২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মৌলভীবাজারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জলমগ্ন ১৩৪৪ হেক্টর ফসল

মৌলভীবাজারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জলমগ্ন ১৩৪৪ হেক্টর ফসল - ছবি : নয়া দিগন্ত

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের চার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এক হাজার ৩৪৪ হেক্টর উঠতি রূপাআমন ধানের জমি নিমজ্জিত।

দু’দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদী বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার চারটি নদীতে আবারো বেড়েছে পানি।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সাগরের লঘু চাপের প্রভাব ও ভারতের অতি বৃষ্টির ঢলে পানি বেড়েছে। মৌলভীবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০ মিলি মিটার বৃষ্টি রের্কড করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার সাতটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে রূপাআমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ এক হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৭৯ হাজার ৭৫৭ হেক্টর। ভারী বর্ষণে সাতটি উপজেলায় এক হাাজর ৩৪৪ হেক্টর রূপাআমন খেতের জমি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে শরৎ মৌসুমে আরেক ধাপে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী পাড়ের সাধারণ মানুষ আবারো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নিম্নাঞ্চালের অনেক বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে লোকালয়ে। জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদী বিপৎসীমার প্রায় ২ সেন্টিমিটার ওপর ও ধলাই নদী বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

জেলার রাজনগর উপজেলার হাওর পারের জালালপুর গ্রামের নাহিদ মিয়া বলেন, আমাদের আট একর রূপাআমন খেত সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে।

কুলাউড়া উপজেলার হিঙ্গাজিয়া গ্রামের বাসিন্দা শুভ যাদব বলেন, পাহাড়ি ঢলে উঠতি রূপাআমন ও পাকা আউশ খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট বানের পানিতে ডুবে যাওয়ায় এলাকায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর পারের জাবদা গ্রামের সাইফুল খান বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও বাড়ি ঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সাজ্জাদ মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে আমাদের এলাকায় কয়েক দফা বন্যা হয়েছে। কৃষকরা বুকভরা আশা নিয়ে আমন চাষ করেছিল। আবারো ধলাই নদীর ভাঙ্গন দিয়ে বানের পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেলো খেতের জমি।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাবেদ ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি হওয়াতে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজারে ২০০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মৌলভীবাজারে আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও নিচে নেমে যাবে।
নদ-নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে ওই প্রকৌশলী বলেন, জেলার কোনো জায়গায় নদ-নদী ভাঙ্গনের কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারী বর্ষণে সাতটি উপজেলায় এক হাজার ৩৪৪ হেক্টর রূপাআমন খেতের জমি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় রূপাআমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ এক হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৭৯ হাজার ৭৫৭ হেক্টর। নিমজ্জিত ধানি জমিতে বেশি সময় পানি লেগে থাকলে ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement