বন্যায় ভোগান্তিতে পড়েছে কুশিয়ারা ও হাকালুকি হাওর পারের মানুষ
- মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
- ২২ জুন ২০২৪, ১৬:২৬
মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে অপরিবর্তিত রয়েছে জেলার বন্যা পরিস্থিতি। হাকালুকি হাওর পারের বাসিন্দা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইকের ভিতরে বসবাসকারি মানুষের মাঝে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।
পাহাড়ি ঢল আর উজান থেকে নেমে আসা বানে উছলিয়ে উঠছে হাকালুকি হাওরের পানি। টইটম্বর হাওরে খেলা করছে উত্তাল ঢেউ। জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার অনেক গ্রামের রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ডুবে যাচ্ছে বাড়িঘর। মানুষজন ঘরে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করে অনেকেই না পেরে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রসাশনিক সূত্রে জানা গেছে, ৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৬৯৬টি পরিবারের লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন র্বোডের (পাউবি) তথ্য সুত্রে জানা গেছে, মনু ও ধলাই নদীর পানি কমতে শুরু করলেও শনিবার দুপুর পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ০০.১৮ সেন্টিমিটার ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ২.৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে কথা হয় দুর্গতদের সাথে। তারা জানান, ঘরে কোমর সমান পানি। বাড়ি-ঘরের নিরাপত্তার জন্য পুরুষরা বাড়িতেই থাকেন। মহিলাদের দূরবর্তী স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। নিরুপায় হয়ে কোনো কোনো পরিবারের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের বাসিন্দা রজত দাস বলেন, ‘ঈদের আগের দিন থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। আস্তে আস্তে বসতভিটা পানির নিচে তলিয়ে যায়। আমরা নিরাপদ দূরত্বে চলে আসি বাড়িঘর ছেড়ে। নারী শিশুদের স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়েছি। বাড়ি ঘরের নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। এলাকার অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।’
পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফ উদ্দিন বলেন, ‘জুড়ী উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গ্রামীন রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।’
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের জাবদা গ্রামের আব্দুস সুবহান বলেন, ‘হাকালুকি হাওরের বড় বড় ঢেউ খেলা করছে। ঢেউয়ের পানি বাড়িতে এসে আঘাত করে। এছাড়া রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ কষ্টে আছে। গবাদি-পশু নিয়ে অনেকে বিপাকে রয়েছেন। উচুঁ স্থানের আশ্রয়ে রাখা হয়েছে গৃহপালিত গরু ছাগল। বানের পানিতে মাঠঘাঠ তলিয়ে যাওয়ায় ঘাস তৃণলতা যোগাড় করা যাচ্ছে না। এতে গোখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।’
রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের চিক্কা গ্রামের মৎস্যজীবী মুহিদ মিয়া বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর ডাইকের ভিতরে আমাদের বাড়ি। ৭/৮ দিন ধরে পানি বাড়তে থাকে। ভারি বর্ষণে ঈদের পর থেকে বাড়ি ঘরে পানি উঠতে শুরু করে। ঘরে এখন কোমর সমান পানি। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ বরশি, জাল, ঢরি দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চলতো আমাদের। এখন বাধে আশ্রয় নিয়েছি। ঋণ করে সংসারের খরচ চলছে।’
বড়লেখা উপজেলা প্রসাশন সূত্র জানিয়েছে, ২৫২টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০০টি পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করেছে। আমরা সাধ্যমতো তাদের ত্রাণ সরবরাহ করে যাচ্ছি।
জুড়ী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘এই উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জুড়ীতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা প্রসাশন সূত্র জানায়, ৭৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এই উপজেলায় ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৯১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ও ফতেপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা ডাইকের ভিতরের গ্রামগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আমরা ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘মনু ও ধলাই নদীর পানি কমে যাচ্ছে। তবে কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি থেমে গেলে সব নদনদীর পানি কমে যাবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা