বিশ্বকাপ রম্য
- তারেকুর রহমান
- ০৫ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
চাপাবাজ বদরুল
বদরুলের স্বভাব হলো বুঝে হোক না বুঝে হোক সব কিছুতে নাক গলাবে এবং সব কিছুতেই পণ্ডিতি করবে। এ নিয়ে তাকে বহুবার অপমান হতে হয়েছে। তাতে কী? বদরুল কিছু দিন পর আবার আগের রূপে ফিরে আসে। বিশ্বকাপ নিয়ে তারা চাপাবাজি চলছেই। অমুক দল তমুক দল। অমুক খেলোয়াড় তমুক খেলোয়াড় নিয়ে সব পরিসংখ্যান তার জানা আছে। খেলা দেখতে বসলে বিভিন্ন খেলোয়াড় সম্পর্কে পরিসংখ্যানগুলো বদরুল সবাইকে বলে দেয়। বদরুল যত তথ্য দেয় তার কোনো তথ্যই সঠিক না। মেসি নেইমার রোনালদোকে নিয়ে ও নানা উদ্ভট তথ্য বদরুলের জানা আছে। মেসি কিভাবে খেলায় এলো তা নিয়ে এক নতুন গল্প ফেঁদে দিলেন বদরুল। মেসি তখন খুব ছোট। একদিন সে মাঠে খেলছিল। মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ। হঠাৎ একটা বল এসে তার সামনে পড়ল। কে মারল এই বল? আশপাশে কাউকে দেখতে পেলেন না। দূরে মাঠে একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি এই বলটা মেরেছ? ছেলেটি বলল, হুম আমিই মেরেছি। আর্জেন্টিনার কোচ ভাবল এই ছোট্ট ছেলে এতদূর পর্যন্ত যেহেতু বল আনতে পারল সে একদিন বড় প্লেয়ার হবে। সেখান থেকেই মেসিকে নিয়ে আসা হলো। আস্তে আস্তে সে বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠল।
রোনালদোর গল্পটা আরো মজার। রোনালদো গরিব ঘরের ছেলে ছিল। সে বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল নিয়ে নানা খেলা দেখিয়ে টাকা উপার্জন করত। বলের নানা কারিশমা রোনালদোর আয়ত্তে ছিল। দর্শকেরা তার কারিশমা দেখে টাকা দিত। এ দিয়েই তাদের অভাবের সংসার চলে যেত। একদিন ফিফার এক লোক দাঁড়িয়ে রোনালদোর বলের কারিশমা দেখল। অবাক হয়ে যায় তার কারিশমা দেখে। তখনই সে রোনালদোকে সেখান থেকে নিয়ে আসে। তার কারণেই আজ আমরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেয়েছি।
বদরুল এ ধরনের গল্পগুলো বানাতে পারলে খুব খুশি হয়। নেইমারকে নিয়েও একটা গল্প বানিয়েছে। নেইমারদের ফুটবলের ব্যবসা ছিল। ফুটবল নিয়ে তাকে দেশে বিদেশে নানা জায়গায় ঘুরতে হতো। একদিন নেইমার ভাবল তারা ফুটবল বানায় অথচ সে খেলা পারে না। এটা কেমন দেখা যায় না? তাই সে ফুটবল খেলা শিখতে লাগল। অনেক দেশে ঘোরার কারণে তার অনেক দেশের ফুটবল নিয়ে ভালো একটা আইডিয়া হয়। একবার ব্রাজিলে ফুটবলার খোঁজার একটা প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে শুধু একজন ফুটবলার নেয়া হয়। আর সে হলো নেইমার।
বিশ্বকাপ চলতে লাগল বদরুল এ রকম নানা গল্প তৈরি করতে লাগল। তার চাপাবাজি শোনে কেউ বিশ্বাস করে না। আবার কেউ আছে খুব অবাক হয়ে শোনে।
সেনেগাল সাপোর্টার আলেয়া
আলেয়া বেগম তার নাম নিয়ে বড়ই অসন্তুষ্ট। তার কথা হলো তার নামটা আরো আধুনিক হওয়া উচিত ছিল। এখনকার যুগে কেউ এ রকম নাম রাখে! তাই আলেয়া বেগম নামকে কিছুটা সংপ্তি করে নাম রেখেছে আলো। সবাইকে বলে দিয়েছে তাকে যেন আলো বলে ডাকে। কেউ কেউ তাকে আলো বলে ডাকে। তবে দুষ্টরা তাকে আলু বলে ডাকে। আলু বললে আলেয়া বেগম খুব রাগ হয়।
আলেয়া বেগম খুবই রূপসচেতন মেয়ে। সারা দিন শুধু মেকআপ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় ও মেকআপ নিয়েই কথা বলেন। অতিরিক্ত মেকআপের কারণে মাঝে মধ্যে মেকআপ ভেসে ওঠে। এটা নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করে। তাতে আলেয়া বেগমের কিছু যায়-আসে না।
বিশ্বকাপ আসার পর খেলা নিয়ে তার খুব আগ্রহ দেখা দিলো। যদিও সে খেলার কিছুই বোঝে না, তার পরও খেলা নিয়ে কৌতূহল দেখা দিলো। বান্ধবীদের বলল, ‘আচ্ছা আমি কোনো দল সাপোর্ট করব?’
‘তোর যে দল ভালো লাগে সে দল সাপোর্ট কর।’
‘আমি তো খেলা অত বুঝি না। তোরা একটু বলে দে।’
আলেয়া বেগমের বান্ধবীদের মাথায় দুষ্টবুদ্ধি এলো। তারা বলল, ‘তুই সেনেগাল সাপোর্ট কর।’
‘সবাই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা করে আমি সেনেগাল কেন করব?’
‘আরে বোকা সেনেগালের প্লেয়াররা সব সুন্দর সুন্দর। দেখতে একদম তোর মতো। তাই তুই সেনেগাল সাপোর্ট করবি।’
আলেয়া বেগম বান্ধবীদের কথা শোনে খুব খুশি হয়।
কাসে স্যার এসে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কে কোন দল সাপোর্ট কর? কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা কেউবা জার্মানি বলল। একমাত্র আলেয়া বেগম বলল, সে সেনেগাল সাপোর্ট করে। স্যার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কেন সেনেগাল সাপোর্ট কর?’
‘স্যার, সেনেগালের প্লেয়ারেরা সুন্দর সুন্দর। ওরা দেখতে আমার মতো। তাই সাপোর্ট করি।’
এ কথা শুনে স্যারসহ কাসের সবাই হো হো করে হাসতে লাগল।