২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যায় দুর্ভোগে বানভাসী মানুষ

সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যায় দুর্ভোগে বানভাসী মানুষ - ছবি : নয়া দিগন্ত

ভারতের পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যার কারণে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ আর দুর্দশা যেন পিছু ছাড়ছে না। শহর ও শহরতলী এলাকার বন্যা কবলিত মানুষ হাট বাজার ও আশপাশে এলাকায় যেতে পারলেও হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন পল্লী গ্রামের লোকজন পানিবন্দী অবস্থায় কোথাও বের হতে পারছেন না।

এদিকে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছেন চরম বিপাকে। জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত কয়েক দিনে দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জে গড়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হওয়ায় নদী-খাল ও হাওর ভরাট হয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। একইসাথে সীমান্তের ওপারে মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জের সকল উপজেলায় পানি বেড়ে গেছে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে গত ১৭ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ৩৬৭ মিলিমিটার। এরপরই পুরো জেলায় শুরু হয় বন্যা। এই বন্যা পরিস্থতির উন্নতি হতে না হতেই আবারো রোববার রাত থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নেমে পরিস্থিতির অবনতি হয়।

ঢলের পানিতে সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি, ধনু, বৌলাই মরা-সুরমা নদী উপচে পানি প্রবেশ করে লোকালয় ও বাসা-বাড়িতে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর ও বালিজুরি, একই সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা-দুর্গাপুর, জামালগঞ্জের সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের নিয়ামতপুর ও আহমদাবাদ এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়ে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে তিন দিন ধরে ও সাচনাবাজার সুনামগঞ্জ সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলতি হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার হাজারো গ্রাম। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। অসংখ্য ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়ি-ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেয় বহু পরিবার। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়ি-ঘরে ফেরেন। আবার কেউ কেউ এখানো বাড়িতে ফিরতে পারেননি। মানুষ স্বস্তি ফেলার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রশিদ আহমেদ বলেন, বন্যার কারণে শহরের মানুষ যেমন তেমন। কিন্তু হাওরের মানুষ ঢেউয়ের কবলে পড়ে খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। হাওরের পানি শুধু বাড়ছেই। ইটনা-মিঠামইন এলাকার অলওয়েদার সড়ক যদি পানি নিষ্কাশনে আমাদের বাধাই হয়ে থাকে। তাহলে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সোমবার সারারাত সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এই বছরের একদিনের রেকর্ড বৃষ্টিপাত ৩০০ মিলিমিটার রেকর্ড হয়েছে সুনামগঞ্জের ষোলঘর স্টেশনে। একই দিনে তাহিরপুরের লাউড়েরগড় পয়েন্টে ২১১ মিলিমিটার এবং ছাতকে ২২৯ মিলিমিটার ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তিনটি পয়েন্টের ভারী বৃষ্টিপাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও ছাতকে পানি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসী মানুষদের সহযোগীতায় কাজ করা হচ্ছে। তবে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন লোকজন।


আরো সংবাদ



premium cement