২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পলায়ন

-

নাহ্... আর পারা যায় না। যা হওয়ার হবে, শত বাধা দিয়েও পৃথিবীর কোনো শক্তিই আজ আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। যে করেই হোক মনিরাকে নিয়ে আজ পালাবোই পালাবোÑ আমার সুপার প্ল্যান আপাতত এটাই।
ওর মাকে, আমার মাকে, ওর বাবাকে, আমার বাবাকেসহ সব... সব গার্জিয়ানকে বাঁকা করে, সোজা করে, অনুনয়-বিনয় করে, অনুরোধ করে, বিশাল বিশাল হুমকি দিয়েও বহুবার বহুভাবে বলেছি কেউই আমাদেরকে অনুমতি দেয় না তাই আমরাও এই দুঃসাহসিক পথ বেছে নিলাম। আজ কারো সাধ্য নাই আমাদের ঠেকায়।
সুফলা আর আমি আমরা দু’জনে গতকাল সব পরিকল্পনা করে রেখেছি। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড়, ওর গয়নাসহ যত বেশি পারি টাকা-পয়সা নিয়ে যাবো সাথে। যাতে করে অন্তত ২ সপ্তাহ ভালোভাবে চলতে-ফিরতে মানে থাকা-খাওয়ায়, ঘোরা-ফেরায় কোনো অসুবিধা না হয়।

আজ রাতটা সেই ঐতিহাসিক সময়।
সব ঠিকঠাক। মোবাইলে অ্যালার্ম দেয়া আছে। ঠিক রাত ৩টার সময় আস্তে করে ঘুম থেকে উঠে সুফলাকে ডেকে তুলবো। হাতমুখ ধুয়ে আলাদা করে রাখা কাপড়গুলো পরে আগে থেকেই রেডি করা ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো। খাওয়া-দাওয়া বাদ, ওসব পরে এক সময় হবে।
সুফলাকে রাতেই বলে রেখেছি যে, রাত ৩টায় উঠে যেন আবার সাজুগুজু করতে করতে দুপুর ১২টা না বাজিয়ে দেয়। শাড়ি পরার দরকার নেই, থ্রি-পিস পরে ওপরে কালো বোরখাটা পরে নিলেই চলবে। আর... এদিকে-ওদিকে ৫০-৬০টা পিন-সেইফটিপিন মারার তো কোনো দরকারই নেই। লিপস্টিক, পাউডার, ক্রিম-টিম এগুলোর তো প্রশ্নই আসে না। সুফলা সব বুঝে নিয়েছিল। আশা করি ও সেভাবেই কাজ করবে আর আমরাও তার সঠিক সুফলটাই পাবো।
পাড়ার রিকশাওয়ালা মতিনের সাথেও ভাড়াটারা মিটিয়ে চুক্তি করে রেখেছি রাত ৩টায় আমাদের বাড়িতে এসে আমাদেরকে নিয়ে অটোস্ট্যান্ডে দিয়ে আসবে। সেখান থেকে এক অটোওয়ালার সাথে সব মিটমাট করা আছে একদম বাস-স্টপেজ। না না... সেখানে থেকে আবার কোন বাসওয়ালার সাথেও কন্টাক করেছিÑ এরকম যেন ভাববেন না। বাস-স্টপেজ পর্যন্ত যেতে যেতেই সকাল ৬টা বেজে যাবে তখন বাস এমনিতেই ছাড়ে, কোনো সমস্যা হবে না। একদম নিখুঁত পরিকল্পনা।

