২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দেশী মাছের, বেশি আকাল!

- ছবি : নয়া দিগন্ত

দেশে এখন বর্ষাকাল চলছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ আহরণ, বিপণন ও ভক্ষণ করার এখনই উৎকৃষ্ট সময়। আমাদের দেশের একটি চিরন্তন প্রবাদ বাক্য হচ্ছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। তাই গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার অন্যতম আকর্ষণ ছিল দেশীয় প্রজাতির নানান ধরনের মাছ। সেই দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মাছ এখন সোনার হরিণের পর্যায়ে চলে গেছে। এখন অনেকেরই দেশী প্রজাতির মাছের নামটি শুনলেই জিভে জল আসে। বর্তমান প্রজন্মের শিশু কিশোরেরা দেশীয় প্রজাতির মাছের নাম শুধু বইপত্রে পড়ে। বাস্তবে এগুলোর দেখাও পায় না আর দেখালেও চিনবে না, কোন মাছের কী নাম। এক সময় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ রাতবিরেতে মাছ শিকার করে কাটাতো।

দেশী জাতের মাছের মধ্যে ইলিশ, রুই, মৃগেল, কাতলা, কালিয়ারা, বোয়াল, চিতল, মাগুর, পাংগাস, শোল, গজার ইত্যাদি প্রসিদ্ধ। দেশীয় প্রজাতির ছোট্ট মাছের মধ্যে, মজাদার মাছ হচ্ছে, পুটি, সরপুটি, মলা, পাবদা, বাইলা, চাপিলা, খলিশা, গুতুম, বাইম, গুলশা, টেংরা, টাকি, শিং, কই, মেনি মাছ ও কাচকি মাছ। এছাড়া আরো অসংখ্য প্রকারের দেশী মাছ পাওয়া যায় বাংলাদেশের নদী, নালা, খাল-বিল ও হাওরে।

সময়ের বিবর্তনে ও মৎস্য গবেষকদের নিত্যনতুন প্রজাতির মৎস্য জাত উদ্ভাবনের ফলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী দেশীয় মাছ হারিয়ে গেছে জলাশয় থেকে। আবিষ্কৃত নতুন প্রজাতির মাছের উৎপাদনের হার দেশীয় মাছের চেয়ে বহু গুণ বেশি। তাই, বানিজ্যিকভাবে যারা মৎস্য চাষ করেন তারা বিদেশী জাতের মাছ চাষে অতি মাত্রায় আগ্রহী। অধুনা, কিছু কিছু দেশী প্রজাতির মাছকে চাষযোগ্য করা হয়েছে। এতে করে দেশীয় পাংগাস মাছ, কই মাছ, পাবদা মাছ ও শিং-মাগুর মাছ ব্যপকভাবে চাষ হচ্ছে।

তবে, চাষ করা দেশীয় মাছের স্বাদ প্রাকৃতিক মাছের মতো নয়। তাই দেশী হলেও চাষকৃত মাছের বাজার চাহিদা দেশীয় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা মাছের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, এখন চলমান বর্ষা মৌসুমে দেশের হাওর বাওর, নদী, নালা, খাল, বিলগুলো জল থৈ থৈ করছে। এতে প্রাকৃতিকভাবে পরিপুষ্ট হওয়া দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে। এখন দেশীয় প্রজাতির মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী। বর্ষাকালের শেষে যখন খাল বিলের পানি কমতে শুরু করবে তখন দেখা দিবে দেশী মাছের আকাল। তখন দেশী মাছ হয়ে উঠবে সোনার হরিণের মতো। দাম থাকে আকাশচুম্বী, সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

গ্রামে ফেরি করে মাছ বিক্রি করেন মো: মনির হোসেন। তিনি জানান, ‘এখন বর্ষাকাল চলছে, প্রায়ই দেশীয় ছোট-বড় মাছ পাওয়া যায়, সুবিধাজনক দামে কিনতে পারি এবং বিক্রি করি। বর্ষাকাল শেষ হলে দেশী মাছের আকাল শুরু হবে। তখন চাষ করা দেশী-বিদেশী মাছ পাওয়া যাবে বেশি। সারা বছরই দেশী মাছের দাম চড়া থাকে। বাজারের চাহিদার তুলনায় দেশী মাছের সরবরাহ কম থাকে বিধায় দাম থাকে অত্যুধিক।’


আরো সংবাদ



premium cement