কুলাউড়ায় নতুন নতুন এলাকা বন্যায় আক্রান্ত
- ময়নুল হক পবন, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)
- ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৫১, আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৭:০০
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু, গোগালীছড়া ও ফানাই নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
নতুন করে শরীফপুর, পৃথিমপাশা, ব্রাম্মনবাজার, রাউৎগাও ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ছয়টি ইউনিয়নের পুরো এলাকা এবং তিনটি ইউনিয়নের আংশিক বন্যায় আক্রান্ত হয়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন বুধবার থেকে নৌকাযোগে বন্দী মানুষকে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে এবং বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনীও নৌকা দিয়ে মানুষজনকে উদ্বার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে। উপজেলার টিলাগাওয়ের দুটি ভাঙগনের পর অন্য শরীফপুর, হাজিপুর, পৃথিমপাশার ভাঙ্গনগুলি স্থানীয় মানুষজন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে বাঁধ রক্ষা নিয়োজিত আছেন। একাধিক স্থান দিয়ে মনু’র ভাঙ্গনের ফলে কুলাউড়ার কমপক্ষে অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
মঙ্গলবার রাতের মনু নদীর টিলাগাও পশ্চিম হাজিপুরের ৬০০ ফুট ভাঙ্গনের ফলে হাজিপুর, টিলাগাও শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে সহস্রাধিক মানুষ ছিলেন পানিবন্দী। বর্তমানে পৃথিমপাশার শিকড়িয়াসহ কয়েকটি স্থানে মনু বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশের ফলে এবং সদর ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিস-সংলগ্ন গোগালীছড়ার প্রায় ১০০ ফুট বিশাল বাঁধ ভেঙ্গে শত শত, মানুষের আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে এবং ফানাইনদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে মানুষের বাড়িতে পানি উঠেছে। সবমিলিয়ে নয়টি অর্ধ ইউনিয়নের লাখের অধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিনানিপাত করছেন।
জানা যায়, মনু নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের উনিকোটি কৈলাশহর। সেখানে গত কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং বাংলাদেশে গত তিন দিনে লাগাতার বৃষ্টিপাতের ফলে মনু, ফানাই, গোগালীনদীর পানি বিপৎসীমা ও বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবল বেগে লোকালয়ে প্রবেশ করে শত শত মানুষের বসতভিটা পানিতে ভেসে গেছে। কোনো রকমে মানুষজন নিরাপদে যেতে পারলেও গবাদিপশু, ধান চাল, হাঁস মোরগ ইত্যাদি ঘরে রেখে আসতে হয়েছে।
বিশেষ করে টিলাগাও ইউনিয়নের পশ্চিম হাজিপুর গ্রাম ৬০০ ফুট বাঁধ ভেঙ্গে শত শত মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। পরদিন মনু নদীর পৃথিমপাশা, হাজিপুর, শরীফপুর, টিলাগাও ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে ছয়টি ইউনিয়নের পুরো গ্রামগুলি বন্যায় প্লাবিত হয়।
অপরদিকে মঙ্গলবার বাঁধ ভেঙ্গে জয়চন্ডি ইউনিয়নের গোগালীছড়ার গাজিপুর অংশে বিশাল ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং গোগালীছড়ার সদর ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিস-সংলগ্ন মনির মিয়ারবাড়ির পাশে বিশাল ভাঙ্গনের ফলে প্রবল স্রোতে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে আমন ক্ষেত্রের এবং বিশাল বিশাল গর্ত হয়ে জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বাঁধ ভাঙ্গার ফলে অর্ধশতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং অনেকের কাঁচা ঘর বিধস্থ হয়েছে। ফানাই নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙ্গার ফলে রাউৎগাও, কাদিপুর, ব্রাম্মনবাজার ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
নয়টি ইউনিয়নে বর্তমানে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। টিলাগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক জানান, তার ইউনিয়নে মনু ভাঙ্গনে এক হাজার মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ি এখন পানির নিচে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪ টন চাল, ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে থেকে নৌকাযোগে পানিবন্দী মানুষজনকে উদ্ধার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আরো একটি নৌকা এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি নৌকা যোগদান করছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহি উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানান, কুলাউড়ার ছয়টি ইউনিয়ন বেশী বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। মনুর টিলাগাঁও ভাঙ্গন দুটি বিশাল আকৃতির এবং এ দুটি ভাঙ্গনের কারণে এ পর্যন্ত কয়েক কাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। পানিবন্দী লোকজনকে উদ্বারের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে নৌকাযোগে তাদেরকে নিরাপদে নিয়ে আসছি। আরো নৌকা বাড়ানো হচ্ছে এবং সেনাবাহিনীও উদ্বার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে।
তিনি জানান, সরকারিভাবে ১৪ টন চাল ও ৫০০ প্যাকটে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং আরো বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা