আমি যখন লাইন্সম্যান
- মুহাম্মাদ সোহাগ
- ০৫ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
শহরের কলেজ মাঠে বড় পরিসরে আয়োজিত হলো একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের। আর আমি তাতে সহকারী রেফারি বা লাইন্সম্যান। প্রচুর দর্শকের জমায়েত, হাই প্রোফাইল অতিথিরা তো আছেনই সাথে ক্যামরাওয়ালা সাংবাদিকেরও অভাব নেই। একেবারে সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস মানের একটা ম্যাচের আয়োজন করেছে আয়োজকরা। এত বড় একটা ম্যাচের সহকারী রেফারি হওয়াটা আমার জন্য ছিল খুবই গর্বের। সে কারণে আমি খুব চেষ্টা করতে লাগলাম যেন আমার দায়িত্বটা সম্পূর্ণ নিখুঁতভাবে পালন করতে পারি।
আমি পূর্ণ মনোযোগ দিলাম খেলা পরিচালনায়। হঠাৎ পেছন থেকে কিছু নারী কণ্ঠের কথোপকথন কানে এলো। কথাগুলো ছিল এরকমÑ এই লাইন্সম্যান একটু পরপর এখানে আইসা দাঁড়ায় ক্যান রে! ডাক দিয়া কিছু ক তো হালারে। ভাব লয় রে... ভাব লয়। এখানে আইসা দাঁড়াইবো না ক্যান? এখানে কয়েকটা স্মার্ট মেয়ে দেখছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
বেশ বিব্রতকর অবস্থায় মধ্যে পড়েও পেছন ফিরে দেখার চেষ্টা করলাম। ফিরে দেখি ১০-১২ জন কলেজছাত্রীর একটা গ্রুপ। সবাই কলেজ ড্রেস পরিহিত।
ওদের কথাগুলো যতটা খারাপ লাগল ঠিক ততটাই ভালো ছিল ওদের চেহারা আর সাজসজ্জা। ওদের দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সারা বডিটা হ্যাং হয়ে গিয়েছিল! ওরা সবাই এতই সুন্দরী ছিল যে, ওদের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সব দুঃখকষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম। যাক, সেসব কথা অন্য দিন বলব এখন যা বলতে চেয়েছিলাম সেটিই বলি।
আমি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায়ও তাদের চলতে থাকা মন্তব্য নামক এটম বোম্বের আঘাতে এক সময় হ্যাং অবস্থা থেকে স্বাভাবিক হলাম। তার পর তাদের মন্তব্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানলাম, আমি নাকি বেশির ভাগ সময় ওই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে থাকি আর মেয়েগুলোর ধারণা ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই আমি ওখানে বারবার গিয়ে দাঁড়াই। একটু চিন্তা করে দেখলাম আসলেই আমি এই জায়গাটাতে প্রায় সময় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। নিজেই নিজেকে শুধরানোর ল্েয মনস্থির করলাম এর পর থেকে প্রয়োজন হলেও এখানে এসে আর দাঁড়াব না।
যেই কথা সেই কাজ, ওখানে প্রয়োজন হলেও আর গিয়ে দাঁড়াচ্ছি না। এর জন্য অবশ্য নিজের দায়িত্ব পালনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল।
খেলা নব্বই মিনিটের পরও আরো ৫ মিনিট ও ১০ মিনিট শেষ। এখন পর্যন্ত কোনো দলই গোল দিতে পারেনি। এত সময় ধরে খেলা গোলশূন্য থাকাতে খেলোয়াড়, দর্শক, অতিথিরাসহ সবাই বেশ বিরক্তি নিয়ে মোচরা-মুচরি করছে। আমার নিজেরও খুব অস্বস্তি লাগছে। এর মধ্যই খেলোয়াড়ের শটে বলটা সাইড সীমানার দিকে দ্রুত গতিতে আসছে নিশ্চিত আউট হবে। তখন কি যেন মনে করে কিছুটা রাগেই বলটাতে দিলাম জোরে এক শট। শট দিয়েই গতির কারণে কিছুটা ঘুরে অন্য দিকে ফিরতে হলো। সাথে সাথে মাঠের চার পাশের দর্শকের ‘গোল গোল’ চিৎকার কানে এলো। সাথে সাথে ঘুরে দেখি আমার দেয়া শটেই বল চলে গেছে সোজা গোল পোস্টের ভেতরে। রেফারি গোলটা তখনই বাদ করে দেন। ওটা ধরারও কথা না।
খেলা শুরু হলো। আমিও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি। খেলায় মনোযোগ দিলাম।
তখন আবার পেছনে থাকা নারী দর্শকদের কিছু কথা কানে আসছিল। কথাগুলো ছিল এরকমÑ দেখছস, সুন্দরী দর্শক থাকলে লাইন্সম্যানও গোল দিতে পারে। মনের মাঝে কী আকাক্সক্ষা রে! ইচ্ছা ছিল উনার এক্সপার্টনেসটা দেখাবেন তিনি দেখিয়েই ছাড়লেন যে, তার গোল দেয়ার দতাও আছে। তিনিও মেসি, রোনালদো এই টাইপের আরো কিছু কথা অনবরত চলছিল। তাকিয়ে দেখলাম আগে যারা এরকম করেছিল এখনো তারা-ই...। সাথে সাথে খেয়াল করলাম আমি ঠিক সেই জায়গাটাতেই দাঁড়ানো যেখানে আর দাঁড়াব না বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম। আর... গোলটাও করেছি সেখান থেকে শট দিয়েই।
আসল কথা হচ্ছে, মেয়েগুলো ভেবেছিল ওদের দেখানোর জন্য ওদের সামনে সামনে আমি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম, ওদের দেখানোর জন্যই আমি গোল করেছি। আমলে সে জায়গাটা ছিল মাঠের মাঝামাঝি একটা জায়গা, যা কিনা আমার দায়িত্ব পালনে খুব সুবিধাজনক একটা স্থান। ওখানে দাঁড়ালে দৌড়াতে হতো খুব কম। আর গোলটা তো হয়ে গেছে হেয়ালি করে দেয়া শটেই।