২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
‘হাওরে বাড়ছে পানি, কমেছে শহরে’

সূর্যের আলোর ঝিলিকে আশার সঞ্চার বানভাসিদের মনে

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরের পানি কিছুটা কমলেও শহরতলীর আশপাশে বেশিরভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পৌর শহরের কিছু কিছু এলাকায় ময়লা পানির কারণে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারী।

শুক্রবার দিনে সূর্ষের আলোর ঝিলিকে আশা সঞ্চার হয়েছে গৃহবন্দী লাখো মানুষের। পৌর শহরের বেশ কিছু জায়গায় পানি কমলেও শহরতলীর আশপাশে অনেক বাসা বাড়িতে এখনো সড়ছে না পানি। এতে ঘরবন্দী লোকজন সমস্যায় পড়েছেন।

নিম্নআয়ের লোকজন পড়েছেন বেকায়দায়। বন্যার কারণে তারা না পারছে ঘর থেকে বের হতে, না পাচ্ছে কোনো সুযোগ-সুবিধা। কোনো রকম দিনাতিপাত করে টিকে আছেন তারা। জেলার ১২ উপজেলায় প্রায় ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। তাদের বেশিরভাগ হাটবাজার গ্রামীণ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত থাকার কারণে, খাবার ও সুপেয় পানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পেতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে গর্ভবতী মা, মহিলা-শিশু ও বয়ষ্ক মানুষের, পয়ঃনিষ্কাশন-খাবার ইত্যাদি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বজনরা। কবে যাবে পানি..? কখন স্বাভাবিক চলাচলে ফিরে আসবে তারা এমন প্রশ্ন অনেকের।

বৃহষ্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকা সিলেট-সুনামগঞ্জ দেখতে আসেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ। বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জ হাওর এলাকা, উজানে ঢল হলে, বৃষ্টি হলে বন্যা হবে। এতে আমাদের কিচ্ছু করার নেই। তারপরও সরকারের পক্ষে যা কিছু প্রয়োজন আপনাদের জন্য বানভাসিদের জন্য করে যাচ্ছি। বন্যা হলে কি-কি দরকার মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা তা করছি। আমাদের নদী খননের বিশেষ প্রকল্প আছে, নদী খনন হলে নদীতে পানির ধারন ক্ষমতা বাড়লে গ্রাম প্লাবিত হবে না। বন্যায় আশ্রয় প্রকল্পে মানুষদের যা সহযোগিতার প্রয়োজন সরকার করছে। এর মধ্য যেভাবে ভালো থাকা যায় তাই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা আশ্রয়ন প্রকল্প ও ত্রাণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবো। যতক্ষণ বন্যার উন্নতি না হয়েছে আমরা আপনাদের পাশে থেকে কাজ করব। বন্যার পানি সরে গেলে ভাঙ্গা রাস্তাঘাট, বাঁধ মেরামত করে যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সুরমা নদীর চলমান ড্রেজিং কাজ শুরু হবে। আগামী বছর আসার আগেই আমরা যাতে একটি ভালো পর্যায়ে পৌঁছতে পারি সে লক্ষ্যেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এতে তুলনামূলকভাবে বন্যার পানি কিছুটা কমে যাবে।’

এ দিকে, সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার কারণ ইটনা-মিঠামাইন সড়ক, এ সড়ক নির্মাণে কোনো হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে হয়নি। বৃহদাকার কোনো নির্মাণ প্রজেক্ট করার আগে নদীর পানি প্রবাহ, পানির উৎস, বৃষ্টির পানি, হাওরের পানির ওপর এর কি প্রভাব পড়বে এসব সার্ভে করতে হয় উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুনামগঞ্জের হাজার হাজার লোকজন দাবি করেন।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, পর পর বন্যার প্রধান কারণ হচ্ছে ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ইটনা-মিঠামাইন সড়কটি। যার প্রবল বাধার কারণে জেলার প্রধান নদী সুরমা কালনী ও কুশিয়ারার পানি মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হতে পারে না। এই সড়কের কারণে পানি আটকে গেলে তা পাস করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ ফারুক আরো বলেন, ‘মিঠামইনে সড়কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নদীর পানি যাতে নিষ্কাশন হতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। তবে চলতি বর্ষায় এটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে পরে পরিকল্পনা নেয়া হবে।’

হাওর এলাকায় বেড়েছে পানি। ভোগান্তি আর অন্তহীন দুর্ভোগে সুনামগঞ্জবাসী। আশ্রিত বানভাসিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

অন্যদিকে, জামালগঞ্জে সুরমা নদীর পানি উপছে বাসা-বাড়ি, নিচু গ্রাম সড়ক প্লাবিত হয়েছে। জামালগঞ্জ খেয়াঘাট টু নয়াহালট পুর্বপাড়া সড়ক ভেঙে একই এলাকা দুই ভাগে বিভাজন হয়ে গেছে। এতে চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের শাহাপুর বাঁধ পর্যন্ত পানি উপচে গর্তের সৃষ্টি হয়ে যাত্রী চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লোকজন।

জামালগঞ্জের সাচনা বাজার ইউনিয়ন, বেহেলী ইউনিয়ন, উত্তর ইউনিয়ন, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন, সদর ও ভীমখালী ইউনিয়নের নিচু এলাকার অনেক ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। তবে আজ শুক্রবার আকাশে রোদ থাকায় আশা সঞ্চার হয়েছে এলাকাবাসীর।

এ দিকে, হাওরে পানি বাড়ায় অনেক গ্রামে ঢেউয়ে ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের আশঙ্কা করছেন বিচ্ছিন্ন পল্লী গ্রামের লোকজন।

জামালগঞ্জ উপজেলার কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, উপজেলার ছয় ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬৯ জন বানভাসি আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারিভাবে তাদের শুকনো খাবার ও সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে অশ্রিতরা জানিয়েছেন, তা একেবারেই সামান্য।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত কন্ট্রোল রুমের দায়িতপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ইমন বলেন, ‘জেলার ১২টি উপজেলায় ছয় লাখ লোক পানিবন্দী রয়েছেন। জেলার ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮ হাজার বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন।

চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে বাজার মনিটরিং করনে ও সরকারি নির্ধারিত মূল্যে দ্রব্য বিক্রয় করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষে বিশেষ টিম কাজ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement