২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঈদস্মৃতি

-

ছোটবেলার ঈদ আনন্দের মজাই আলাদা। স্কুল জীবন ছিল। তখন স্কুলে কাস সেভেন কিংবা এইটে পড়তাম। সে সময় ঈদের বাজারে এটা-সেটা কেনাকাটা করতে বাবার থেকে পয়সা নিয়ে ফুরফুর করে চাচাতো ভাইদের সাথে ছুটে যেতাম। সারা ঈদের বাজার একবার টো টো করে না ঘুরে বেড়ালে যেন তখনকার ঈদে আনন্দের মন ভরত না। ঈদবাজারে প্রবেশ করেই বাঁশি, কাঠের পুতুল, পিস্তল, গাড়ি ইত্যাদি প্রাথমিকভাবে কিনে নিতাম। তখনকার পোলাপানরা কাস এইট নাইনে পড়লেও এসব নিয়ে ঈদের দিনে খেলাধুলায় বেশ মেতে থাকত। সেবার এসব কেনার পর ইচ্ছা হলো পানিভর্তি বালতির ভেতর ছোট কৌটায় কয়েন পয়সা ফেলানোর খেলা খেলব। সাথে চাচাতো ভাই তৌহিদ ছিল। তখন ঈদের দিনে বালতির এই খেলার আয়োজন নিয়ে বাজারের ভেতর অনেকেই রাস্তার কোণে কোণে বালতি নিয়ে বসে পড়ত। তখন এই খেলার আয়োজকেরা কাউকে খেলার জন্য কখনোই ডাকত না। এমনিতে দূর থেকে অনেকেই বালতি দেখলে বুঝতে পারত যে, ওখানে বালতির ভেতর পয়সা খেলা চলছে। সে সময় এই খেলা বরাবর খেলতে পারলে ডাবল পয়সা কামানো যেত। যেই ভাবা সেই কাজ। যাবতীয় ঈদের খেলনাপাতি কেনার পর পকেটে সাত আট টাকার মতোই ছিল। সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক করে নিয়ে প্রথমত বালতিতে এক টাকার পয়সা ফেলতে গেলাম। যেহেতু এক টাকার কয়েন ফেলতে পারলে মুহূর্তে দুই টাকা মিলে যাবে। লাভের পেছনে সারা দুনিয়ার মানুষই ছুটে বেড়ায়। আমি না হয় তখন এক টাকার পেছনে দুই টাকা লাভের জন্য ছুটছিলাম। এই খেলায় বালতির ভেতর আরেকটি খালি কৌটা রাখা থাকত একদম মাঝখান বরাবর। আর এই কৌটায় যেকোনো পরিমাণের পয়সা ফেলতে পারলেই ডাবল পরিমাণের পয়সা মিলে যেত। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই এই খেলায় ফেল মারতে যেত। যার কারণ হলো, বেশির ভাগ মানুষই বালতির ওপর থেকে কৌটা বরাবর পয়সা ফেলত। তাই পয়সার কয়েনগুলো সোজা নিচে না গিয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে সাইডে পড়ত। তারপর অনেকেই হতাশ হয়ে বালতি খেলা ছেড়ে ভাগত। কিন্তু আমি খেলতাম অন্যের চেয়ে আলাদা বুদ্ধি লাগিয়ে। যেভাবে পয়সা ডাবল কামানো যায় সে পথ খুঁজে নিতাম। আমার খেলা ছিল সম্পূর্ণ উল্টোভাবে। বালতির ওপর থেকে অন্যদের মতো সোজা পয়সার কয়েন না ফেলে একদম সাইড থেকে পয়সা ছাড়তাম। ব্যাস আমার ফেলানো পয়সা প্যাঁচ কাটতে কাটতে সুরসুর করে একদম কৌটায় গিয়ে পৌঁছত। আর আমার খেলা তখন অনেকেই আশপাশ থেকে ভিড় লাগিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো এবং হাততালি দিয়ে আমাকে আনন্দ দিতো। আর সেই আনন্দের একাকী মালিক হতাম আমি এবং সবশেষে বালতি খেলায় কিছু ডাবল পয়সা কামিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় আরো কিছু ঈদের খেলনা কিনে নিতাম। আজ সেই ঈদের দিনে বালতির ভেতর পয়সার কয়েন খেলা যেন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তখনকার ঈদের দিনে আরো নানা কিসিমের আনন্দ পেতাম আমরা।


আরো সংবাদ



premium cement