সুনামগঞ্জে বন্যার পানি এই বাড়ে এই কমে, পানিবন্দী লাখো মানুষ
- তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ
- ১২ জুলাই ২০২৪, ১৭:২৬, আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১৭:৫১
গত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ বন্যা শুরু হলেও এখনো এর কোনো উন্নতি নেই। এক দিকে পানি বাড়ে, আরেক দিকে কমে।
ভারি বৃষ্টি আর হঠাৎ রোদের ঝিলিকের লুকোচুরি খেলা চলছে সিলেট-সুনামগঞ্জের আকাশে। কালো মেঘের ঘনঘটা আর আকাশ ফাটা গুরুম-গুরুম শব্দ ভাবিয়ে তুলেছে মানুষকে। সুনামগঞ্জে বন্যার তাণ্ডবে অতিষ্ঠ লাখো মানুষ এখনো বাসা বাড়িতে পানিবন্দী রয়েছেন।
এই মধ্যে আবারো নতুন করে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে নদ-নদীর পানি কোথাও বাড়ছে, কোথাও স্থিতিশীল রয়েছে। এতে বানভাসী মানুষের শঙ্কা যেন পিছু ছাড়ছেনা। পানিবন্দী লাখো মানুষ প্রায় এক মাস ধরে দুর্ভোগ-ভোগান্তি নিয়ে চলতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানিউন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার আর চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত ১৬০ মিলিমিটার। ১২ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে প্রায় ৩৭ সেন্টিমিটার। ভারি বর্ষণের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষজন দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।
সিলেটে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সতর্কবাণীতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ১১ জুলাই বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে।
গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটারের ওপরে ছিল। এতে বেড়েছে নদ নদীর পানি। তবে সকালের দিকে সকল নদীর পানি বাড়লেও দুপুরে পর থেকে তা স্থিতিশীল ছিল। সিলেটের হাওরাঞ্চল হলো সুনামগঞ্জ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুরই হাওর জনপদ ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে। জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই ও শাল্লাসহ সকল উপজেলার যোগাযোগের সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তা ২২-এর বন্যার ক্ষত ছাপ এখনো শুকায়নি। এবারো দুই দফা বন্যার চাপ গেছে সড়কগুলোর ওপর দিয়ে। এতে গ্রামীণ জনপদের অনেক এলাকায় এখন না চলছে সড়ক যান, না চলে নৌযান। কঠিন হয়ে পড়েছে হেঁটে চলাচলও। রোগী, বয়স্ক ও শিশুদের যাতায়াতের ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জেলার প্রায় ২৭ লাখ মানুষ চরমদুর্ভোগে দিন পার করছেন। ফলে হাওর জনপদে বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় উভয় সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
দুই বছর আগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বড় সড়কগুলোর মধ্যে দোয়ারাবাজার-বাউর কাপন, কালীপুর-পাগলা-জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ-জয়নগর, জামালগঞ্জ-সেলিমগঞ্জ, দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার, পাথারিয়া-বাংলাবাজার, দিরাই-কলকলিয়া, বিশ্বম্ভরপুর-আনোয়ারপুর, সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়ক এখনো সংস্কার করতে পারেনি এলজিইডি। একইভাবে অনেক সড়ক থেকে দুই বছর আগের বন্যার ক্ষত সারাতে পারেনি সড়ক বিভাগও। এর মধ্যেই এবার দুই দফা বন্যায় এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। রাস্তায় কোনো গাড়ি চলার মতো অবস্থা নেই।
জামালগঞ্জের স্থানীয় আইয়ুব আলী বলেন, ২০২২ সালের বন্যার যে ক্ষতি হইছিল, এখনো উপজেলার বিভিন্ন সড়কে এই ভাঙ্গাচুড়ায় শিশু, বয়স্ক ও রোগীদের নিয়ে এই পথে চলা দায়। এরমধ্যে এবারের বন্যায় আরো ভাঙছে। মানুষ কষ্ট করে চলাচল করছে।
অনন্ত কুমার দাস বলেন, জামালগঞ্জের খেয়াঘাট থেকে দক্ষিণ কামলাবাজ হয়ে নয়াহালটের মাদ্রাসা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা ২০২২ সাল থেকেই খুবই খারাপ। কয়েকটা কালভার্ট আছে এগুলা প্রভাবশালীরা বন্ধ করে রাখছে । এই কারণে পানি যায় না আমরাও জলাবদ্ধতা হয়ে থাকি। কার কাছে দুঃখের কথা কইলে আমাদের দুঃখ শেষ হইব আমারে কইয়া দেন। তার কাছে গিয়া বলি এই দু:খের কথা। তবু আমাদের রাস্তাটার ঠিক করে দেখ।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলতি হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার হাজারো গ্রাম। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেন বহু পরিবার। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফেরেন। আবার কেউ কেউ এখানো বাড়িতে ফিরতে পারেননি। মানুষ স্বস্তি ফেলার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার আর চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত ১৬০ মিলিমিটার। ১২ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে প্রায় ৩৭ সেন্টিমিটার। আরো বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাব্যতা জানিয়েছেন।
এদিকে সুনামগঞ্জে চলমান বন্যার কারণে শাক-সবজির তেমন উৎপাদন নেই। অন্য জেলা থেকেও আমদানি কম থাকায় শাক-সবজির দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।
বর্তমানে সবজি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৬০-৬৫ টাকায়। এ ছাড়া গাজর ৭০-৮০ টাকা, কচুরমুখি ৭৫-৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, পটোল ৪৫-৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।
মাছ-গোশত দাম হাতের নাগালের বাইরে। হাওরে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অবাদে জলমহাল, খাল-বিল, ডোবা, নালার তলা শুকিয়ে দেশী মাছের বংশ ধ্বংস করায় বাজারে দেশী মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা