২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তিশার সাথে সাংবাদিকদের দ্বন্দ্বের অবসান

তিশার সাথে সাংবাদিকদের দ্বন্দ্বের অবসান - ছবি : নয়া দিগন্ত

বিনোদন সাংবাদিকদের সাথে অভিনেত্রী তানজিন তিশার চলমান দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকের পর উভয়পক্ষের দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে চলমান সঙ্কটের ইতি ঘটে।

এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম ও সাংবাদিকদরে পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিবেদক বুলবুল আহমেদ জয়। এর আগে উভয় পক্ষ ডিবি কার্যালয়ে ডিবি প্রধানের সাথে আলোচনায় বসেন। বৈঠক শেষে উপস্থিত গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে উভয়ের বক্তব্য তুলে ধরেন।

শুরুতে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে লিখিত বক্তব্যে তানজিন তিশা বলেন, ‘আপনাদের সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় অভিনয়শিল্পী তানজিন তিশা। আমি কয়েকদিন আগে হাসপাতালে অসুস্থ ছিলাম। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পর দেখলাম, দুয়েকটি নিউজপোর্টাল আমার আত্মহত্যা চেষ্টা শিরোনামের নিউজ করেছে। এমন সময় সাংবাদিক তামিম (যার সাথে আমার কোনো পূর্ব পরিচয় নেই) সে আমাকে একটা টেক্সট করে, যেটা ওই সময়ের জন্য আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। আমি ভাবতেই পারিনি, এই সময়ে কেউ আমাকে এমন একটি টেক্সট করবে বা একজন নারীকে কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারে। আমি সহ্য করতে না পেরে তাকে জানাই, টেক্সটের বিষয়ে নিউজ করলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।’

দুঃখপ্রকাশ করে তিশা বলেছেন, ‘তার (তামিম) সাথে ফোনে যেসব শব্দ উচ্চারণ করেছি, আমি জানি তা সঠিক নয়। সেটার জন্য আমি দুঃখপ্রকাশ করেছি, এখনো করছি। এরমধ্যে আমার সাথে কথা বলার কলরেকর্ড অনুমতি ছাড়া প্রচার করা হয়েছে। তা শুনে অন্য সাংবাদিকরা রেগে যায়, যা খুবই যৌক্তিক। তবে আমাকে ও আমার পরিবারকে নিয়ে অনেকে অসত্য, মনগড়া সংবাদ ও লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন। সেসব দেখে আমি রেগে যাই। তারপর আমি ডিবিতে অভিযোগ করতে আসি। সেখানেও গণমাধ্যমের সামনে তামিম ও প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে ফেলি। যেটা আমি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিইনি। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির (চ্যানেল টোয়েন্টিফোর) কাছে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। একজনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চলে না।’

তামিমের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তুলে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেছিলাম, সেটাও তুলে নিচ্ছি। তবে যারা আমার এবং আমার পরিবারকে ঘিরে অসত্য-অসম্মানজনক নিউজ প্রকাশ করেছে, তারা অনুতপ্ত হবে। সেইসাথে লেখাগুলো সরিয়ে নেবেন, সেটাও আমি প্রত্যাশা করি। কারণ এটা একজন শিল্পী বা নারীর জন্য অসম্মানজনক।’

এরপর একই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ জয়। তাতে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যম ও তানজিন তিশার মধ্যে যা ঘটেছে, তা নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত ছিল না। শিল্পীদের একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, সাংবাদিকরা কখনোই তাদের প্রতিপক্ষ না। গণমাধ্যমের কাজ প্রশ্ন করা, সত্য সংবাদ যাচাই-বাছাই করে পাঠক-দর্শকের সামনে তুলে ধরা। এই কাজটি করতে গিয়ে কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি হয়। যা কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।’

দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিতর্ক নয়, আমরা সমাধান চাই। একে-অন্যের সাথে মিলেমিশে কাজ করে যেতে চাই। এরমধ্যে তানজিন তিশা তার ভুল বুঝতে পেরেছেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমরাও আমাদের জায়গা থেকে দুঃখপ্রকাশ করছি। আশা করব এই ঘটনাটি এখানেই সমাপ্তি ঘটবে।’

এর আগে গত ১৫ নভেম্বর রাতে অচেতন অবস্থায় তানজিন তিশাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন জানা যায় তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ করেছেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয় শোবিজ পাড়ায়। গুঞ্জন ওঠে, অভিনেতা মুশফিক আর ফারহানের সাথে সম্পর্কের জেরে এমন কাণ্ড করেছেন তিশা। এই সূত্র ধরেই তিশার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন অনেক সংবাদকর্মী। তার সাড়া না পেয়ে একটি প্রশ্ন তার মুঠোফোনে পাঠান চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তামিম। সেটা পেয়ে উল্টো তিশাই কলব্যাক করেন এবং ‘ক্ষমতা দিয়ে’ সাংবাদিকদের ‘উড়িয়ে দেয়া’র হুমকিও দেন।
পরে অবশ্য সেই আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন তানজিন তিশা। কিন্তু ওই পোস্ট আবার মুছেও দেন তিনি। আর ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন সাংবাদিক তামিমের বিরুদ্ধে। এছাড়া গণমাধ্যমের সামনেই ওই সাংবাদিকের নাম উচ্চারণ করে ক্ষোভ ঝাড়েন তিশা।

এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে নামেন বিনোদন সাংবাদিকরা। ২১ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারার সামনে মানববন্ধন করে তানজিন তিশাকে ২৪ ঘণ্টাকে সময় বেঁধে দেন ক্ষমা প্রার্থনা ও অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য। তিন দিন পর অবশেষে সেটার সমাধান হলো।


আরো সংবাদ



premium cement