু করে পরিষ্কার মনে পড়ে। আবেগে সিক্ত হয় মন। ওহীকে গভীর প্রেমে জড়িয়ে ধরে।
‘আমাকে মা করো সোনা। তোমাকে ভুল বুঝার জন্য।’
‘হয়েছে হয়েছে। স্মরণ রেখ, চিনিগুঁড়া প্রেম ছিল, আছে এবং সারাজীবন থাকবে। কখনো একটুও কমবে না। এবার আসো তো দু’জনে কেকটা কেটে দিবসটা সেলিব্রেট করি।’ হ


আরো সংবাদ



premium cement
গ্রেড-১ এ পদোন্নতি পেলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি ডা. রেয়াজুল হক ‘বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে এক দিনে এতগুলো ঘটনা ঘটতো না’ জুলুমের দায়ে মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনামকে পদত্যাগ করতে হবে : হেফাজত আমির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১,৮৯০ টাকা কমেছে খালেদা জিয়ার সাথে সৌদি রাষ্ট্রদূতের বৈঠক মাওলানা আতাহার আলীকে বাদ দিয়ে দেশের ইতিহাস রচিত হতে পারে না : ধর্ম উপদেষ্টা ‘মানবিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি’ ছাত্র সংঘর্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের উদ্বেগ কোনো পত্রিকা বন্ধে চাপ প্রয়োগ সহ্য করা হবে না : তথ্য উপদেষ্টা সিলেটে ব্যবসায়ী হত্যায় বাবাসহ ২ ছেলের মৃত্যুদণ্ড ভারতে মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় জামায়াতের প্রতিবাদ

সকল