রাজনগরে পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ, নিখোঁজ ১
- শংকর দুলাল দেব (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা
- ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৩৬
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং মনু, ধলাই, লাঘাটা নদীর উপচেপড়া পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ভেসেছে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের শতাধিক গ্রাম। ফলে এ বছরে তৃতীয় দফা বন্যায় উপজেলার শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
বন্যার পানিতে এক কিশোর নিখোঁজ হবার খবর পাওয়া গেছে। পানি কিছুটা কমলেও মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদী ডাইক ও প্রতিরক্ষা বাধের আটটি এবং ধলাই নদীর কুলাউড়া, কমলগঞ্জের এলাকায় পাঁচটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে রাজনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
রাজনগর উপজেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্গত এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মনু, ধলাই ও লাঘাটা নদীর উপচে পড়া পানিতে উপজেলার শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গত ২১ আগষ্ট মনু নদীর ডাইক ও প্রতিরক্ষা বাঁধের আটটি স্থানে এবং ধলাই নদীর কুলাউড়া, কমলগঞ্জের এলাকায় পাঁচটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে রাজনগরের এসব এলাকা প্লাবিত হয়।
গত ২২ আগস্ট রাজনগরের ময়নার দোকান নামক স্থানে মাছ ধরতে গিয়ে হৃদয় আহমদ (১৯) নামে এক কিশোর পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানাজায় নিখোঁজ হৃদয় আহমদ উপজেলার মেদিনীমহল গ্রামের সোনাওর আলীর ছেলে।
এবারের বন্যায় রাজনগরে ১০ হাজার হেক্টর আমন ফসল নষ্ট হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানায়। এছাড়া খাদ্য গোদামে মজুদ ২৫ টন ধান ও চাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় দুর্গত এলাকার লোকজন পানি ও খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য ৩০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জন প্রতিনিধিহীন রাজনগরের বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলাম, বিএনপি, খেলাফত মজলিশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ত্রাণ সহায়তা করে যাচ্ছেন।
২৩ আগস্ট বিকেল ৪টায় মনু নদীর চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ও মাতারকাপন সুইস গেইট পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাতটিসহ মোট নয়টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। দুর্গত মানুষের খাদ্য ও পানীয় জল, গোখাদ্যসহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন আত্মীয়-স্বজন ও পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে রাজনগরের উত্তরাঞ্চলে বহমান কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাজনগরের উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ৫০টি গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ আশংকায় রয়েছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নদীগুলোর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় রাজনগরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আশা রাখি এক দুই দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এছাড়াও সৃষ্ঠ ভাঙ্গন সংস্কারে সব ধরণের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক মহোদয় রাজনগরের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্যারদের নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্গত মানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় কাজ করছি। তাদের খাদ্য সহায়তার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের জন্য ৩০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন রাখ টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। দ্রুত তা ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা