২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বন্যায় মৌলভীবাজারের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী

বন্যায় মৌলভীবাজারের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী - ছবি : নয়া দিগন্ত

টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখাসহ সাতটি উপজেলারই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ঈদুল আজহার আনন্দ বিমলিন। পানিবন্দী অনেক পরিবারের মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন।

জানা গেছে, সোমাবার (১৭ জুন) ঈদের দিন ভোর থেকেই মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে করে ডুবে যায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তা ঘাট। ঈদের দিনে এই টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক ঈদগাহে পানি উঠে যাওয়ায় ঈদের নামাজ হয় উঁচুস্থান ও মসজিদে। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে জেলার প্রায় সাতটি উপজেলার প্রায় বিশটি ইউনিয়নের ৪৩২ গ্রামের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন।

বুধবার (১৯ জুন) সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। কুশিয়ারা নদীর উপচে উঠা পানিতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে গেছে। মনুমুখ ইউনিয়নেরও কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি বেড়ে বন্যা হয়েছে। চারদিকে পানি থাকায় ও অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই সমস্যায় পড়েন তারা। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন অনেকে। কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ও ফহেতপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলে উছলিয়ে উঠেছে জেলার হাকালুকি হাওর। এতে হাওর জনপদের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে।

কুলাউড়া ও জুড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তা ঘাট বানের পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় ভারী বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
খলিলপুর ইউনিয়নের হামরেকোনা গ্রামের বাসিন্দা মামুন বলেন, দুই দিনের টানা বর্ষণে এবার পানি বেশি বেড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যার কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। পানি বাড়তেই আছে। ঈদের দিন নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মুসলমানদের।

কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম খান বলেন, হাকালুকি হাওরের উপচে উঠা পানিতে উপজেলার ভাটেরা, বরমচাল, ভুকশিমইল, কাদিপুর ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।

তিনি বলেন, জুড়ী উপজেলার হাওর পারের বেলাগাও ও জাহাঙ্গীরাঈ ইউনিয়নের বেশীরভাগ গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে ভ্রমণ পিপাসুদের ঈদ আনন্দ বিমলিন হয়।

রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা পারের কালারবাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, কুশিয়ারা নদীর বাঁধের ভেতরের ১০টি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্ধী মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ বেড়ে গিয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় এই অঞ্চলে ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের আজ সোমবার বেলা ৩টায় কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে ওই এলাকার কিছু এলাকা প্লাবিত হবে। কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন চৌধুরী বলেন, সদর উপজেলার খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। মাইকিং করা হয়েছে যাতে সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে যান। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগরের কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলায় বন্য কবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। আরো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলার প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ আছে। জেলায় ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৫৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement