২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চলো এবার বিশ্ব ডাংগুলি কাপ খেলিহ মুহাম্মদ কামাল হোসেন

-

আমার সুন্দরী প্রেয়সী বউ টিয়াপাখির প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটু কাসুন্দি ঘেঁটে আসা যাক।
অবশেষে শেষ হয়েছে বাপরে বাপ বিশ্বকাপ! বিশ্বকাপ না ছাই, এ যেন বিশ্বচাপ! হাসি আনন্দ, কান্নাকাটি ও অশ্রুপাতে রীতিমতো লেজেগোবরে অবস্থা। চতুর্দিকে শুধু চাপাচাপি আর কাঁপাকাঁপি। হরিকম্পন অবস্থা। বিশ্বকাপে পুরো বিশ্বটাই যেন কাঁপে! সবাই হাইভোল্টেজ জ্বরে আক্রান্ত। সর্বত্র আবেগ-ভাবাবেগ ও উন্মত্ত ভালোবাসায় থরথর অবস্থা। পুরো বিশ্বে যখন এই থমথমে রমরমে অবস্থা, বাঙালিরাও বসে নেই। বসে থাকলে কি আর চলে? সুতরাং মজ্জাগত ভিন্নতা ও চরিত্র দোষে আমরা আরো দুই কাঠি সবার ওপরে! তা ছাড়া আমরা বিশ্বের অন্যদের মতো হতে যাবো কোন দোষে? সবকিছুতে আমাদের মাতামাতি হাতাহাতি একটু বেশি। শুধু শুধু মামুলি ঠুনকো আবেগ-ভাবাবেগে আমাদের চিঁড়ে ভেজে না। তাই সুযোগ বুঝে হুজুগে জাতি হিসেবে মারামারি ও হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাই। আজ এখানে মারামারি-ছ্যাঁচাছ্যাঁচি করছি তো কাল ওখানে। প্রতিদিন পেপার পত্রিকা খুললে ঢিঁ ঢিঁ পড়ে যায়। এ রকম প্রায় ডজনে ডজন কেস স্টাডির ঘটনা পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিত্যনৈমিত্তিক খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, আনন্দ মিছিল, পতাকা ওড়ানোর পাশাপাশি গরু-মহিষ, ছাগল-খাসি ও দুম্বা একের পর এক জবাই আর বিরানি উৎসব চলছে তো চলছেই। এ যেন সার্কাস খেলা! কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধবে কে? সবাই বাপের টাকা দিয়ে লঙ্গরখানা খুলে বসে আছি! নিস্তব্ধ রাতের আঁধার খাক করে দ্রিমদ্রিম আতশবাজিতে কতণ পরপর মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে ঘটিবাটি ও পুরো জনপদ। বিশ্বকাপ (!) বলে কথা, খরচ নিয়ে নো কম্প্রোমাইজ! ধর, মার, কাট পেরেক তক্তা!
এবার আমার বউ টিয়াপাখির কথায় আসা যাক। গ্রুপপর্বে ও আমাকে দুই দফায় হলুদ কার্ড দেখালেও শেষ ষোলোর নকআউটপর্বে সরাসরিভাবে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। স্বামী হয়েছি তো কী? ওর মাথাতো আর কিনে নিইনি! সুতরাং কোনো ছাড় নেই। তদুপরি ভাবগতিকও মোটেও ভালো ঠেকছে না। সম্পর্কটাই যেন যায় যায় অবস্থা! ৩২ বছরের দাম্পত্যজীবনের শেষ পেরেকটা বুঝি ঠুকল বলে! টিয়াপাখি বরাবরই ব্রাজিল আর আমি আর্জেন্টিনা। ঝগড়া না বেধে উপায় আছে? ও আমাকে গ্রুপপর্বে দুই দফা হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে বলেছিল, ‘চুপ, একদম চুপ। কোনো রা করবে!’
ব্যস, আমিও চুপ। আমার একটাই দোষ আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করি কেন? আমি নাকি ঘরের শত্রু বিভীষণ! দেখুন কাণ্ড, আমার ভাত-পানিও কয়েক দিন বন্ধ করে দিলো। এদিকে আমি হোটেলে হোটেলে খেয়ে রীতিমতো ফতুর বন গায়া। কোনো কোনো দিন আমি পেটে বালিশ বেঁধে ুধার জ্বালায় রাতযাপন করেছি। কেউ দেখার ছিল না। ুধার জ্বালায় সারা রাত আকাশের তারা গুনেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের অবস্থাও আরো বেগতিক। ওখানেও টিয়াপাখি ইতোমধ্যে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক বিয়ের আগে জানলে নাকি বিয়েটাই হতো না। ভাবখানা এ রকম, এমন বদমাশ ছেলেকে আজকাল কেউ বিয়ে করে? গ্রুপপর্বটা কোনো মতে পেরিয়ে শেষ ষোলোতে পৌঁছার পর, আমার আর রে নেই। সরাসরি অত্যাচার ও নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে আমার ওপর। টিয়াপাখি আমাকে সরাসরি লালকার্ড দেখিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে! বলেছে, ‘তোমার কপালে ঝাঁটা মারি! যদি আমার পিছে পিছে আসো তো খবর আছে!’
