০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে ফের বন্যার পদধ্বনি, অলওয়েদার সড়কে পানি প্রবাহে বাধা

কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন অলওয়েদার সড়ক - ছবি : সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের সাম্প্রতিক কালের বন্যার পানি নামতে না নামতেই ফের বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। গত ১৬ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যার আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই সিলেট-সুনামগঞ্জে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, মধ্য মেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস জানিয়েছে।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা শহর ও শহরতলীর আশপাশ এলাকার বন্যার পানি কমতে না কমতেই, আবারো শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। গত শুক্রবার থেকে ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জুলাই মাসের প্রথম দিকে সিলেট- সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী নদীসহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আরো অন্তত দুই-তিন দিন সিলেটে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে মেঘালয়েও ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানানো হয়। মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টি হলে পাহাড় গড়িয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জে ঢল নামে। এতে সীমান্তবর্তী এই দুই জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও সংলগ্ন উজানে সোমবার সকাল পর্যন্ত ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন সুরমা ও সারিগোয়াইন নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত ১৬ জুন থেকে চলমান বন্যায় সুনামগঞ্জের মানুষ এখনো দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রায় আট লাখ মানুষ পানিবন্ধী ছিলেন।

এদিকে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার পানি না কমার কারণ ইটনা-মিঠামাইন সড়ক। এ সড়ক নির্মাণে কোনো হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে হয়নি। বৃহদাকার কোনো নির্মাণ প্রজেক্ট করার আগে নদীর পানি প্রবাহ, পানির উৎস, বৃষ্টির পানি, হাওরের পানির ওপর এর কি প্রভাব পড়বে এসব সার্ভে করতে হয় বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখ করেন সিলেট-সুনামগঞ্জের শত শত লোকজন।

তারা বলেন, পর পর বন্যার প্রধান কারণ হচ্ছে ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ইটনা-মিঠামাইন সড়কটি। যার প্রবল বাধার কারণে জেলার প্রধান নদী সুরমা কালনী ও কুশিয়ারার পানি মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হতে পারে না। হাওরের একটি মানচিত্র প্রকাশেও তা দেখানো হয়েছে স্যোসাল মিডিয়ায়।

গত ২০ জুন সিলেট ও সুনামগঞ্জ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। সোশ্যাল মিডিয়ার বরাত দিয়ে সাংবাদিকরা ইটনা-মিঠামইন সড়কে পানি প্রবাহে বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সড়কের কারণে পানি আটকে গেলে তা পাস করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কেউ কেউ বলেন, ইটনা-মিঠামইনে সড়কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নদীর পানি যাতে পাস হতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। তবে চলতি বর্ষায় এটি ভালোভাবো পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে পরে পরিকল্পনা নেয়া হবে।’

সুনামগঞ্জ- ৩ (জগন্নাথপুর শান্তিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান গত সরকারের মেয়াদে পরিকল্পনা মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে হাওরের এসব সড়ক নির্মাণ ভুল ছিল বলে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন হাওরে এসব সড়ক নির্মাণ ঠিক হয়নি। হাওরে সড়ক নির্মাণ করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছি এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। হাওরে সড়ক বানিয়ে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। এখন থেকে হাওরে সড়কের পরিবর্তে প্রয়োজনে উড়াল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আগামী দুই-তিন দিন ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছ। তাই সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা পেরিয়ে যেতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও তেমন ভয়াবহ হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement