তথ্যপ্রযুক্তি বৈশ্বিক সব সূচকে কেন পিছিয়ে বাংলাদেশ
- আহমেদ ইফতেখার
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৫৭
বিপুল বিনিয়োগের পরও তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। ইন্টারনেটের গতি ও ব্যবহার, ডিজিটাল জীবনমান, প্রযুক্তির ব্যবহার, ই-গভর্নমেন্ট, সাইবার নিরাপত্তা, ফ্রিল্যান্সিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত প্রায় সব বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।
জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) গত জুনে আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) ২০২৪ প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে ৬২ স্কোর করেছে, যার বৈশ্বিক গড় স্কোর ৭৪ দশমিক ৮ এমনকি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোর ৬৪ দশমিক ৮ থেকেও কম। তালিকায় মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও তা খরচ হয়েছে অপরিকল্পিত। দেশজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শুধু ডিজিটাল অবকাঠামো। টেকসই নীতিমালার আলোকে পরিকল্পিত ডিজিটালাইজেশন হয়নি। বিপুল অকের অর্থ ব্যয়ে গত দেড় দশকে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। শুরুতে ডিজিটাল ও পরে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প সামনে রেখে এসব প্রকল্প নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। আইসিটি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এসব প্রকল্পের কাজে মূলত ক্ষমতাঘনিষ্ঠদেরই আধিপত্য ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সময় আইসিটি খাতে যারা সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে বড় একটি অংশে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ঘনিষ্ঠজন। এমনকি মোস্তাফা জব্বার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার সময়ও তার ঘনিষ্ঠরা মন্ত্রণালয়ের কাজ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইন্টারনেট গতির তালিকায় নিচে বাংলাদেশ। ওকলা স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স মে মাসের ফল অনুসারে মোবাইল ইন্টারনেট সূচকে ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। যেখানে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ১৬তম। পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সূচকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। তালিকায় ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৮তম।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রযুক্তি খাতের শক্তিশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড ও ফাইবার অ্যাট হোম। দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসার মধ্যে আইআইজি, আইজিডব্লিউ, এনটিটিএন, আইএসপিসহ প্রত্যেকটি ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার করে এ দুই কোম্পানি। ইন্টারনেট অবকাঠামোর বড় অংশের দায়িত্বে সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড ও ফাইবার অ্যাট হোম থাকায় তারা নিজের মতো করেই পরিচালনা করে আসছিল। ছিল না কোনো তদারকি।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বণিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। এর কোনো সুফল ইন্ডাস্ট্রি পায়নি, এমনকি এর প্রভাব সামাজিকভাবেও খুব একটা দেখা যায় না। কেবল কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিই এর সুবিধা ভোগ করেছেন।’
সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রণালয়ে যত ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সবগুলো মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রচুর অর্থের খরচে নেয়া এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং সাধারণ জনগণের কী উপকার হয়েছে, সেগুলোই যাচাই করা হচ্ছে। প্রকল্প মূল্যায়নে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সঠিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও জনগণের অর্থ লোপাটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা