২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চাচা

-

৩০ বছর আগে দাদীমার মৃত্যুর পর দাদাজান আবার বিয়ে করেন। দাদাজানের দ্বিতীয় সংসারে একটিই সন্তান দুনিয়ার মুখ দেখে। ছেলে সন্তান। মানে আমার ছোট চাচার কথা বলছি।
আমার যখন শৈশব, চাচা তখন টগবগে যুবক। সেই টগবগে যুবক আমার শৈশব সঙ্গী হয়ে ওঠেন। রক্তের টান বলে হয়তো আব্বার থেকেও চাচা আমাকে বেশি ভালোবাসতেন। তাই আমার একদিকে পৃথিবী তো অন্যদিকে এই চাচা।
চাচার সাথে দূর-দূরান্তে ছুটে চলার অভিজ্ঞতাও আমার অনেক। অনেক দূরের অচেনা পথে যাওয়ার বেলায় চাচা প্রায়ই বলেন, ‘অচেনাকে চিনে নাও। সাহস বাড়বে। এমনিতে তুমি ভীতুর ডিম। পুরুষের ডর ভয় থাকতে নেই।’
চাচার কথা সত্য। আমি খুবই ভীতু স্বভাবের। ঘরের চালে পাতা পড়ার শব্দ হলে আমার মনে হয় ভূতে ঢিল মেরেছে। পুকুরে নেমে গোসল করলে মনে হয় এই বুঝি রাক্ষস এসে আমার দুই পা টেনে পাতালপুরীতে নিয়ে যাবে। সন্ধ্যারাতে বাতাসে গাছের পাতা নড়ে চড়ে উঠলে মনে হয় পাশের অরণ্য থেকে বুঝি দানব এসে গাছের ডালে হানা দিচ্ছে। চাচা আমার মনের এসব ভয়ালো ভাবনা শুনে হেসে লুটিপুটি খেয়ে বলেন, ‘বুকে সাহস রাখো ভাতিজা। আমার মতো সাহসী হও।’
চাচার মতো সাহসী হওয়ার বাসনা করতে করতে আমি মনে মনে ভাবি, আমার এই চাচা বিশাল সাহসী। তার কোনো কিছুতেই ভয় নেই। একবার চাচা গল্প করলেন এভাবেÑ ‘আট বছর আগে বাজারে রাজনৈতিক কোন্দল নিয়ে দুই দলের বন্দুকযুদ্ধ। আমি নির্ভয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিময় রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলাম। বন্দুকের ভয় পাইনি।’
শুনে আমি বললাম, ‘বলেন কি! আমি হলে তো ভয়ে মরেই যেতাম।’
চাচা হো হো করে হেসে বললেন, ‘তা তো যাবেই। তুমিতো ভীতু। আমার মতো সাহস নেই তোমার।’
২.
আজ আমরা পদিপাড়া যাচ্ছি। দাওয়াত খেতে। চাচার বন্ধুর বাড়িতে। সেখানে আকিকার অনুষ্ঠান। চাচা আমাকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। রিকশায় চড়ে আমরা পদিপাড়ায় রওনা দিচ্ছি।
রাজপথ বেয়ে রিকশা চলছে। হঠাৎ কয়েকটা উঠতি বয়সী ছেলে একটা যুবক ছেলেকে বাঁশ লাঠি দিয়ে ধাওয়া করছে আর সমবেত কণ্ঠে রাগী বুলি ছাড়ছে, ধর ধর ধর, আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চাচা বললেন, ‘ভয় পেওনা। আমি তো আছি।’
সত্যিই তো। একজন সাহসী চাচা থাকতে আমার ভয় কেন! শক্ত করে চাচার হাত জড়িয়ে ধরলাম। রিকশা দ্রুত চলছে পদিপাড়ার দিকে। হঠাৎ কিসের এক বিকট শব্দ। চাচা রিকশা থেকে নেমে ‘বোমা বোমা’ বলে পেছনের দিকে দৌড়াতে লাগলেন। আমি এত ভীতু, তবু আশ্চর্যজনকভাবে এই বিকট শব্দে আমি কোনো ভয় পাইনি। রিকশা থেকে নেমে দেখি চাচা তখনো ‘বোমা বোমা’ বলে পালাচ্ছেন।
শেষে জানা গেল ওটা বোমা ফাটার শব্দ ছিল না। ছিল রিকশার টায়ার ফেটে যাওয়ার বিকট শব্দ। চাচা দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি চলে এসেছেন বলে সেদিন আর আমাদের আকিকার অনুষ্ঠানে পদিপাড়ায় যাওয়া হয়নি। বাড়ি এসে চাচাকে বললাম, ‘আপনি না সাহসী! ওটা তো বোমা নয়, রিকশার টায়ার ফাটার শব্দ ছিল।’
চাচা নিচু স্বরে বললেন, ‘আমি ভেবেছি আশপাশে কোথাও বোমা মেরেছে কেউ।’
বললাম, ‘বোমা হলে সমস্যা কি! আপনি তো বন্দুকযুদ্ধেও ভয় না পেয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেছেন!’
চাচা রাগী গলায় বললেন, ‘এখান থেকে যাও তো। তুমি বেশি কথা বলো।’
মনে মনে বলি, ‘চাচা, আপনি কেমন সাহসী, আজ প্রমাণ পেলাম।’

 


আরো সংবাদ



premium cement
লাখ টাকার প্রলোভনে শাহবাগে এত লোক কীভাবে এলো? কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদির মৃত্যু হিজবুল্লাহ কমান্ড সেন্টারে ইসরাইলি হামলা রাজশাহীতে প্রথম আলো পত্রিকায় আগুন ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে : পররাষ্ট্র সচিব আড়াইহাজারে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১৬ শ্রম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতিতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রশংসা আইপিএলে রেকর্ড গড়লেন ১৩ বছর বয়সী বৈভব সিলেটে ট্রাক ও বাসচাপায় নিহত ২ মানিকগঞ্জে প্রলোভন দেখিয়ে শাহাবাগে লোক নেয়ার মূলহোতা দবিরসহ আটক ৫ মধ্যাহ্নভোজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ

সকল