আমি অনেক কাকুতিমিনতি করে বলেছি, ‘সোনা যেও না, তুমি থাকো। আমি চলে যাই তোমার বাপের বাড়িতে!’
মুহূর্তে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে সে। বলে, ‘এই ফাজিল, চুপ করো। আর একটা কথাও বলবে না।’
আমি তড়াক করে তেতো ঢোক গিলে চুপ করে থাকি। যদিও আমি মনে মনে বিড়বিড় করে বলি, ‘সোনা, ফাজিল আমি না তুমি, তুমিইতো ব্রাজিল!’
কিন্তু ততণে ওর অগ্নিমূর্তি আমাকে রীতিমতো ভয় পাইয়ে দেয়। আমার দল আর্জেন্টিনা শেষমেশ আর শেষ ষোলো টপকাতে পারেনি। পরিচিত এক বন্ধুর নিকট সে খবর পাঠিয়েছে, ‘ওপরওয়ালা নাকি ঠিক ঠিক বিচার করেছে! আমার লাফালাফি নাকি চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে!’
আমিও পাল্টা খবর পাঠাই, ‘টিয়াপাখি, তোমার ব্রাজিলের জন্য রইল একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। তোমার জন্য রইল ভালোবাসা। সে মুখ বাঁকা করে বন্ধুকে বলেছে, শকুনের দোয়ায় নাকি গরু মরে না!
এই হলো আমার আর প্রেয়সী টিয়াপাখির বর্তমান দিনলিপি ও অবস্থা। কোনো কর্নার, থ্রোয়িং ও ফ্রি-কিকেও টিয়াপাখির পোস্টে বল জড়াতে পারছি না। প্রেয়সীর ডিফেন্স বড্ড কড়া। কোনোমতে টপকানোর সুযোগ পাচ্ছি না। শুধু ভাগ্যগুণে একটা পেনাল্টির আশায় তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতে থাকতে অবশেষে বিশ্বকাপ শেষ। পেনাল্টি আর পাইনি। আমার গন্তব্যের ট্রেন শেষ ষোলো পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেছে। আর প্রেয়সী আরো একটু এগিয়ে কোয়ার্টারপর্ব পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে। শেষ আটের কুফা আর টপকাতে পারেনি। অবশেষে নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বহুল আলোচিত-সমালোচিত বিশ্বকাপ ফুটবল। শেষ হয়েছে আমার আর টিয়াপাখির বিশ্বকাপও। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হলেও দুইজনের সম্পর্কের তিক্ততার তিক্তরসের রেশ রয়ে গেছে এখনো। কয়েক দফায় যোগাযোগ করে প্রেয়সীর মন গলাতে কিংবা টলাতে পারিনি।
অগত্যা নিরুপায় হয়ে আমি প্রেয়সীর মোবাইলে কম্পিত হাতে ডায়াল করি। দু’বার চেষ্টা করার পর তিনবারের সময় টিয়াপাখি ওপর প্রান্ত থেকে সুমিষ্ট গলায় মিহি সুরে বলে, ‘হ্যালো, শুনতে পাচ্ছ?’
‘টিয়াপাখি, আমার টিয়াপাখি! প্লিজ, জলদি ফিরে এসো। আর রাগ করে থেক না। আমি মরে যাবো!’
‘এত দিনেও মরোনি!’
‘তোমাকে শেষবারের মতো দেখব বলে! তুমি বোঝ না?’
‘আচ্ছা হয়েছে হয়েছে, আর মরতে হবে না। আমি কালই ফিরে আসছি।’
‘সত্যি!’
‘সত্যি, সত্যি তিন সত্যি।’
‘বাহ! সোনা জলদি ফিরে এসো। আজ থেকে ওসব ফুটবল বিশ্বকাপ-টিশ্বকাপ বাদ দিলাম। এখন থেকে আমরা বিশ্ব ডাংগুলি কাপ খেলব। আর কোনো ঝামেলা হবে না আমাদের মধ্যে।
‘হি হি। আসছি সোনা।’


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে প্রথম আলো পত্রিকায় আগুন ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে : পররাষ্ট্র সচিব আড়াইহাজারে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১৬ শ্রম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতিতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রশংসা আইপিএলে রেকর্ড গড়লেন ১৩ বছর বয়সী বৈভব সিলেটে ট্রাক ও বাসচাপায় নিহত ২ মানিকগঞ্জে প্রলোভন দেখিয়ে শাহাবাগে লোক নেয়ার মূলহোতা দবিরসহ আটক ৫ মধ্যাহ্নভোজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর নিহত জামায়াতের সাথে ইইউ অন্তর্ভূক্ত ৮টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক

সকল