সম্পূর্ণ প্ল্যানটা একদম শতভাগ সঠিকমতোই করা আছে, তবুও এটা-ওটা চিন্তা করতে করতে ঘুমাতে গেলাম রাত প্রায় ১টায়।
ঠিক রাত ৩টায় মোবাইলটা বাজতে থাকল আর আমি আছি আমার ঘুমের ঘোরে... ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কখন যে অ্যালার্মের সাউন্ডটা বন্ধ করে দিলাম জানি না।
এর মধ্যে আরো কয়েকবার (স্নোজিং...) ফোনের সাউন্ডটা বন্ধ করেছি অথচ আমি নিজেই জানি না।
তারপর যখন আমার ঘুম ভাঙল তখন সময় সকাল সাড়ে ৮টা! লাফ মেরে বিছানাতে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। বুঝতে আর বাকি রইলো না আজকের রাতটা বৃথাই গেল। সাথে সাথে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ২২টা মিসড কল, রিকশাওয়ালা আর অটোওয়ালা দিয়েছে। কল অ্যালার্ট সিস্টেম বায়োড্রেশন করা ছিল বলে টের পাইনি। কি করবো বুঝতে পারছি না কি জবাব দেবো ওদের।
নাহ্, আজ আর হলো না রিকশা আর অটোওয়ালাকে বলে-কয়ে ম্যানেজ করলাম আগামীকাল আবার একই সময়ে, একই প্ল্যান।
পরের দিন আর মিস করলাম না ঠিক সময়ে উঠে তাড়াতাড়ি করে গেলাম সুফলার বিছানার পাশের জানালায় টোকা দিতে। টোকা দিচ্ছি আর ফিস-ফিস করে ‘সুফলা সুফলা’ বলে ডাকছি। শেষমেশ সুফলাও ঘুম ছেড়ে উঠলো। তারপর আমিও দৌড়ে দরজার দিকে গেলাম আর জিজ্ঞেস করলামÑ মা বুঝতে পারেনি তো? সেও আস্তে আস্তে উত্তর দিলো মনে হয় না। পাঠক, এই মা কিন্তু মনিরার মা না আমার মা। মনিরাকে নিয়ে ভাগতে পারি এটা অনুমান করেই আমার মা মনিরাকে পাহারা দেয়ার জন্য মনিরাকে নিয়ে এক বিছানায় ঘুমায়। এবার চিন্তা করেন কি বিপদে আছি! যাকে নিয়ে পালাবো তাকে আমার নিজের মা-ই পাহারা দেয়!
আচ্ছা সুফলা, যা যা করার কথা ঠিক সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে করে রওনা দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে নাও। আমার কিছু করার নেই রেডিই আছি। তুমি তৈরি হও, আমি রিকশাওয়ালাকে ফোন করে খবর নিচ্ছি কোথায় আছে। ফোন করতে যাবো তখনই দেখি রিকশাওয়ালা মতিন রিকশা নিয়ে হাজির। ওকেও ইশারায় চুপচাপ দুই মিনিট দাঁড়াতে বললাম। মতিন হ্যাঁ সূচক সায় দিলো।
সুফলাকে বারবার বলেছি সাজুগুজুর চেষ্টা যাতে না করে। কে শুনে কার কথা... ও তাই করছে। জোড় করে তার সাজাসাজির সমাপ্তি টানলাম।
সব হয়ে গেছে আর এক সেকেন্ডও দেরি নয় মতিন আর আমি ছোট-বড় সব ব্যাগ নিয়ে রিকশায় তুললাম। মনিরা রিকশায় উঠে বসল। আর আমি... আমি রিকশায় না উঠে মতিনকে দোয়া ধরতে বলে নিজেও হাত তুলে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলাম। তারপর পালালাম। হ


আরো সংবাদ



premium cement
জামিন পেলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন করা হবে : শ্রম সচিব ডেঙ্গুতে আরো ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৩৪ নোয়াখালীর আ’লীগ নেতা ঢাকা থেকে গ্রেফতার ঢাকায় যখন-তখন সংঘর্ষ-বিক্ষোভ, ইচ্ছে হলেই রাস্তা বন্ধ বিনা সুদে লাখ টাকা ঋণের প্রলোভন : মূল হোতা মোস্তফা আটক উন্নয়ন ব্যয়-বিনিয়োগ স্থবিরতায় অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা পরিকল্পনা উপদেষ্টার দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে : সেলিম উদ্দিন ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে বৈঠকের ডাক বৈষম্যবিরোধীদের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

সকল