২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এআই মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়াবে, নিয়ন্ত্রণ করবে না

এআই মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়াবে, নিয়ন্ত্রণ করবে না -

সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত মেটার প্রথম বিল্ড উইথ এআই সামিটে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান এআই বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে না বা মানব জাতিকে নিয়ন্ত্রণে নেবে না; বরং এটি মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়াবে।
ইয়ানের মতে, এআই মানব সক্ষমতাকে বাড়াতে ডিজাইন করা হয়েছে, প্রতিস্থাপন বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নয়। এটি মানুষকে আরো ভালো সিদ্ধান্ত নিতে, জটিল সমস্যা সমাধান করতে ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তিনি এআইকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখার বদলে একটি টুল হিসেবে দেখার জন্য বলছেন, যা মানব দক্ষতা ও সৃষ্টিশীলতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে আরো নতুন সমাধান ও জীবনের মান উন্নত হয়। তার ভাষ্য, মানব ও এআইয়ের মধ্যকার সহযোগিতা একসাথে ভবিষ্যতে আরো বড় সফলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করা চতুর মানুষের দলের সাহায্য পাওয়ার মতো। এআই অ্যাসিস্ট্যান্টরা প্রায়ই ব্যবহারকারীদের চেয়েও বেশি স্মার্ট হতে পারে। যদি তা আরো স্মার্ট হয়ে যায়, তবে আমাদের উদ্বিগ্ন না হয়ে; বরং এর সম্ভাব্য উপকার ও সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এত অগ্রগতির পরও সবচেয়ে উন্নত ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) এখনো একটি চার বছরের শিশুর সমানও বুদ্ধিমান নয় যা নির্দেশ করে যে, মানবস্তরের এআই এখনো অনেক দূরের ব্যাপার।
ওপেন সোর্স শুধু আজকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি ভবিষ্যতে আরো বেশি প্রয়োজনীয় হবে। সময়ের সাথে এআই একটি সাধারণ অবকাঠামো হয়ে উঠবে, যা বিশ্বব্যাপী সবাই ব্যবহার করবে। ওপেন সোর্স এআই মডেল লামা দ্বারা চালিত মেটা এআইয়ের বৈশ্বিক মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ৫০ কোটির বেশি। মেটার প্রত্যাশা, এটি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সবচেয়ে জনপ্রিয় এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে যাচ্ছে, যেখানে এর সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। এআই অ্যাসিস্ট্যান্টটি বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মে ইংরেজি ও হিন্দিতে ব্যবহার করা যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যত ভালো কাজই করুক না কেন, মানুষের চেয়ে বেশি সৃজনশীল হতে পারেনি। আর এটিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মানুষের সক্ষমতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রেখা টেনে দেয়।
এ জন্য এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন কিছু চিন্তা করা এবং ভবিষ্যতে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সৃজনশীল কর্মীর সন্ধান করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক কাজের একক সমাধান হলেও, মানব মস্তিষ্কের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ভবিষ্যতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৃজনীক্ষমতা সংযোজন করতে পারলে তা নিশ্চয়ই চমৎকার হবে, তবে সেটি পরিপূর্ণ মানুষের প্রতিস্থাপন করার পরিবর্তে মানুষের সহকারী হিসেবে কাজ করবে।
চারপাশে তথ্য-উপাত্তের কোনো কমতি নেই, কিন্তু সেগুলো যাচাই-বাছাই করে বিশ্বস্ত উৎস নির্বাচন করার ক্ষমতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেই। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কর্মের যোগান দেয়া সম্ভব হলেও, চিন্তার বিকল্প যোগানদাতা আবিষ্কার করা যায়নি।
সর্বত্র যখন মিথ্যা, প্রতারণা ও গুজবের ছড়াছড়ি, তখন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই জটিলভাবে চিন্তা করে সঠিকতা খুঁজে বের করার জন্য দক্ষ কর্মী চায়, যারা তথ্যের গুণগত বিষয় যাচাই করে নির্ভুল উৎস বাছাই করার ক্ষমতা রাখে। জটিল চিন্তার দক্ষতা মানে কেবল নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার পরিবর্তে বিশ্বস্ততাকে বোঝায়। আর এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে এখনো আশা করা যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement