২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উপকারের নাম চড়

-

আমার মাথায় বুদ্ধি কমÑ এরকম একটা অপবাদ প্রতিনিয়ত হজম করি আমি। এই অপ্রিয় মিথ্যা বাণীর তীর আমার দিকে ছোঁড়েন যিনি, তিনি আমার আব্বা। আজ পর্যন্ত এই মানুষটি আমার কোনো ভালো কাজ চোখে দেখেননি, অপকর্ম ছাড়া। অবশ্য আমি যে অপকর্ম করি না, এটা ভুল কথা। কেয়াদের বরই গাছে ঢিল মারা, বীণাদের বাগানের গোলাপ ছেঁড়া, রবিনের দাদাকে ‘বোম বাঁশ’ বলে দূর থেকে ডেকে ক্ষেপানো, বড় ভাইয়ার পকেট থেকে মাঝে মধ্যে দশ টাকার নোট গায়েব করাÑ এসব অপকর্মের বিচার আব্বার কাছে ঠিকই চলে যায়। ফলে আব্বা আমাকে কঠিন রাগ না দেখিয়ে আদুরে গলায় বলেন, ‘এসব মন্দ লোকের কাজ। আমার ছেলে মন্দ নয়। মানুষকে ক্ষতি না করে, উপকার করো, দেখবে লোকে ভালোবাসবে।’
আব্বার কণ্ঠের এমন মধুর কথায় আমি গলে যাই। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কারো ক্ষতি করবো না। পারলে উপকার করবো। আব্বাকে বললাম, ‘কিভাবে মানুষের উপকার করা যায়?’
আব্বা বললেন, ‘মানুষকে উপকার করার হাজারো নিয়ম আছে। অন্ধকে পথ দেখানো, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, কারো ঘরে আগুন লাগলে আগুন নেভানো, পথশিশুদের ভালোবাসাÑ এসব যাবতীয় কাজই হলো পরের উপকার। সদা এসব কাজে নিয়োজিত থাকলে দেশ ও দশে ভালো বলবে।’
আব্বার কথাগুলো আমলে নিতে শুরু করেছি আমি। রোজ পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকি, কিন্তু অন্ধ কোনো লোককে পাই না। বুড়ো বয়সের কাউকে দেখলে বলতে ইচ্ছে করে, ‘আপনি ঠিকঠাক মতো চোখে দেখেন তো, বাড়ি দিয়ে আসবো?’
কোথাও আগুন লেগেছে, এমন সংবাদও কানে আসে না। অথচ মনে মনে চাই কারো বাড়ি আগুন লাগুক। আগুন লাগতে বালতি নিয়ে ছুটে যাবো সেখানে। তারপর পানি মেরে আগুন নিভিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করব।
২.
আজ একজন অন্ধ লোকের সন্ধানে পথের মোড়ে এসে দেখি আব্বার বয়সী একজন ভদ্রলোক রিকশায় বসে পান রাঙানো ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন। ব্রেকে সমস্যা বলে রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে ব্রেক মেরামতে ব্যস্ত। আরোহী ভদ্রলোক যেভাবে বসে আছেন, তার লুঙ্গির নিচের অংশ রিকশার চাকার ওপর লেগে আছে। রিকশা চলতে থাকলে চলমান চাকায় লুঙ্গি পেঁচিয়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকায় ভদ্রলোককে উপকার করার ভাবলাম। কাছে গিয়ে বললাম, ‘চাচা মিয়া, লুঙ্গি উপরে উঠান।’
সাথে সাথে চাচা মিয়া আমার গালে কষে এক চড় মেরে বললেন, ‘বেয়াদব কোথাকার, আমি তোর বাপের বয়সের। তুই আমারে লুঙ্গি উপরের উঠাইতে কস!’
উপকারের বিনিময়ে চড় খেয়ে বাড়ি এসে আব্বাকে পুরো ঘটনা বললাম। আব্বা বললেন, ‘তুমি যেভাবে বলেছো, এটাতে অশ্লীলতার গন্ধ আছে। সুন্দর করে বলতেÑ চাচাজান, চাকার ওপর থেকে লুঙ্গিটা সরান। তাহলে চাচা মিয়া রাগ করতেন না।’
আব্বার কথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম।


আরো সংবাদ



premium cement